হৃদরোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন

শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪ | ১২:২২ অপরাহ্ণ

হৃদরোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন
হৃদরোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন
apps

অধ্যাপক ডা. তৌফিকুর রহমান ফারুক

প্রাপ্তবয়স্ক সব মুসলিম নরনারীর জন্য রোজা ফরজ। তবে অসুস্থতাসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসলাম রোজা রাখা থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে। হার্টের রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন কি না এবং রাখলে কী কী নিয়ম মেনে চলবেন, হার্টের ওষুধগুলো এ সময় কীভাবে খাবেন, রমজানে কি ব্যায়াম করবেন, করলে কখন করবেন, রোজা রাখলেও কখন ভাঙতে হবে-এ বিষয়গুলো হৃদরোগীরা জানতে চান। সেটা নিয়েই এ আলোচনা।

* হার্টের রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন কিনা

যদি হার্টের রোগী জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে কোনো উপসর্গ ছাড়া সুস্থ থাকেন, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ না থাকে তাহলে তারা কিছু নিয়ম কানুন মেনে রোজা রাখতে পারবেন। হার্টের সমস্যা আছে কিন্তু বর্তমানে কোনো উপসর্গ নাই এবং হার্টের ফাংশন ৫০% (EF-50%)-এর উপরে তারা রোজা রাখতে পারেন।

* কোন কোন রোগীর রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ

▶ সম্প্রতি হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এমন রোগী।

▶ যেসব হার্ট অ্যাটাকের রোগী সঠিক জীবনযাত্রা ও ওষুধ সেবনের পরও বিশ্রামে থাকা অবস্থায় বা অল্প পরিশ্রমেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন।

▶ যেসব হার্ট ফেইলিউরের রোগী সঠিক জীবনযাত্রা ও ওষুধ সেবনের পরও বিশ্রাম বা অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন।

▶ অনিয়ন্ত্রিত হাইপ্রেসার (হাইপারটেনশন) বা হাইপ্রেসারের কারণে বুকে ব্যথা/কিডনি/ব্রেন বা চোখে সমস্যা হচ্ছে এমন রোগী।

▶ ৩ মাসের মধ্যে হার্টে রিং বা বাইপাস সার্জারি হয়েছে। তবে রিং বা বাইপাসের ১ বছর পর যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে রোজা রাখা সম্পূর্ণ নিরাপদ। ৩ মাস থেকে ১ বছর সময়টা চিকিৎসকের পরামর্শ ও রোগীর ফিটনেসের ওপর নির্ভরশীল।

▶ জন্মগত হার্টের কিছু ত্রুটি, যেগুলোতে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট বা হাত-পায়ের আঙ্গুল নীল হয়ে যায়, এসব রোগী ঝুঁকিপূর্ণ।

* ওষুধ কীভাবে সমন্বয় করবেন

সাধারণত রমজানে দু’বেলা খাওয়ার ওষুধগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। একই ওষুধের মধ্যে যেগুলো দীর্ঘক্ষণ কাজ করে সেগুলো ব্যবহার করা উচিত। সকালের ওষুধগুলো ইফতারে, রাতের ওষুধগুলো সেহরিতে নেওয়া যায়। তবে ডাইইউরেটিক (Lasix, Fusid, Frulac, Spirocard, Dytor, etc.) জাতীয় ওষুধগুলো সন্ধ্যায় খেতে হবে। এগুলো সেহরিতে খেলে সারাদিন প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের পানি বের হয়ে পানিশূন্যতা, প্রেসার কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে। প্রেসারের ওষুধের ক্ষেত্রেও যেগুলো ডাইইউরেটিক জাতীয় সেগুলো সন্ধ্যায় খেতে হবে। কেউ যদি শুধু একটা প্রেসারের ওষুধ খান সেটাও ইফতার বা সন্ধ্যায় খেলে ভালো। হার্টের রোগীদের কমন ওষুধগুলোর মধ্যে একটি হলো এন্টিপ্লাটিলেট (Ecosprin, Lopirel, Clopid AS, Odrel, Asclopetc) বা রক্ত জমাট না বাঁধার ওষুধ। এগুলো সাধারণত দুপুরে খাবারের পরে দিয়ে থাকি। রমজানে এগুলো ইফতার বা সেহরি যে কোনো সময় খাওয়া যেতে পারে। তবে ইফতারের পরে খেলে ভালো।

* হৃদরোগীদের খাবার দাবার

▶ যেহেতু সারা দিন না খেয়ে থাকা হয়, তাই ইফতারে হার্টের রোগীরা হঠাৎ করে অতিরিক্ত পানি জাতীয় খাবার বা শরবত খেলে সেটা শরীর অ্যাডজাস্ট করতে ঝামেলা হতে পারে। তাই অতিরিক্ত শরবত না খাওয়াই ভালো।

▶ যে খাবারগুলো ইফতারিতে খাই তার সবই তেলে মচমচে ভাজা। এগুলো সব ট্রান্সফ্যাট বা খারাপ চর্বিতে ভর্তি থাকে। এগুলো হার্টের রোগীদের জন্য বিপজ্জনক। তাই হার্টের রোগীরা ইফতারে এসব ভাজাপোড়া খাবেন না।

▶ যাদের হাইপ্রেসার আছে তারা শরবতে অতিরিক্ত লবণের দিকে লক্ষ্য রাখবেন।

▶ একসঙ্গে পেট ভরে না খেয়ে ইফতারে অল্প তারপর নামাজ, একটু হাঁটাহাঁটির পর আবার অল্প খাওয়াটা উত্তম।

* ব্যায়াম কখন করবেন

হার্টের রোগী বা ডায়াবেটিসের রোগীদের আমরা ব্যায়াম করতে বলি। রমজানে ব্যায়ামের উপযুক্ত সময় হচ্ছে সন্ধ্যায়। সকাল বা বিকালে ব্যায়াম করতে গেলে পানিশূন্যতা, দুর্বলতা, হার্টের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। যেহেতু এবার রমজান গরমের সময়ে, তাই হার্টের রোগীরা অতিরিক্ত পরিশ্রম, অতিরিক্ত ঘাম ঝরানো থেকে দূরে থাকবেন। পানিশূন্যতা হচ্ছে কিনা লক্ষ্য রাখবেন।

* রোজা কখন ভাঙবেন

মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া শিশুরা ছোটবেলা থেকেই রোজার প্রতি সংবেদনশীল। তাই বড় হয়েও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লেও রোজা ভাঙতে চান না। অনেকেই দেখা যায় প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কখনোই রোজা ভাঙেননি। তারা যে কোনো পরিস্থিতিতেই রোজা চালিয়ে নিতে চান। কিন্তু অসুস্থতার ক্ষেত্রে ইসলামই রোজা ভাঙ্গার বা না রাখার বিধান রেখেছে। হার্টের রোগীদের যদি প্রচণ্ড বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত পালপিটিশন, অনিয়মিত হার্টবিট বা পরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাক পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে রোজা ভেঙে ফেলাই উত্তম।

তবে হার্টের রোগী যদি রোজা রাখতে চান, তাদের জন্য ভালো হচ্ছে তারা রমজানের আগেই শাবান মাসে কিছু নফল রোজা রেখে ট্রায়াল দেয়া। হাদিসেও বলা হয়েছে শাবান থেকে রমজানের প্রস্তুতি নিতে।  লেখক : মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস, মালিবাগ, ঢাকা।

সূত্র : যুগান্তর 

Development by: webnewsdesign.com