স্বজন-বন্ধু-শুভানুধ্যায়ী-সহকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরশায়িত হয়েছেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদ। রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে স্ত্রী আয়েশা হাসান আবেদের কবরে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এসময় প্রিয় ‘আবেদ ভাই’র জন্য চোখে জল গড়ায় প্রিয়জনদের।
গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ২৮ মিনিটে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফজলে হাসান আবেদ। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম পথিকৃৎ ফজলে হাসান আবেদের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে আসে তার বন্ধু-স্বজনসহ সর্বমহলে।
স্যার আবেদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে মরদেহ সাদা ফুলে সজ্জিত লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে আর্মি স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নামে সেখানে।
প্রথমে স্যার আবেদের মরদেহে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন মহলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা স্যার আবেদের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সর্বস্তরের জনতা শ্রদ্ধা জানান তাদের প্রিয় ‘আবেদ ভাই’কে।
আর্মি স্টেডিয়ামে ফজলে হাসান আবেদের জন্য রাখা শোক বইয়েও অনেকে মরহুমের জীবন ও কর্ম স্মরণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বার্তা লিখেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর ১২টা ৪৬ মিনিটে ওই স্টেডিয়ামেই স্যার আবেদের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়।
জানাজার আগে ফজলে হাসান আবেদের ছেলে শামেরান আবেদ বলেন, ‘সবাই আমার বাবাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ও অকৃত্রিম ভালোবেসেছেন। এজন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। বাবা সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন, সবার কথা চিন্তা করেছেন, আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন।’
জানাজার পর স্যার আবেদের মরদেহ বনানী কবরস্থানে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে স্ত্রী আয়েশা হাসানের কবরে সমাহিত করে মোনাজাত করা হয়।
উল্লেখ্য, ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হন। পরে সেটা বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে আবেদ তার প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ব্র্যাক। নিরলস এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাককে পরিণত করেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়। চলতি বছরই সংস্থাটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে অবসর নেন ফজলে হাসান আবেদ।
জনকল্যাণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে স্যার আবেদ বাংলাদেশ ও বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড এবং সম্মাননা লাভ করেন।
Development by: webnewsdesign.com