কি কৌশলে ইসরায়েলকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র?

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ১১:২১ পূর্বাহ্ণ

কি কৌশলে ইসরায়েলকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র?
কি কৌশলে ইসরায়েলকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র?
apps

সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে বাঘের লেজ দিয়ে কান চুলকানোর মতো কাণ্ডই ঘটিয়েছে ইসরায়েল। তেহরানও পাল্টা প্রতিশোধ নিতে খুব একটা দেরী করেনি। ইসরায়েলে তিন শতাধিক উড়ন্ত অস্ত্র নিক্ষেপ করে বিশেষ বার্তা দিয়েছে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির দেশ।

এবার তেলআবিবও প্রতিশোধ নেয়ার উপায় খুঁজছে। আর ইরান-ইসরায়েলের এই নয়া দ্বন্দ্বে বিপাকে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জো বাইডেনের প্রশাসন। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বিস্তৃত করতে খুব একটা আগ্রহী নয় ওয়াশিংটন। আবার দীর্ঘদিনের মিত্রকে ইরানের হাত থেকে রক্ষা করাকেও গুরু দায়িত্ব বলে মানে হোয়াইট হাউজ। এটা পেন্টাগনের বড়ো মানসম্মানের বিষয়।

ইরানের হামলার পর থমথমে ইসরায়েল পরিস্থিতি। গাজায় তাদের চলমান অভিযানও থমকে আছে। ফলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর বিরোধীদের চাপও বাড়ছে সমানতালে। কারণ, তিনি হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলিদের জীবিত ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। গাজায় হামাসের সাথে যুদ্ধেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। সবদিক থেকে ইসরায়েলের এতোদিনের পুষে রাখা ইজ্জতেও বড় আঘাত লাগছে।
বিপরীতে নেতানিয়াহুর প্রধান সমর্থক ও সহযোগী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখন সবার কাছে অনেকটা দৃশ্যমান। বিশ্ব জনমত তার বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। নেতানিয়াহুও প্রায় বন্ধুহীন। মার্কিন ঘেঁষা অনেক দেশও এখন তার পক্ষে নেই।

যুক্তরাষ্ট্রও ভালো করেই জানে নেতানিয়াহু নিজের গদি বাঁচাতেই ইরানের সাথে মারণ খেলায় নেমেছেন। এই সংঘাতেও তারা যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনতে চেয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র আপাতত সেই সংঘাত এড়িয়ে গেছে। তারা ইসরায়েলকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও ইরানে সরাসরি হামলা চালাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি ইসরায়েল ইরানে হামলা চালালেও তার পক্ষে না থাকার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইসরায়েলের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রিম আমিনোয়াচ ওয়াইনেট নিউজকে বলেন, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করতে ইসরায়েলের প্রায় ১০০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। ইরানের বার্তা হলো যুক্তরাষ্ট্রও যদি যুদ্ধ না চায়, তাহলে তাদের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে। ইসরায়েলকে দীর্ঘদিন ধরে তারা যেভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে, সেই কাজ থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। ইসরায়েল মনে করে, এ অঞ্চলে তারা যা খুশি করতে পারবে।

নেতানিয়াহু এখন দোটানায়। তিনি এখন চরম উগ্রপন্থীদের খুশি করার পথ বেছে নিতে পারেন। এ জন্য তিনি ইরানের ওপর পাল্টা হামলা চালাতে পারেন। কিন্তু এ জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাবেন না। নেতানিয়াহু যদি কিছু করতে না পারেন, তাহলে তিনি আরও দুর্বল হয়ে পড়বেন। ইতোমধ্যে তিনি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। সে ক্ষেত্রে বিরোধী নেতা ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্টসের কাছে তাঁকে পরাজয় মেনে নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রও একইভাবে দেখছে, তিন দশকের মধ্যে পঞ্চমবারের মতো তাদের পররাষ্ট্রনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খাচ্ছে। আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে উৎখাত, ইরাকে আক্রমণ, লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে উৎখাত, বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা; এসব সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এখন পঞ্চমবারের মতো গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন তাদের জন্য আরও বড় বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে।

অবশ্য ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে দেশটি কতোটা ভুল করেছে, সেটা বুঝতে তাদের সময় লাগবে। একইভাবে ইরাকে হামলা তাদের কতো বড় ভুল ছিল, সেটা বুঝতে তাদের সময় লেগেছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েল যে গণহত্যা চালিয়েছে, তার কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেই। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়ালের বক্তব্যের ভয়ংকর মিল রয়েছে। পাওয়েল জাতিসংঘে বলেছিলেন, ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেনের কাছে যে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে, সেই প্রমাণ তার কাছে আছে। বাস্তব অর্থে ২০০৩ সালের তার সেই বক্তৃতার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষয় হতে থাকে। এভাবে প্রতিবছরই দেশটি দ্রুতই তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।

পরে পাওয়েল তার সেই বক্তব্যের জন্য অনুশোচনা করেছিলেন। অস্টিনও একসময় একইভাবে অনুশোচনা করবেন। এই প্রথম ইরান সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে বার্তা দিয়েছে যে তারা যুদ্ধে আগ্রহী নয়। এটাও প্রথম, বাইডেন ইসরায়েলকে পাল্টা হামলা না করতে বলেছেন।

এ ধরনের হামলার পর পরিস্থিতি এমন নিজেকে রক্ষায় ইসরায়েলের অন্যদের সহায়তা দরকার। এমনকি কীভাবে তারা পাল্টা হামলা চালাবে সে সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে নেওয়ার ক্ষমতাও নেই তাদের। ইরানের হামলার পর ইসরায়েলের রক্ষাকারী যুক্তরাষ্ট্রও সব বিকল্পের দিকে নজর রাখছে। এ মুহূর্তে তাদের জন্য কোনো কিছুই ভালো মনে হচ্ছে না। ইসরায়েলকে সংঘাতে না গিয়ে শান্তভাবে রক্ষা করার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না ওয়াশিংটন। আর নেতানিয়াহুর গোয়ার্তুমিতে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠার শঙ্কাও আছে।

Development by: webnewsdesign.com