হবিগঞ্জে আলোকিত দুইটি হত্যা মামলায় ১০ জনের ফাঁসি ও ১০ জনের যাবজ্জীবন

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ | ১২:৪৪ অপরাহ্ণ

হবিগঞ্জে আলোকিত দুইটি হত্যা মামলায় ১০ জনের ফাঁসি ও ১০ জনের যাবজ্জীবন
হবিগঞ্জে আলোকিত দুইটি হত্যা মামলায় ১০ জনের ফাঁসি ও ১০ জনের যাবজ্জীবন
apps

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হুরগাও গ্রামের কৃষক হারুন আহমদ হত্যা মামলার ২১ বছর পর রায় ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০-এপ্রিল) বিকালে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আজিজুল হক এ রায় প্রদান করেন। রায়ে ৭ জনকে ফাঁসির আদেশ ও ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। একই সাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আসামিদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন। পেশকার বাবলু মিয়া জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জালাল মিয়া, রুহুল আমিন মিলন, কাজল মিয়া, কুতুব উদ্দিন, রফিক মিয়া, জাকির হোসেন ও আব্বাস উদ্দিন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হল, জজ মিয়া, ইব্রাহিম মিয়া, ইছহাক আলী, জিয়াউর রহমান, কালাম মিয়া, কতুব উদ্দিন-২, আব্দুল মতলিব, সায়েদ আলী, মিজাজ মিয়া, পলাতক আয়াত আলী মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায় সদর উপজেলার।

হুরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি মেম্বার মিলন আহমেদ ও হারুন আহমেদের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। ২০০৩ সালে ইউপি নির্বাচনের পর এ বিরোধ আরও তীব্র আকার ধারণ করে। এরই জের ধরে ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে হারুন আহমেদসহ ৭-৮ জন নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল আহমেদকে দাওয়াত দিতে যান। এ সময় পথে মিলন আহমেদের নেতৃত্বে ৪০-৫০ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালান। হামলায় হারুন আহমেদ ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার শরীরে ৩২টি ফিকলের (সুচালো অস্ত্র) আঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সুমন আহমেদ বাদী হয়ে সদর থানায় ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ১৮ আগস্ট সব আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় এ রায় প্রদান করেন।

রায় প্রদানকালে আসামিগণ আদালতে উপস্থিত ছিল আসামিদের মধ্যে আটজন বিচার চলা কালীন মারা যান। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ২২ জনকে খালাস দেওয়া হয়। পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে একই বছর আসামীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক আসামীদের উপস্থিতিতে গতকাল এ রায় প্রদান করেন।
এই রায়ে নিহতের ছেলে রাহাত আহমেদ সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। তবে আসামি পক্ষে এ রায়ে অসন্তোষ্ঠ হয়েছেন তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানান।

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের নসরতপুরে স্কুলছাত্র মোঃ তানভীর হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক স্বপন কুমার সরকার আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন। নিহত তানভীর (১৯) শায়েস্তাগঞ্জের নসরতপুরের ফারুক মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-পশ্চিম নসরতপুর

গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (২৫), নুরপুর গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে শান্ত (২৬) ও বাছিরগঞ্জ বাজারের জলিল কবিরাজের ছেলে জাহিদ মিয়া (২৮)। তিন বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত লিমন মরমা গ্রামের মৃত মরম আলীর ছেলে। সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সরওয়ার আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আসামিরা পরিকল্পনা করে নির্মমভাবে তানভীরকে হত্যার পর লাশ পুঁতে রেখেছিল। একদিন পরই তাদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেই সঙ্গে হত্যার কথা স্বীকার করেছে তারা। তাদের তথ্যমতে লাশ ও আলামত উদ্ধার করা হয়। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মামলার রায় দেন বিচারক। মামলার সংপ্তি বিবরণে জানা গেছে, তানভীরের প্রতিবেশী উজ্জ্বল বাড়ির পাশে সবজি ও ফল চাষ করতেন।

সেই জমিতে চাষ করা কলা উজ্জ্বল বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। তখন তানভীরের বাবা ফারুক মিয়া উজ্জ্বলকে বলেন, তুই এই কলা চুরি করে এনে বাজারে বিক্রি করছিস। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে বাজারে সালিশ বৈঠকে উজ্জ্বলের বাবা সৈয়দ আলীকে অপমান করেন ফারুক। সবার সামনে বাবাকে অপমানের কথা ভুলতে পারেননি উজ্জ্বল। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। এরই মধ্যে উজ্জ্বলকে ইরাকে পাঠিয়ে দেন বাবা। ছয় বছর পর দেশে ফেরেন। পরিকল্পনা করতে থাকেন কীভাবে বাবাকে অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী তানভীরকে প্রথম দফায় অপহরণের চেষ্টা করেন উজ্জ্বল এবং তার সহযোগী জাহিদ।

ওই যাত্রায় বেঁচে যান তানভীর ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি উজ্জ্বল, জাহিদ এবং শান্ত মিলে তানভীরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন উজ্জ্বলকে শান্ত জানান, তানভীরকে ঘরের বাইরে আনার দায়িত্ব তার। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শান্ত কৌশলে তানভীরকে ওই এলাকার পুকুর পাড়ে ডেকে আনেন। উজ্জ্বল ঘটনাস্থলে যান। এক পর্যায়ে উজ্জ্বল তানভীরের মোবাইল নিয়ে নেন। সেখানে তানভীরের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দেন উজ্জ্বল এ সময় শান্ত এবং জাহিদ উভয়ে মুখ চেপে ধরে রাখেন।

মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পাশের পুকুরে লাশ নিয়ে যান। সেখানে পেটে ছুরিকাঘাত করেন যেন লাশ ভেসে না ওঠে। পরে তিন জন মিলে পুকুরের কাদামাটিতে লাশ চাপা দিয়ে রাখেন। এরপর তানভীরের বাবার মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে ৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন জাহিদ সেই সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

Development by: webnewsdesign.com