স্বপ্নপূরণ করতে চায় নিলয় ও চুমকি

মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৪:৪১ অপরাহ্ণ

স্বপ্নপূরণ করতে চায় নিলয় ও চুমকি
apps

পঞ্চম শ্রেণি, অষ্টম শ্রেণি, এসএসসি এবং এবারের এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ ৫ পেয়েছেন রাজবাড়ীর নিতান্ত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী নিলয় কুমার নন্দী। অথচ এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়ার পর অর্থাভাবে ভালো কলেজেই ভর্তি হতে পারছিলেন না নিলয়। তাঁর বিষয়টি তুলে ধরে তখন কালের কণ্ঠের ‘শতবাধা পেরিয়ে’ সিরিজে ছাপা হয়েছিল প্রতিবেদন। তারপর নিলয়কে কলেজে ভর্তি হতে সহায়তা করেছিল রাজবাড়ীর তৎকালীন পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি এবং আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

সাভার মডেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান নিলয়। আবারও সংগ্রাম শুরু হয়। নিলয়কে পড়াশোনা এবং নিজের চলার অর্থ জোগাড় করতে হয়েছে প্রাইভেট পড়িয়ে।এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার পর আনন্দে উদ্বেলিত নিলয় এই প্রতিবেদককে ফোন করে কালের কণ্ঠের কাছে ঋণী বলে মন্তব্য করেন। নিলয় বলেন, ‘এ কলেজ থেকে এবারও বিজ্ঞান বিভাগে আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি। কালের কণ্ঠ পাশে না থাকলে হয়তো আমার এভাবে এগোনো হতো না। ’

অন্যদের সহায়তার পাশাপাশি নিজের প্রত্যয় আর পরিশ্রম নিলয়ের সাফল্যে অবদান রেখেছে। কলেজের পড়াশোনার পাশাপাশি তিনটি প্রাইভেট টিউশনি করেছেন তিনি। এখন একজনকে পড়াচ্ছেন। তাঁর স্বপ্ন এখন বুয়েটে পড়ার। যথারীতি আবার আর্থিক সহায়তার মুখাপেক্ষী তিনি। আশা করছেন, সবার সহযোগিতা পেলে এ দফাও সব বাধা পেরিয়ে যেতে পারবেন।

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া গ্রামের দরিদ্র বাতাসা বিক্রেতা নবকুমার নন্দীর মেজো ছেলে নিলয়। বাতাসা বিক্রি পড়ে যাওয়ায় নবকুমার মাস্ক বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। নিলয় জানান, তাঁর বাবা মেয়ের খরচ দিতে পারলেও দুই ছেলের ব্যয়সহ সংসার চালাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। বাবার পক্ষে তাঁর পড়াশোনার জন্য একটি টাকাও খরচ করা সম্ভব নয়।

নিলয়ের মা মাধবী রানী নন্দী জানান, নিলয় বরাবরই মেধাবী। শ্রেণিতে কখনো দ্বিতীয় হননি। অথচ ছেলেকে তিনি দুই বেলা ভালো করে খাওয়াতেও পারেননি। দিতে পারেননি ভালো পোশাক। একটু বড় হয়ে বই, কলম, খাতা সব কিছুই নিলয় প্রাইভেট পড়ানোর টাকা দিয়ে কিনেছেন। মাঝেমধ্যে তিনি পরিবারের পেছনেও অর্থ ব্যয় করেছেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্বের সামনে এসে কিভাবে এগিয়ে যাবেন, তাই নিয়ে চিন্তায় আছেন তাঁরা।

নিলয়ের বাবা নবকুমার নন্দী কালের কণ্ঠের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবারও পত্রিকাটি নিলয়ের পাশে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

চুমকির স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়া : নাদিয়া সুলতানা চুমকি নান্দাইল উপজেলার সিংরুইল ইউনিয়নের দিলালপুর গ্রামের দিনমজুর মো. আবু তাহেরের মেয়ে। কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। এসএসসি পরীক্ষায়ও তিনি জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। চুমকির স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়া। এখন তাঁর মনে শঙ্কা, কোনো মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার আশা পূরণ হবে কি?

চুমকির বাবা নিতান্ত দরিদ্র। জীবিকার জন্য দিনমজুরির পাশাপাশি কাঠুরের কাজ করেন। মা-বাবার ভাষায়, ‘খেয়ে না খেয়ে সন্তানকে এ পর্যন্ত পড়িয়েছি। মেয়ের স্বপ্ন ডাক্তারি পড়বে। কিভাবে তার খরচ জোগাব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি আমরা। ’চুমকি নিজে বলেন, ‘এক বেলা খাইতে পারলে আরেক বেলা খাইতে পারছি না। হের পরও হতাশ হইছি না। ’

চুমকি জানান, তাঁর বড় বোনও এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। তাঁরও স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। মেডিক্যালে পরীক্ষা দিয়েও ১ পয়েন্টের চেয়েও কম নম্বরের জন্য স্বপ্ন বাস্তব হয়নি। চুমকির মনে তখন থেকেই জেদ কাজ করেছে, তিনি সফল হয়ে বোনসহ পরিবারকে খুশি করবেন। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করতে চান তিনি।

চুমকির মা মদিনা আক্তার জানান, পরের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে মেয়ের লেখাপড়ার জন্য টাকার জোগান দিয়েছেন। চাওয়া, তার পরও যেন মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়। আত্মীয়-স্বজনের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মেয়ে কলেজের ক্লাস করেছে।

 

 

Development by: webnewsdesign.com