মিডিয়া ডেস্ক
এখন আর লাভের আশায় ধান চাষ করছেন না রাজবাড়ীর কৃষকরা। নিজেদের খাওয়ার জন্যই তারা ধান চাষ করছেন। খরচের তুলনায় ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় দিন দিন ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকরা। ধান উৎপাদনে রাজবাড়ী জেলা অন্যতম এবং কৃষি প্রধান জেলার মধ্যে একটি। এ জেলায় ধান, পাট, পেঁয়াজ, গম, রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়। যা দেশের কৃষিপণ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চলতি মৌসুমে রাজবাড়ীতে প্রায় ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু ধান চাষে শুরু থেকে মাড়াই পর্যন্ত যে খরচ সে তুলনায় বাজারে দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। যে কারণে তারা আগামীতে ধানের পরিবর্তে অন্য ফসল আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ধানের দাম ন্যূনতম ৮০০ টাকা মণ করার দাবি কৃষকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজবাড়ীতে ৪৬ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ধান বেশি। সদর উপজেলায় ১২ হাজার ৮৯০ হেক্টর, পাংশায় ১১ হাজার ৭২৫ হেক্টর, বালিয়াকান্দিতে ১২ হাজার ৩৮০ হেক্টর, কালুখালীতে ৮ হাজার ১১৫ হেক্টর ও গোয়ালন্দে ১ হাজার ৩৫৬ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে।
কৃষকর বলছেন, ধান চাষে শুরু থেকে মাড়াই পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমিতে তাদের খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা এবং প্রতিবিঘায় ধান পান ১০ থেকে ১২ মণ। ধানের দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ হওয়া উচিত।
কৃষি অফিস বলছে, এ বছর প্রতিবিঘা জমিতে গড়ে প্রায় ১৮ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। প্রতিমণ ধানের দাম এক হাজার টাকা হলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন।
ধান চাষি মো. আলাউদ্দিন শেখ জানান, বহু বছর ধরে তিনি ধানসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য চাষাবাদ করছেন। কিন্তু কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এ বছর তিনি প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন এবং ফলনও ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ মণ ধান পাবেন বলে আশা করছেন। বর্তমান বাজারে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬০০ টাকা মণ ধান বিক্রি করছেন। এ দামে ধান বিক্রি করলে তাদের কিছুই থাকে না। তার মত কৃষকদের বাঁচাতে হলে ধানের দাম ন্যূনতম ৮০০ টাকা মণ করে সরকারের ভর্তুকি দেয়া উচিত।
আরেক চাষি গোবিন্দ চন্দ্র দাস জানান, তিনি ৯ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এ বছর যে ফলন হয়েছে তাতে প্রায় ১০০ মণের মতো ধান পাবেন। ধান চাষের শুরু থেকে কেটে মাড়াই পর্যন্ত যে খরচ তাতে লাভ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। ধান চাষে পুরো লস।
তিনি বলেন, সরকার কার্ডের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে ধান কিনবে বলে শুনেছি। সে সুবিধা পেলে একটু বাঁচতাম। এখন লাভের আশায় নয়, নিজেরা খাওয়ার জন্য ধান চাষ করছি। এ রকম ধানের বাজার থাকলে অন্য ফসল আবাদ করবো ভাবছি।
ধান চাষি আলম শেখ বলেন, আমাদের কয়েক বিঘা জমিতে ধান চাষ করা হতো। কিন্তু ধানের দাম কম হওয়াতে এ বছর অনেক কম জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। ধান চাষে যে পরিমাণ খরচ হয় তাতে প্রতিমণ ধানের দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা হওয়া উচিত। মাঠের ৬টি গভীর নলকূপ বন্ধ হয়ে রয়েছে শুধুমাত্র লোকসানের কারণে। এখন যারা ধান চাষ করছেন তা শুধু নিজেরা খাওয়ার জন্য। এছাড়াও গরুর খড়ের জন্য।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. বাহাউদ্দিন সেক জানান, এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে । তবে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। এক হাজার টাকা মণ ধান বিক্রি করতে পারলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে পাবেন ও কিছুটা লাভবান হবেন।
তিনি আরও জানান, নতুন করে কৃষকরা বোরো ধানের বীজতলা দেয়া শুরু করলেও বোরো ধানের আবাদ অনেকটা কম হবে। ধানের ন্যায্যমূল্যে না পাওয়ার কারণে আবাদের ল্যমাত্রা কমে যাচ্ছে। দিন দিন কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তারা ধানি জমিতে খেসারি, মসুর, সরিষা জাতীয় ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, এ বছর রাজবাড়ীতে ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদের ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে আমান ধানের আবাদ হয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ ফলনশীল বীণা ধান ৭, বিরি ধান ৩৩-৩৯-৪৯ এবং নতুন জাত বিরি ধান ৮৭ চাষ হয়েছে। কৃষকদের নতুন ধান আবাদে বিভিন্ন প্রশিণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে, ফলনও ভালো হয়েছে। সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের জন্য চাষিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেই তালিকার ভিত্তিতে ধান কেনা হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন।
Development by: webnewsdesign.com