সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই ইসলামে

বৃহস্পতিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৩ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই ইসলামে
সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই ইসলামে
apps

এম এ মান্নান
ইসলাম শান্তির ধর্ম। সমগ্র মানব সমাজের শান্তি নিশ্চিত করতে ইসলামের আগমন। সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান এ পবিত্র ধর্মে নেই। ইসলামে অমুসলিমদের ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। কোরআন শরিফে আল্লাহপাক হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন অমুসলিমদের এ কথা বলতে, “তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্য এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্য।” (সুরা কাফিরুন : ৬)। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ইসলাম ধর্ম পালনের জন্য জোর-জবরদস্তি করতে ইসলাম ধর্ম নিষিদ্ধ করেছে। এ ব্যাপারে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে- “দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই।” (সুরা বাকারাহ : ২৫৬)। মুসলিম-অমুসলিম সবারই জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে ইসলামে সমান গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, কোনো মানুষ যদি কাউকে হত্যা করে সে যেন পৃথিবীর সব মানুষকে হত্যা করল; আর কেউ যদি কারও প্রাণ রক্ষা করে সে যেন পৃথিবীর সবার প্রাণ রক্ষা করল।” (সুরা মায়িদাহ : ৩২)। রসুল (সা.) বলেছেন, “মনে রেখ, যদি কোনো মুসলমান অন্য কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার কোনো মাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষ অবলম্বন করব।” (আবু দাউদ)।

হাদিসে আছে, একদা রসুল (সা.) এর পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তা দেখে দাঁড়িয়ে যান, উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তখন বললেন, এ তো ইহুদির লাশ। রসুল (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে মানুষ ছিল তো?’ (বুখারি)। ইসলাম মুসলিম-অমুসলিম সব আত্মীয় ও প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা করতে বলে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষকে বাবা-মায়ের সঙ্গে সুন্দর আচরণের আদেশ করেছি। তবে তারা যদি তোমার ওপর বল প্রয়োগ করে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরিক করতে, যে সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে তাদের কথা মানবে না।’ (সুরা আনকাবুত)। রসুল (সা.) বলেন, ‘প্রতিবেশীর বিষয়ে জিবরাইল আমাকে এত উপদেশ দিচ্ছিলেন, আমি মনে করছিলাম, তিনি হয়তো তাদের ওয়ারিশই বানিয়ে দেবেন।’ (তিরমিজি)। ইসলাম অন্য ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে ধর্ম নিয়ে এ বিষয়ে নবী করিম (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, “সাবধান! ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করিও না। এ বাড়াবাড়ির কারণে তোমাদের পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।”

ইসলাম মুসলিম-অমুসলিম সবার প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ করা হয়েছে, “কোনো সম্প্রদায় এর প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের এমনভাবে প্ররোচিত না করে যে তোমরা (তাদের প্রতি) ন্যায়বিচার করবে না। তোমরা ন্যায়বিচার করবে।” (সুরা মায়িদাহ : ৮)।
প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের কাছে তাদের উপাস্য অতি পবিত্র। এক ধর্মের অনুসারী অন্য ধর্মের উপাস্যকে গালি দিলে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এমনকি সাম্প্রদায়িক হানাহানি বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবনতি ঘটে। সমাজে অশান্তির সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, “তারা (অমুসলমানরা) আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ডাকে তাদের তোমরা গালি দিও না। তা না হলে তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহকেও গালি দিয়ে বসতে পারে।” (সুরা আনআম : ১০৮)। ইসলাম অমুসলিমদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি মেনে চলার শিক্ষা দেয়।

এ বিষয়ে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, “সেইসব মুশরিক যাদের সঙ্গে তোমরা (মুসলমানরা) চুক্তি করেছ, তারা চুক্তি রক্ষার ব্যাপারে একটুও কম করেনি, আর না তোমাদের বিরুদ্ধে অন্য কাউকে সাহায্য করেছে, তাদের সঙ্গে তোমরাও মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি মেনে চলবে।” (সুরা তওবা : ৪)। আত্মীয় অমুসলমান হলেও তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে ইসলামে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হজরত আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেছেন, “রসুলের যুগে আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার কাছে এলেন। তখন আমি রসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার মা এসেছেন, তিনি অমুসলিম। আমি কি তার সঙ্গে আত্মীয়তা রক্ষা করব? মহানবী (সা.) বলেন, হ্যাঁ তার সঙ্গে আত্মীয়তা রক্ষা কর।” (বোখারি)। কোরআন শরিফে এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে এ বিষয়ের ওপর পীড়াপীড়ি করে যে, তুমি আমার সঙ্গে শিরক (আল্লাহর শরিক) করবে যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মানবে না, তবে দুনিয়ার জীবনে তুমি তাদের (অমুসলিম পিতা-মাতার) সঙ্গে অবশ্যই ভালো ব্যবহার করবে।” (সুরা লোকমান : ১৫)। যে কোনো ধর্মের মানুষ প্রতিবেশী হতে পারে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করলে, ঝগড়াঝাটি করলে অশান্তিই সৃষ্টি হয়, অমুসলিম প্রতিবেশী হলে তাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও নষ্ট হয়। তাই প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক প্রতিবেশী হিসেবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে কোনো অবহেলা করা উচিত নয়।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন 

Development by: webnewsdesign.com