স্বাধীনতা চাই গল্প বলার

শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২:৩৩ অপরাহ্ণ

স্বাধীনতা চাই গল্প বলার
apps

একজনের কাজের সেন্সর হলে আরেকজনের মনেও সেই ভয় ঢুকে যায়। অন্যজন তখন নিজে থেকে অবচেতনে তাঁর স্ক্রিপ্ট, দৃশ্যায়ন সবকিছুতে সেন্সর করতে শুরু করেন। এমন করে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিল্পমাধ্যম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প নানা রকম বিধিনিষেধের বেড়াজালে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই সার্টিফিকেশন অ্যাক্ট ২০১৯-এর আরও বেশি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করা দরকার। অনুভূতিতে আঘাত বা সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো আইনে উল্লিখিত শব্দগুলোর স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন। বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ফ্যাব ফেস্টে ‘বাংলাদেশি সিনেমা অ্যাট আ ক্রস রোড: হাউ রিফর্ম ক্যান প্রোপেল আস’ পর্বে আলোচকদের বক্তব্যে উঠে এল এসব সংকটের কথা।

ফিল্ম অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের ( ফ্যাব) আয়োজনে শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় ফ্যাব ফেস্ট ২০২২। আয়োজনের প্রথম পর্ব ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ওপর আরোপ করা বিভিন্ন বিধিনিষেধের আইনের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা। শুরুতেই এই শত বছরের পুরোনো ব্রিটিশ কলোনিয়াল আইনের ধারাবাহিকতায় তৈরি সার্টিফিকেশন অ্যাক্টের ইতিহাস তুলে ধরেন চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমেদ সাইমন।

তিনি বলছিলেন, যে সমাজে প্রশ্ন তোলা যায় না, সেই সমাজ মজাপুকুরের মতো। সেখানে নতুন কিছু উদ্ভাবন হওয়ার পথ সংকীর্ণ হয়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তৈরি করা নির্মাতাদের কাঁটাতারের বেড়ার পেছনে বসা এরই এক বার্তা। তাঁর কথার সূত্র ধরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈন গণি বললেন, রিফর্ম আসতে হবে আলোচনার মাধ্যমে। আইনপ্রণেতাদের দুই পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। পারস্পরিক আলাপের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে আইনের কাঠামো অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে কি না।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, এখন আর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দেখে কেউ বলিউড বা কলকাতার সিনেমার কপি বলতে পারবেন না। বারবার ভাবমূর্তি নষ্ট করার যে অভিযোগ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে আনা হয়, সে কথা তুলে ধরে জানান, ভাবমূর্তি নষ্ট করতে হলে কষ্ট করে শিল্প তৈরির প্রয়োজন হয় না। সেন্সরের ধারাগুলো যথেষ্ট নির্দিষ্ট নয় উল্লেখ করে অনুদানের নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা বলেন এই চলচ্চিত্র নির্মাতা। সরকারি অনুদানে বানানো ছবির জন্য তরুণদেরও সমান সুযোগ পাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রয়োজন।

বাংলাদেশি সিনেমা অ্যাট আ ক্রস রোড: হাউ রিফর্ম ক্যান প্রোপেল আস’ পর্বের সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক নূর সাফা জুলহাজ। ফ্যাবের দিনব্যাপী আয়োজিত সম্মেলনে এটি ছিল আলোচনার প্রথম পর্ব। চলচ্চিত্র নির্মাতা পিপলু আর খানের বক্তব্যে উঠে আসে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার কারণে সংস্কৃতিকে অর্থনৈতিক খাতে পৌঁছে দিতে না পারার আক্ষেপ। নির্মাতারা নিজের পরিচিতি নিয়ে মানসিক সংকটে ভোগেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচকদের বক্তব্য শেষে কথা বলেন এই পর্বের প্যানেলিস্ট আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ২০৪১ সালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে কোথায় নিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ, তা ভাবতে হলে আন্দোলন নয়, অংশীদার হয়ে এ কাজ সহজ করার কথা জানান তিনি। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। সার্টিফিকেশন আইন এখন মন্ত্রণালয়ে আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তা পাস হয়ে নতুন আইন হবে। আলোচকদের উদ্দশে জানান, ‘আপনাদের আলোচনার আহ্বান জানাতেই এখানে উপস্থিত হয়েছি। সরকার হাতে চাপ দিয়ে নয়, হাত ধরে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।

‘বাংলাদেশি সিনেমা অ্যাট আ ক্রস রোড: হাউ রিফর্ম ক্যান প্রোপেল আস’ পর্বের প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য দেন চলচ্চিত্রকার ও নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। শুক্রবারের আয়োজন সম্পর্কে তিনি জানান, এই শিল্পে নেতৃত্বের ব্যর্থতা অতীতেও ছিল, এখনো আছে। একসময় এ দেশে শতাধিক প্রেক্ষাগৃহ ছিল, কিন্তু এখন তা অর্ধশততে নেমে এসেছে। ঐতিহ্যের আলোকে ভবিষ্যতের সোপান তৈরির চেষ্টা থেকেই এ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘আমরা গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ দাবি নিয়ে শুরু হয় আয়োজনের প্রথম পর্বের আলোচনা।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর, চলচ্চিত্রকার মসিউদ্দিন শাকের ও মোরশেদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। উদ্বোধনী আয়োজনে গান পরিবেশন করেন আরমীন মুসা, তনুশ্রী দাস, রেজাউল করিম, ইউসুফ আলী খান, আহনাফ খান প্রমুখ।

 

Development by: webnewsdesign.com