সবার অজান্তেই বাংলাদেশ এখন শ্রীলংকা হয়ে গেছে – গোলাম মোহাম্মদ কাদের

শনিবার, ১০ জুন ২০২৩ | ৫:৫৩ অপরাহ্ণ

সবার অজান্তেই বাংলাদেশ এখন শ্রীলংকা হয়ে গেছে – গোলাম মোহাম্মদ কাদের
সবার অজান্তেই বাংলাদেশ এখন শ্রীলংকা হয়ে গেছে - গোলাম মোহাম্মদ কাদের
apps

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, সবার অজান্তেই বাংলাদেশ এখন শ্রীলংকা হয়ে গেছে। আমরা আগেই বলেছিলাম, দেশ শ্রীলংকার দিকে যাচ্ছে। তখন শ্রীলংকা তেল ও কয়লা কিনতে পারেনি, বিদ্যুত কেন্দ্র চালাতে পারেনি। আমদানী করতে পারেনি, কলকারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তাদের জিনিস-পত্রের দাম হুহু করে বেড়েছিলো। ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। আমরা শ্রীলংকাকে দেউলীয়া বলেছিলাম। তখন সারাবিশ্বের মতই আমরা শ্রীলংকা নিয়ে চিন্তিত হয়েছিলাম। এখন তো আমাদের অবস্থাও তাই। বিদ্যুত নেই, জিনিস-পত্রের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চেয়ে অনেক কম। এখন শ্রীলংকার চেয়ে বাংলাদেশে পণ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি। সবার আয় কমে গেছে। জিনিস-পত্রের দাম বেড়েই চলছে, এটাই শ্রীলংকা। সরকার বলে, ঋণ পরিশোধে আমরা ব্যর্থ হয়নি। যদি আপনারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ না হন, তাহলে আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস কেন বলে বাংলাদেশে ঋণ দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে। বাকিতে মালামাল কিনে সরকার দেশের মানুষের মাথায় বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।

আজ দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।

জাতীয় যুব সংহতির আহবায়ক এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ এর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, শ্রীলংকা আর আমাদের মধ্যে তফাত হচ্ছে, শ্রীলংকার মানুষ দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমেছে। শ্রীলংকার মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নামেনি, বিক্ষোভ করেনি। কারণ, শ্রীলংকার পুলিশ আন্দোলনকারীদের গুম করেনি, লাঠিচার্জ করেনি এবং গুলিও করেনি। সে দেশের পুলিশ আন্দোলনকারীদের দেশের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেছে। শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় কাজ করেছে সেদেশের পুলিশ। বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নামেনি দুটি কারণে, এক. তারা জানেনা দেশ শ্রীলংকা হয়ে গেছে। দুই. রাস্তায় নামলে তাদের কী হবে তা কেউ জানে না। রাস্তায় নেমে আন্দোলন করলে জনগণ বাঁচতে পারবে কিনা, ব্যবসা নিয়ে টিকতে পারবে কিনা এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে শংকিত সবাই। আন্দোলন করলে তাদের ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে ভিত হয়ে পড়েছে দেশের মানুষ। আমরা কি বৃটিশ আমলে আছি? পাকিস্তান আমলে আছি? আমাদের টাকায় বন্দুক কিনে পুলিশ আমাদের বুকে গুলি চালায়। শ্রীলংকার সাথে আমাদের পার্থক্য একটাই শ্রীলংকার মত জনগণ মঠে নামেনি, কারন আন্দোলন করলে জবাই করার জন্য পুলিশ রেডি হয়ে আছে। আমরা দেশকে শ্রীলংকা হতে দেবো না। যারা দায়ি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাই।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, দেশের মানুষ চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছে। দেশের মানুষ যেনো দোজখের আগুনে পুড়ছে। শারিরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে দেশের মানুষ বিপর্যস্ত। রিজার্ভ নেই তাই বিদেশে বাংলাদেশীরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে ডলার তুলতে পারে না। অপরদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন তিন থেকে চার মাস চলার মত রিজার্ভ আছে। সরকারের কাছে সমস্যা নাও থাকতে পারে কিন্তু সারাদেশবাসী বিরাট সমস্যায় পড়েছে। টাকা থাকলে তেল, কয়লা কিনছেন না কেন? সাধারণ মানুষকে বিদ্যুত দিতে পারছেন না কেন? কালকারখানা কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানী করতে দিচ্ছেন না কেন? তিন-চার মাসের রিজার্ভ থাকলে এমন অবস্থা হবে কেন? ঋণ নির্ভর বাজেট করার কারণে দেশের মানুষকে ট্যাক্সের ফাঁদে ফেলে শোষণ করা হচ্ছে। অপরদিকে সারাবিশ্ব থেকে ঋণ এনে সেই টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।

