কিশোরগঞ্জের ১৫ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্টিত

বৃহস্পতিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২২ | ১২:১১ অপরাহ্ণ

কিশোরগঞ্জের ১৫ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্টিত
প্রতীকী ছবি
apps

কিশোরগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদে বুধবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টগ্রাম উপজেলার ৮টি ও মিঠামইন উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ছিল। হাওরের এ ১৫টি ইউনিয়নে এবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ছিল না। মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় ১৪ টি ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে বেসরকারিভাবে অষ্টগ্রাম উপজেলার অষ্টগ্রাম সদর ইউনয়নে সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু (মোটরসাইকেল) ৩৮৭১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. ছায়েদুর রহমান (চশমা) পেয়েছেন ৩৬১২ ভোট। পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নে ৪৫৩৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মো. কাছেদ মিয়া (ঘোড়া)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছৈয়দ সাঈদ আহমেদ (চশমা) পেয়েছেন ৩৯২৫ ভোট। কাস্তুল ইউনিয়নে সাইফুল হক রন্টি (চশমা) ৪৩১৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. ইকবাল হোসেন (ঢোল) পেয়েছেন ৩৪৮৫ ভোট। দেওঘর ইউনিয়নে মো. আক্তার হোসেন (টেলিফোন) ২৫০৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. সুজন খান (ঢোল) পেয়েছেন ২২৯৩ ভোট। বাংগালপাড়া ইউনিয়নে ৫২২৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান (ঘোড়া)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদুল হক অলি (চশমা) পেয়েছেন ৪৩২৪ ভোট। খয়েরপুর আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নে মো. আনোয়ার হোসেন খান (চশমা) ৬৩৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মহিদুল হোসেন চৌধুরী (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ৪৮০৩ ভোট। আদমপুর ইউনিয়নে আ. মন্নাফ (আনারস) ৬৬৫৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. ফজলুল করিম বাদল (ঘোড়া) পেয়েছেন ৫৪১৫ ভোট। কলমা ইউনিয়নে ৩১৫৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন রাধাকৃষ্ণ দাস (ঘোড়া)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাধন চন্দ্র দাস (আনারস) পেয়েছেন ২৯১৮ ভোট।

মিঠামইন উপজেলার মিঠামইন সদর ইউনিয়নে এডভোকেট শরীফ কামাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। গোপদিঘী ইউনিয়নে আনোয়ার হোসেন (মোটর সাইকেল) ৩৭৩২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নূরুল হক বাচ্চু (ঢোল) পেয়েছেন ৩৪৪৬ ভোট। কাটখাল ইউনিয়নে তাজুল ইসলাম (ঘোড়া) ৪৬১০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রইছ উদ্দিন আহমেদ (আনারস) পেয়েছেন ৪১০৯ ভোট। বৈরাটি ইউনিয়নে ৩৯৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তাজুল ইসলাম (আনারস)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রফিকুল ইসলাম (ঘোড়া) পেয়েছেন ২৩৫৮ ভোট। ঢাকী ইউনিয়নে মো. লুতফর রহমান ভূঞা (মোটর সাইকেল) ৫৬৮৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. মজিবুর রহমান (চশমা) পেয়েছেন ৩৯৬৮ ভোট। কেওয়ারজোড় ইউনিয়নে ১৬২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আবুল কাশেম (আনারস)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. শহিদুর রহমান (দুটি পাতা) পেয়েছেন ১৫০৬ ভোট।
ঘাগড়া ইউনিয়নের ২৮ নম্বর হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। কিন্তু ভোট গণনা শেষে ফলাফল প্রদানের সময় একদল দুর্বৃত্ত বিদ্যালয়টি তালাবদ্ধ করে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের আটকে রাখে। খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সহযোগিতায় কর্মকর্তারা নির্বাচনী মালামালসহ নিরাপদে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে চলে যান। এ অবস্থায় প্রিসাইডিং অফিসার এ কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করেন। আগের ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী মোটরসাইকেল প্রতীকে বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল ৩০৬০ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঢোল প্রতীকে মো. মোখলেছুর রহমান ভূঞা পেয়েছেন ২৭১৬ ভোট।

যে কারণে ১৫ ইউপিতে ছিল না নৌকা প্রতীক

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না থাকার সিদ্ধান্ত হয় গত ৫ ডিসেম্বর। সেদিন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপজেলা দুটির ১৫ ইউপির নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, ১৩ উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ। জেলার অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা—হাওরবেষ্টিত এই তিন উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৪। ওই আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ছয়বার এমপি হন। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আসনটি শূন্য হয় এবং উপনির্বাচনে তার বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পান। বর্তমানে রেজওয়ান টানা তিনবারের এমপি । এককথায় হাওরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে স্বাধীনতাপূর্ব সময় থেকে রাষ্ট্রপতি পরিবারের একক নিয়ন্ত্রণ।

পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে ১০ জন করে নানা উপায়ে প্রার্থিতার জানান দেন। ১০ জনের মধ্যে দু–একটি ছাড়া বাকি সব কটিতে প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছিলেন। তারা দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। নৌকা পেতে প্রত্যেকের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। এতে করে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বিপাকে পড়েন। বিশেষ করে প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায় এবং নৌকা পাওয়ার বিষয়ে তাদের অবস্থান জোরালো হওয়ায় নেতাদের সমস্যা বাড়ে, বিশেষ করে এমপিদের। তারা বুঝতে পারেন একজনের অধিক কাউকে নৌকা দেওয়া সম্ভব নয়। আর তাই যদি করা হয়, তাহলে হাওরের শান্ত রাজনীতি অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। প্রতিটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী থেকে যাবেন। চেষ্টা করেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরিয়ে আনা যাবে না। এতে করে সংঘাত বাড়বে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। সরাসরি ক্ষতির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রাষ্ট্রপতির পরিবারে। পরবর্তী সময়ে এর জের গিয়ে পড়বে সাংসদ রেজওয়ানের ঘাড়ে। তখন দলের একক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এক সপ্তাহ ধরে এই জটিলতার মুক্তির পথ খুঁজছিলেন নেতারা। একপর্যায়ে মুক্তির পথ হিসেবে আলোচনায় গুরুত্ব পায় দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন আয়োজনের। পরিকল্পনাটি এমপিদের পছন্দ হয়। পরবর্তী সময়ে আলোচনাটি মাঠপর্যায়ে জোরালো হয় এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন। সব মিলিয়ে গত ৫ ডিসেম্বর গণভবনে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রস্তাবটি লিখিতভাবে উপস্থাপন করেন এমপি রেজওয়ান। এমপির আবেদনের পক্ষে অবস্থান নেয় বোর্ড। ফলে এই ১৫ ইউপিতে নৌকা প্রতীক ছাড়া ভোট অনুষ্ঠিত হলো বুধবার।

Development by: webnewsdesign.com