জাহিদুল ইসলাম জাহিদের (২২) প্রেমিকার সঙ্গে মো. শাহাদাতের বিয়ে ঠিক হয় গত বছরের ১৪ আগস্ট। কিন্তু, নিজের প্রেমিকার সঙ্গে অন্য কারও বিয়ে মেনে নিতে পারছিলেন না জাহিদ। বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসায় জাহিদ পরিকল্পনা করেন শাহাদাতকে হত্যার। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন বর্ণনা তুলে ধরেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, জাহিদ ও শাহাদাত ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। শাহাদাত যাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের কোহিনুর ইসলামের ছেলে। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার বারইপাড়ায় একটি কারখানার কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ৩ আগস্ট শাহাদাত চন্দ্রা থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর নিকটবর্তী মাটির মসজিদ এলাকায় ডেকে নিয়ে যান জাহিদের সহযোগী সবুজ হোসেন (২৮)।
সেখানে নেওয়ার পর জাহিদের আরও চার সহযোগী শাহদাতকে ফুসলিয়ে জুয়া খেলতে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় নিয়ে যান। তারপর সেখানে শাহদাতকে দুদিন নানা কথা বলে জুয়া খেলার ছলে আটকে রাখেন তাঁরা। পরে ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় সবাই মিলে শাহাদাতকে নিয়ে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় আসেন। সেখান থেকে আশুলিয়া থানার একটি ফাঁকা নির্জন এলাকায় নিয়ে শাহাদাতের হাত পা বেঁধে ফেলেন তারা।
জাহিদ প্রথমে শাহাদাতকে চড় এবং গোপনাঙ্গে লাথি মারেন। এ সময় আবু তাহের (২৪) শাহাদাতের মাথা চেপে ধরে বসে ছিলেন এবং অন্যরা হাত-পা ধরে ছিলেন। পরবর্তীকালে শ্বাসরোধ করে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তারপর শাহাদাতের লাশ ভ্যানচালক সবুজ তাঁর ভ্যানে করে ধামরাই থানার আমরাইল পুকুরিয়া সাকিন এলাকায় মনুমিয়ার কাঠবাগানের কাছে নিয়ে যান। পরে গাছের একটি ডালে কাঁচা পাট দিয়ে ফাঁস তৈরি করে ঝুলিয়ে রাখেন, যাতে এলাকার মানুষ ভাবেন এটি আত্মহত্যা। হত্যার পর অভিযুক্তরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে ভাড়া বাসা চক্রবর্তী মাটির মসজিদ এলাকায় চলে যান।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জাহিদুল ইসলাম, আবু তাহের ও সবুজ হোসেনকে ধামরাই থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এর আগে এ ঘটনায় জাহিদ নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন জেল হাজতে আছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা এ ঘটনায় তাঁদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন।’
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ভুক্তভোগী ও গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা সবাই ধামরাই থানার মাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের এবং তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এ সর্ম্পকের কারণে তাদের মধ্যে সচরাচর সাক্ষাৎ হতো এবং তারা একত্র হয়ে ভাড়া বাসা ও নিজ এলাকায় জুয়ার আসর বসাতেন। যখন তাঁরা হত্যাকাণ্ডটি ঘটান, তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে, আশপাশে লোকজনের উপস্থিতি ছিল না। এ ঘটনার পর তাঁরা নিজ নিজ এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন। কারণ, প্রথমে এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। তখন তাঁরা ভেবেছিলেন, তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে শাহাদাতের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় ৮ আগস্ট কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তাঁর পরিবার। ১২ আগস্ট ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের একটি বাগান থেকে নিখোঁজ শাহাদাতের অর্ধগলিত ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ধামরাই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহাদাত আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী শাহাদাতের মা বাদী হয়ে ধামরাই থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধামরাই থানা পুলিশ গত ৩০ সেপ্টেম্বর সন্দেহজনকভাবে শাহাদাতের বন্ধু জাহিদকে গ্রেপ্তার করে। তবে, জাহিদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না দেওয়ায় রিমান্ড শেষে তাঁকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এরপর র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে।’
Development by: webnewsdesign.com