এসময় গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, আমরা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। আমরা কোথায় যাই, কি করি তা প্যাগাসাস দিয়ে অনুসরণ করা হয়। ফাঁদ পেতে আমাদের ছবি তুলতে চেষ্টা করা হয়। যারা কানাডায় বাড়ি তৈরী করে, যারা দুবাইতে ব্যবসা খোলে তাদের পিছনে গোয়েন্দা লাগান না কেন? জিএম কাদের কি সহিংসতার সাথে জড়িত? আমাদের ভয় পাচ্ছেন কেন? আমরা তো জনগণের পক্ষে কাজ করছি। হাজার বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। দেশের মানুষ বৈষম্য, স্বৈরতন্ত্র, অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে মুক্তি চেয়েছিলো। একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে কিন্তু দেশের মানুষ মুক্তি পায় নি। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ করেছি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করিনি। এখনো স্বৈরশাসন আছে, নির্যাতন-নিপিড়ন আছে। দেশের মালিকানা আমাদের হাত ছাড়া হয়ে গেছে, গণতন্ত্র হাতছাড়া হয়ে গেছে। স্বৈরশাসন এসেছে অজান্তে, এক ব্যক্তি শাসন এসেছে সবার অজান্তে। সবার অজান্তে এক ব্যক্তি ও এক দলের শাসন এসেছে দেশে। এখন “আওয়ামী লীগ প্লাস” দেশ চালাচ্ছে।

এখন পুলিশ প্রশাসনসহ সবাই আওয়ামী লীগের কথা বলে। তারা দেশ ও দেশের মানুষের কথা বলে না। বিদ্যুত উৎপাদন ও মেগা প্রকল্প থেকে টাকা লুটপাট করে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। আর এ কারনেই স্যাংশন ও ভিসা নীতির কথা এলেই তারা ঘাবড়ে যায়। কারণ, ইউরোপ-আমেরিকায় তাদের বাড়ি-ঘর আছে, সম্পদ আছে। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে তা বাংলাদেশের মানুষের উপকারে আসবে।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, দেশের মানুষ আমাদের বিশ^াস করেনা, তারা মনে করছে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় নিতে আমরা নাটক করছি। কারণ, আমাদের কিছু মানুষ দুই নৌকায় পা দিয়ে আছে। আমাদের ভয় দেখাচ্ছে, আমাদের লাঙল নিয়ে যাবে, আমার চেয়ারম্যান পদ কেড়ে নেয়া হবে। আমরা লাঙল বা চেয়ারম্যান পদ পাওয়ার জন্য লালায়িত নই। মানুষের অন্তরে আমরা স্থান করে নিতে চাই। কে কি করলো, কি করবে তাতে আমরা ভিত নই। একক হলেও আমি দেশের মানুষের সাথে থাকবো। দল নিয়ে বেচাকেনা করতে দেয়া হবে না। যারা জাতীয় পার্টিতে থেকে আরেক দলের কথা বলেন তাহলে সেই দলে চলে যেতে পারেন। নেতা-কর্মীদের এত ত্যাগ অথচ কয়েকজন মানুষের জন্য আমরা দালাল পার্টি হিসেবে পরিচিত হচ্ছি। যারা দালালী করবেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্মেলনে মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, বিদ্যুত উৎপাদন খাতে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ১২ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীদের মাঝে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ পর্যন্ত আর কত টাকা পাচার হয়েছে তা এখনো অজানা। তিনি বলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপরীতে জাতীয় পার্টি গণমানুষের আস্থা অর্জন করে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আর্বিভূত হতে পারবে।

কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, পল্লীবন্ধুর সমালোচনা করতে অনেকেই বলেন, সেনা ছাউনি থেকে রাজনীতিতে এসেছেন। দেশের জন্য যারা বড় বড় অবদান রেখেছেন তাদের অনেকেই সেনা ছাউনী থেকে এসেছেন। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে সেনা কর্মকর্তারাই সেক্টরের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আবার মাঠের মূল নেতৃত্ব ছিলো জেনারেল ওসমানীর হাতেই। তিনি বলেন, পল্লীবন্ধুর স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমরা কাজ করছি।

কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, রাজনীতির আকাশে ঘণ কালো মেঘ জমেছে। সবাইকে সুশৃংল থেকে রাজনীতি করতে হবে। তিনি বলেন, যুব সংহতিকে দায়িত্ব নিয়ে পার্টি চেয়ারম্যান ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি, ঐক্যবদ্ধ থাকবো।

কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, কোন ষড়যন্ত্রই জাতীয় পার্টির অগ্রযাত্রা রোধ করতে পারবে না। যারা ষড়যন্ত্র করবে তাদের আর ছাড় দেয়া হবে না। জাতীয় পার্টি হচ্ছে দেশের রাজনীতির নিয়ামক শক্তি। জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে কেউই দেশের ক্ষমতায় যেতে পারবে না।

জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে জাতীয় যুব সংহতির আহবায়ক ও ভাইস-চেয়ারম্যান এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ এর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিনের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন – জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব – এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি, সৈয়দ আব্দুল মান্নান, শফিকুল ইসলাম সেন্টু , লেঃ জেঃ (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, নাসরিন জাহান রতনা এমপি, নাজমা আকতার এমপি, আলমগীর সিকদার লোটন, সৈয়দ দিদার বখত, জহিরুল ইসলাম জহির, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান এমপি, হারুন অর রশিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হক, ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমদ, মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, মো: মাশরেকুল আযম রবি, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আরিফুর রহমান খান, সেলিম উদ্দিন, মেজর (অবঃ) আব্দুস সালাম, নিগার সুলতানা রানী, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শেখ মোঃ আলমগীর হোসেন, আহমেদ শফি রুবেল, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, লুৎফর রেজা খোকন, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ফখরুল আহসান শাহজাদা, মোঃ বেলাল হোসেন, মোঃ আমির হোসেন ভূঁইয়া, সালাউদ্দিন খোকা মোল্লা, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য – মোঃ হেলাল উদ্দিন, মোঃ সাইফুল ইসলাম, লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, কাজী আবুল খায়ের, মাখন সরকার, মোঃ মিজানুর রহমান, সুমন আশরাফ, এম এ রাজ্জাক খান, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, শাহাদাত কবির, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, আবুল হাসনাত আজাদ, আসাদুজ্জামান, আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় সদস্য, জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে – মোঃ হেলাল উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম দুলাল, আবু নাসের বাদল, দ্বীন ইসলাম শেখ, শেখ সারোয়ার হোসেন, আলমগীর হোসেন, মাঈনউদ্দিন, নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া, কাজী শাহীন, জি এম শহীদ, শাহীন, এডভোকেট বায়জিদ, এডভোকেট আব্দুল ওয়াহাব, শরিফুল ইসলাম শরিফ, জাফর আহমেদ রাজু, নাজিম, ফরিদ উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, ডেলিগেট কাউন্সিলর ও বিভিন্ন অংগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

Development by: webnewsdesign.com