বিশেষ প্রতিনিধি
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নিজের আর আগ্রহী নন বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের পর আলোচনা শুরু হয়েছে- কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক।
মতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হবে আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর। এ সম্মেলন ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও আগ্রহের কমতি নেই। সভাপতি পদে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি আওয়ামী লীগে। ফলে তিনিই যে সভাপতি থাকছেন, এটা অনেকটা নিশ্চিত। তবে দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন, এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
২০১৬ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে অষ্টমবারের মতো দলটির সভাপতি হন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। একই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। তবে আগামী কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী নন বলে জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার সম্মেলন উপলে গঠিত দপ্তর উপকমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তন হলেও আমরা স্বাগত জানাব, আর তিনি (শেখ হাসিনা) যদি রাখেন সেটাও তার ইচ্ছা। পার্সোনালি আই অ্যাম নট ইন্টারেস্টেড।’
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, এবার কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অনেকই বাদ পড়বেন। আবার কারো কারো পদোন্নতিও হবে। তবে সভাপতির পরে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব শেখ হাসিনা কার হাতে তুলে দেবেন তা এখনো পরিষ্কার হয়নি। এর আগের সম্মেলনগুলোয় সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন তা আঁচ করা গেলেও এবার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এই নিয়ে কারও সঙ্গে এখন পর্যন্ত আলোচনা করেননি।
বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ সম্পাদক পদে সাতজনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আব্দুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা আশা করি ভালো কিছু হবে। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলকে চালাতে পারেন, সার্ভিস দিতে পারেন এমন যোগ্যতা আছে এবং সততা, নিষ্ঠা ও দল চালানোর মতো লিডারশিপ কোয়ালিটি আছে এমন কেউ এ দায়িত্ব পাবেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ রূপরেখা হচ্ছে, বিতর্কিত ও অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগে থাকতে পারবে না। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যবেণ ও গবেষণায় দেখা যায়, যারা ত্যাগী, আদর্শিক, সৎ ও দুঃসময়ের সঙ্গী তারা দলে কোণঠাসা হয়ে গেছেন। অন্যদিকে যারা টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস করেন এবং বৈধ ও অবৈধ পন্থায় টাকা-পয়সা বানিয়েছেন তাদের অনেকেই দলের নেতৃত্বের সামনে চলে এসেছেন। এ অবস্থা এবার পাল্টে ফেলা হবে। রাজনীতি করতে গেলেই যে সন্ত্রাস লাগবে, টাকা-পয়সা লাগবে এ ধারণা এর মধ্যে পাল্টে ফেলছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই পাল্টে ফেলার অংশ হিসেবেই দলে ও সরকারে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যার প্রতিফলন আগামী কমিটির নেতৃত্ব বাছাইয়ের েেত্র দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, আগামী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন সেটা এখনো আমরা নিশ্চিত না। কে এগিয়ে আছেন, সেটা কেমনে বলব? আমিও তো সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। তাই কার নাম বলব। তবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক থাকবেন, নাকি নতুন কেউ আসবেন, সেটা জানতে আরো কিছুদিন অপো করতে হবে।
আওয়ামী লীগের অতীত কমিটিগুলোর দিকে তাকালেই দেখা যায় দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে সবসময়ই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচবার দায়িত্ব পালন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাজউদ্দীন আহমদ এ পদে ছিলেন তিনবার। জিল্লুর রহমান ছিলেন চারবার। এছাড়া আব্দুর রাজ্জাক দুবার, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুবার, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুবার, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক একবার, আবদুল জলিল ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একবার। এর মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক ১৯৮২ সালে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে বাকশালে যোগ দিলে সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
Development by: webnewsdesign.com