হাড়ভাঙা শ্রমে চলে তাঁদের সংসার

মঙ্গলবার, ০৮ মার্চ ২০২২ | ১:০৯ অপরাহ্ণ

হাড়ভাঙা শ্রমে চলে তাঁদের সংসার
apps

ইটভাটার পাশেই কয়লা ভাঙার যন্ত্র। ঝুড়িতে কয়লা ভরে কোমরে নিয়ে যন্ত্রের কাছে ঝুপ করে ফেললেন বীণা রানী রাজবংশী। মাথার ঘাম গড়িয়ে মুখমণ্ডলে আসছিল। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে ফেললেন তা।

মানিকগঞ্জ সদরের মুলজান এলাকার মেসার্স মালেক ব্রিকস নামে ইটভাটায় পাঁচ বছর ধরে এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন বীণা রানী। গত রোববার দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মুলজান এলাকার ওই ভাটায় বীণা রানীর সঙ্গে কাজ করছিলেন আরও ছয় নারী। তাঁদের মধ্যে বীণা রানীর বাড়ি উপজেলার পৌলী গ্রামে।

বিশ্রামের এক ফাঁকে বীণা রানী জানালেন, প্রায় ১৬ বছর আগে স্বামী বিকাশ রাজবংশী দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সতিনের সংসারে টিকতে না পেরে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। এরপর একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। তবে কারখানাটির উৎপাদন কম হওয়ায় অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও ছাঁটাই করা হয়। এরপর প্রায় পাঁচ বছর ধরে ইটভাটায় কাজ করছেন।

সন্তানদের মধ্যে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তিন ছেলের মধ্যে বড় ও ছোট ছেলে পড়াশোনা করছে। মেজ ছেলে মাঝে মধ্যে জেলেদের সঙ্গে জাল টানার কাজ করে। দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের খরচ বীণা রানীকেই বহন করতে হয়।

গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার ভাটবাউর এলাকার মেসার্স জামাল ব্রিকস নামে আরেক ভাটায় গিয়ে কাজ করতে দেখা যায় ফুলজান (৪৮) ও জরিনা বেগমকে (৫৫)। তাঁরা ভাটার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভাঙা ইট স্তূপ করে রাখেন।

ফুলজান বেগম বললেন, প্রায় ১৮ বছর আগে স্বামী আরেকটি বিয়ে করেন। ভরণপোষণ না করায় দুই ছেলেশিশু নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। বাবা মারা যাওয়ার পর জীবিকার তাগিদে নিজে ইটভাটার শ্রমিকের কাজ নেন। ভাটার কাজ করেই দুই ছেলের ভরণপোষণ করছেন।

উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় বীণা রানী ও ফুলজানের মতো আরও অনেক অসহায় নারী কাজ করেন। তবে পুরুষদের তুলনায় তাঁদের মজুরি কম। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করে পুরুষেরা পান ৪৪০ টাকা। বিপরীতে ২৭০ টাকা পান নারীরা। মেসার্স জামাল ব্রিকসের ব্যবস্থাপক আসলাম মিয়া বলেন, পুরুষের থেকে নারীরা কম কাজ করে বলেই তাঁদের মজুরিও কিছুটা কম।

নারী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে বারসিক নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মানিকগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক বিমল রায় বলেন, সমাজে ও কর্মক্ষেত্রে নারী–পুরুষের বৈষম্য এখনো আছে। এই বৈষম্য দূর করতে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

Development by: webnewsdesign.com