বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসব সমূহের মধ্যে পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব অন্যতম। যদিও এটা সমগ্র বাংলাদেশ ব্যাপী পালিত হয় না। কিন্তু খুব জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি সংস্কৃতি। এটাকে ঐক্য এবং বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
ঢাকা শহরে উৎসবমুখর পরিবেশে সাকরাইন উৎসব পালন করা হয় । মূলত পুরান ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাতে বেশি জমজমাট ভাবে উদযাপিত হয় পৌষসংক্রান্তি তথা সাকরাইন। শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোয়ালনগর, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, লালবাগ ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে ছোট, বড় সকলেই মেতে উঠে এ উৎসবে।
সাকরাইন উৎসব উপলক্ষে পুরান ঢাকার গলিতে গলিতে নানা রঙ-আকার-আকৃতির ঘুড়ি- নাটাইয়ের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সাথে আছে নাটাই আর মাঞ্জা দেয়া সুতা। পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে প্রস্তুত পুরান ঢাকা।
বিকেল বেলা এই সব এলাকায় আকাশে রঙ বেরঙের ঘুড়ি ওড়ে। সন্ধ্যার পর আকাশে ওড়ে রঙবেরঙা ফানুশ ও ঘরে ঘরে পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়।সাকরাইনে বর্তমানে দিনভর ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রংবেরঙের ফানুসে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী শহরের আকাশ। জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সাকরাইন উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এ উৎসব একসময় ঘুড়ি ওড়ানো কেন্দ্রিক থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদযাপনের ধরনে বিভিন্ন পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, ফানুস ওড়ানো, উচ্চ শব্দে গানবাজনা করা, আগুন মুখে নিয়ে খেলা করা, উচ্চ শব্দে আতশবাজি ফোটানো ইত্যাদি। আবেগপূর্ণ এসব কাজে উৎসব উদযাপনের পরিবর্তে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবকে ঘিরে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। কারণ বর্তমানে উৎসবগুলোতে বিকট আওয়াজে আতশবাজি করা হয়। যা মারাত্মক শব্দদূষণ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি উৎসবে উড়ানো ফানুস থেকে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটছে। বিকট শব্দে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের।
পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রতিবছর ১৪ জানুয়ারি সাকরাইন উৎসবে থার্টিফার্স্টের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি আতশবাজি ও ফানুস বিক্রি হয়। বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, শুধু পুরান ঢাকাতেই ৩০ হাজার বাড়ি আছে, যেখানে প্রতিটি বাড়িতে গড়ে ১০ হাজার টাকা করে বাজেট রাখলে প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা ব্যয় হয় ফানুস ও আতশবাজিতে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের প্রধান এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সাকরাইন পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এ উৎসবে ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি ফানুস ওড়ানো এবং আতশবাজি ফোটানো হয়। এ সময় উচ্চ শব্দসহ বায়ুদূষণকারী কার্যক্রম হয়। তিনি বলেন, এ উৎসবে যা হয়, তা দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় সুস্পষ্ট অপরাধ। অথচ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায় না।
সাকরাইনের রাতে দিনে অন্য সময়ের তুলনায় বহু শতাংশ বেশি শব্দ ও বায়ুদূষণ হবে, যা মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। এ উংসব ঘিরে রয়েছে হাজারো আতংক। সকরাইন উৎসব কারো জন্য আনন্দের কারো জন্য ভয় আতংক কান্না জর্জরিত উৎসব না হয়। জীববৈচিত্র্য ও প্রানীকুলের কথা ভেবে অবশ্যই শব্দ ও বায়ু দূষণ থেকে বিরত থেকো উংসব পালন করা উচিত। অবশ্যই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে এটা না হলে ক্রমশ শব্দসন্ত্রাসী বেড়েই চলবে।
Development by: webnewsdesign.com