টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে চার ঘণ্টা অপেক্ষা, তবু ফিরতে হলো খালি হাতে

রবিবার, ১৩ মার্চ ২০২২ | ২:১৫ অপরাহ্ণ

টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে চার ঘণ্টা অপেক্ষা, তবু ফিরতে হলো খালি হাতে
apps

নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা দিশাহারা। সাশ্রয়ী দামে পণ্য কিনতে তাঁরা ভিড় করছেন টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে পণ্য নিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করছেন অনেকে।

সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে সকাল নয়টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ মোড়ে টিসিবির ট্রাকের সামনে নারীদের লাইনে এসে দাঁড়ান ষাটোর্ধ্ব হাসনা বেগম। ততক্ষণে তাঁর সামনে পণ্য হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় অন্তত ৯০ জন। বেলা গড়িয়ে যখন একটা, তখনো ট্রাকের নাগাল পাননি হাসনা। এই সময়ে লাইনে থাকা নারীদের মধ্যে বলাবলি হচ্ছিল তেলের বোতল শেষ হয়ে গেছে। তবু হাসনা বেগম আশায় ছিলেন, ডাল-চিনি-পেঁয়াজ নিয়ে তো বাসায় ফিরতে পারবেন। তবে গতকাল শনিবার তপ্ত রোদে সাড়ে চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাঁকে।

দয়াগঞ্জ মোড় থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে মিরপুরের রূপনগরের চিত্রও ছিল অনেকটা এমনই। এখানেও তেলের চাহিদা বেশি থাকায় তা আগেই শেষ হয়ে যায়। এই এলাকার ‘ট’ ব্লক বস্তির পাশে টিসিবির ট্রাকের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অন্তত ৮৩ জন নারী ও পুরুষ কাঙ্ক্ষিত পণ্য নিয়ে ঘরে যেতে পারেননি।

টিসিবি পরিবেশকের বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় প্রতিনিয়ত মানুষের চাপ বাড়ছে। তবে চাহিদা বেশি ভোজ্যতেলের। একটি ট্রাকে দুই থেকে আড়াই শ জনের জন্য পণ্য থাকে। কিন্তু মানুষ আসেন চার-পাঁচ শ। ফলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।

দয়াগঞ্জ মোড়ে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে এসে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ জন নারী-পুরুষকে। তাঁদের কেউ কেউ সাড়ে চার ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কোনো পণ্য পাননি।দয়াগঞ্জ মোড়ে বেলা পৌনে দুইটার দিকে আবার কথা হয় হাসনা বেগমের সঙ্গে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, হঠাৎ সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় তুলনামূলক কম দামে পণ্য কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু কপালে কিছুই জুটল না।

একজন ব্যক্তি টিসিবির ট্রাক থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি ডাল ও পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারেন। আর প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোর জন্য বরাদ্দ থাকে ৫০০ লিটার তেল, ১ হাজার কেজি পেঁয়াজ এবং ৫০০ কেজি করে চিনি ও মসুর ডাল।

দয়াগঞ্জ মোড়ে এই প্রতিবেদক সাড়ে চার ঘণ্টা ছিলেন। পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার কারণেও ক্রেতাদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কে কার আগে পণ্য নেবেন, তা নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো মানুষের মধ্যে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হট্টগোল লেগেই ছিল।

পণ্য সরবরাহের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, তেলের দাম বাড়ার পর থেকে মানুষের লাইন বাড়ছে। এখন লাইনে মারামারিও হচ্ছে। মাঝেমধ্যে সামাল দেওয়া যায় না।

এদিকে মিরপুরের সেকশন-৬–এর রূপনগর এলাকায় টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক গতকাল যেখানে অবস্থান করছিল, তার পাশেই ছিল বস্তি। এখানে মূলত বস্তির বাসিন্দারাই এসব পণ্যের ক্রেতা। তবে নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেকে এখন ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। গতকাল লাইনে থাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী বললেন, তিনি যে টাকা বেতন পান, তাতে সংসার চলছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

পণ্য কিনতে বেলা সোয়া দুইটার দিকে এসেছিলেন গৃহিণী আসমা বেগম। তখনো নারীদের সারিতে পণ্যের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন প্রায় ৭০ জন। এ সময় লাইনে থাকা অন্য নারীরা আসমাকে বলেন, ‘আইজকা আর লাভ নাই। আমরাই পাইমু কিনা ঠিক নাই।’

Development by: webnewsdesign.com