অদৃশ্য লাল ফিতায় বন্দি লাখো মানুষের ভাগ্য/ একটি সেতুর জন্য আর কত কাল?/৫০ বছরেও হয়নি বালু নদের সেতু/সেতু নিজেই নীরবে কাঁধে,মানবতা মুচকি হাসে/শেষ হয়েও হইল না শেষ বালুনদের ব্রিজের কাজ।
“ ২১ বছর বিঝিয়ে রেখেছি দু’নয়নের জলে। কত আশা কত ভরসা সব হারিয়ে গেল স্বপ্নের অতল গহীনে। ২১ টা বছর যাবৎ বালুনদেও ব্রিজের কাজ নিয়ে কি যে খেলা চলছে তা একমাত্র আল্লাহ জানেন। হঠাৎ চালু হয়, আবার হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। একি খেলা চলছে হরদম। ” এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার খামার পাড়া এলাকার হাবিবুর রহমান।
৫০ বছরেও শেষ হল না বালুনদের সেতুর কাজ। দ্বিতীয় দফায় নতুন করে কাজ শুরু হওয়ার আগেই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)-এর বাঁধার মুখে আটকে গেলো রূপগঞ্জের বালু স্বপ্নের সেতু। সেতুটি নিয়ে গত ৫০ বছর ধরেই চলছে গোলক ধাঁ-ধাঁ। স্থানীয়রা বলছেন, সেতু নির্মাণ না হলে বিক্ষোভ, মানবন্ধন, সড়ক অবরোধসহ বড় ধরণের কর্মসূচি পালন করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭৫.৩০ মিটার দৈর্ঘ্য বালুনদের সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু ২০০১ সালে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এক বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পান মের্সাস ইস্টর্নি ট্রেডার্স লিমিডেটের তৎকালীন ঠিকাদার জাহিদ হোসেন।
আলামীন মিয়া বলেন, যে নদীতে নৌকা ছাড়া ছোট ট্রলারও চলতে পারে না, সে নদীর ব্রিজে বিআইডব্লিও বাধা বা আপত্তি জানায় কিভাবে তা আমাদেও বোধগম্য নয়। নব্যতা সঙ্কটে সারা বছরই নৌযান নদীতে আটকে থাকে। তখন কারো কোনো খবর থাকে না। সেতু নির্মানে এত বাধার কি হেতু আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই।
সেতুটির নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ সড়ক উপ-বিভাগ-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, বিআইডব্লিউটিএ চিঠি দিয়ে জানিয়েছে সেতুটির নির্মাণের সময় ভার্টিকেল ক্লিয়ারেন্স স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল হতে ১২ দশমিক ২০ মিটার রাখতে হবে। এবং এক গার্ডার থেকে অপর গার্ডারের মধ্যে ৭৬ দশমিক ২২মিটার ক্লিয়ারেন্স থাকতে হবে। বালু নদীকে তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নদী হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। আমাদের সেতু ডিজাইন বিভাগ নদীটিকে তৃতীয় শ্রেণির বিবেচনায় ডিজাইন সম্পন্ন করে। এই ডিজাইন অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করে গত ১৬ মে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
সেতুর প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি জানায়। অথচ বালু নদীর উপর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি ১০৯ মিটার দীর্ঘ সেতু এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ১১০ দশমিক ৫০ মিটার দীর্ঘ কায়েত পাড়া সেতুটি নির্মাণ করেছে বালু নদীকে তৃতীয় শ্রেণির নদী অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রেখে। এই সেতু দুটির মধ্যখানে সওজ এর নির্মাণাধীন আমাদের সেতু। ওই দুটি সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়েছে ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং এক গার্ডার থেকে অন্যটির দূরত্ব রাখা হয়ে যথাক্রমে ৩৪ দশমিক ৫০ মিটার এবং ২৫ দশমিক ৫০ মিটার।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরেজমিনে দেখেছি বালু নদী একটি শাখা নদী । সেখানে বড় কোন নৌযান চলাচল করে না। শুষ্ক মৌসুমে নদীটিতে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ মিটার পানি থাকে এবং এর প্রসস্থতা ২৫ থেকে ৩০ মিটারের মধ্যে নেমে আসে। এছাড়াও আমাদের সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৭৫ দশমিক ৩০ মিটার। বিআইডব্লিউটিএ বলেছে গার্ডারের মাঝে গ্যাপ রাখতে হবে ৭৬ দশমিক ২২ মিটার। অথচ নদীটির বিদ্যমান অবস্থায় এধরনের প্রশস্থতা নেই।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণ হলে রূপগঞ্জসহ রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠের খিলগাও, সবুজবাগ, ডেমরা ও আশপাশের কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে। খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা ও গার্মেন্ট শিল্প। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। সেতুটি নির্মিত হলে কাচপুর ও সুলতানা কামাল সেতুর যানজট কমে যাবে। দেশের উত্তরাঞ্চল সিলেট, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ ১০ জেলার যানবাহন অতি সহজে ভুলতা দিয়ে কায়েতপাড়া হয়ে রাজধানী রামপুরায় প্রবেশ করতে পারবে।
প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সেতুটি নির্মাণ না হলে ইতিপূর্বে যে টাকা খরচ হয়েছে তার পুরোটাই অপচয় হবে। আর সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে রূপগঞ্জের সাথে সড়কপথে রাজধানীর সরাসরি সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের এ দাবি পূরণ হলে তারাও উপকৃত হবেন। সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী কাজ করছেন।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতিক) বলেন, বালু নদের সেতুটি হলে রূপগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ খুব সহজ হবে। আর কায়েতপাড়া ইউনিয়নবাসীর জন্য এ সেতু স্বপ্ন। তাই লাখো মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইনশায়াল্লাহ এ সেতু হবেই।
Development by: webnewsdesign.com