সিন্ডিকেটের ফাঁদে চাল আমদানি

বৃহস্পতিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ | ১:০১ অপরাহ্ণ

সিন্ডিকেটের ফাঁদে চাল আমদানি
সিন্ডিকেটের ফাঁদে চাল আমদানি
apps

বেসরকারিভাবে চাল আমদানির পরিমাণ বাড়ানো যায়নি। বলা হচ্ছে, ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনমাফিক এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছে না আমদানিকারকরা।

এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানির উৎস দেশও সীমিত হয়ে গেছে। অনেক দেশ এখন চাল রফতানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যার প্রভাব পড়েছে দেশের আমদানিতে। এর ফলে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রার বেশিরভাগ কোটা বেসরকারি ব্যবসায়ীদের হাতে। এ কারণে দীর্ঘদিন থেকে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে আমদানির লাগাম টেনে ধরে বাজার থেকে অতিরিক্ত মুনাফা লুফে নেয়। প্রভাবশালী এই চাল সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলেও ভরা মৌসুমে ঠিকই চালের বাজার চড়া থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এমন নজির দেখা গেছে।

সূত্র জানায়, বেসরকারি আমদানিকারকদের প্রায় তিন মাস আগে ১৪ লাখ ৯০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু দেশে এসেছে মাত্র ৪ লাখ ১০ হাজার টন। বাকি ১০ লাখ ৮০ হাজার টন চাল এখনো এসে পৌঁছায়নি। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে এই চাল দেশে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তবে নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানায়, বাস্তবে এই চাল যথাসময়ে আসবে না। চাল নিয়ে চালাকি করে অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের ফাঁদ পাতা হবে। যেভাবে প্রতিবছর চাল সিন্ডিকেট কারসাজি করে, এবারও তার ব্যত্যয় হবে না।

প্রসঙ্গত, গত তিন মাসে দেশে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার টন।

খাদ্য মজুত পরিস্থিতি জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন যুগান্তরকে জানান, বর্তমানে সরকারি গুদামে প্রায় ১৮ লাখ ১৯ হাজার ২৭ টন চাল ও গম মজুত রয়েছে।

এত বেশি মজুদের পরও কেন আমদানি করতে হচ্ছে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘সরকার কাউকে লাভবান কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য চাল আমদানি করছে না। আমদানির উদ্দেশ্য হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। চলতি বছর বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের খবর ইতোমধ্যে সবাই জেনেছেন। ফলে আগামী দিনে যাতে কোনো ধরনের সংকটে পড়তে না হয়, সে জন্য আমরা খাদ্য নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার কাজে হাত দিয়েছি। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ মজুত করার পরিকল্পনা করেছি।’

খাদ্য বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, খাদ্য সংকটের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সরকার ৩০ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত করতে চায়। সরকারি খাদ্য নিরাপত্তা দেশের সব মানুষের জন্য না। সব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বিধান করা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাজও না। মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় কাজ করে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ, বস্তিবাসী, জেলে পরিবার, খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস), ন্যায্যমূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ, ভিজিডি ও ভিজিএফ কর্মসূচিতে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে। এছাড়া সরকার বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের মাসিক রেশন দিয়ে থাকে। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘সংকট হচ্ছে জ্বালানি তেল ও পরিবহণ ভাড়া। হঠাৎ করে পরিবহণ ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা খাদ্যশস্য আমদানি করতে চাচ্ছে না। অথচ বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়ছে ডলার সংকটের কারণে চাল গম আমদানি হচ্ছে না। ডলার সংকট থাকতেই পারে। তবে একমাত্র ডলার সংকটই আমদানি কমেছে এ ধরনের প্রচার-প্রচারণা একেবারেই ভিত্তিহীন। ডলার সংকট অনেকগুলো কারণের একটি হতে পারে’।

তারা মনে করেন, ‘গত বছর বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদন কমেছে। কেন কমেছে তাও সবার জানা। ফলে খাদ্যশস্য পাওয়ার উৎস কমে গেছে। কোনো দেশ নিজ দেশের মানুষকে অভুক্ত রেখে রপ্তানি করে না, করবেও না। এটাই স্বাভাবিক। আমরা কী আমাদের জনগণকে ভুখারেখে চাল রফতানি করব? অবশ্যই না। তাহলে আমরা যে সব দেশ থেকে চাল ও গম আমদানি করব তারা নিজেদের অনিরাপদ রেখে কেন রপ্তানি করবে। সুতরাং চাল গম আমদানি কমছে’।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্যানুসারে, গত পাঁচ বছরে যে হারে জনসংখ্যা বেড়েছে তার চেয়ে কম হারে বেড়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ কোটি ৯৭ লাখ। যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখের কিছু বেশি। অর্থাৎ পাঁচ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে চাল ও গমের উৎপাদন কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজার টন। খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হারে। এ হিসাবে যে হারে জনসংখ্যা বেড়েছে সে হারে খাদ্য উৎপাদন বাড়েনি।

Development by: webnewsdesign.com