শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হয়রানি বা হামলার সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে চতুর্থ দিনের অধিবেশন সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) মো. হায়দার আলী খান। বুধবার সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। শাবিপ্রবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগের মধ্যে অন্যতম পুলিশের হামলা ও হয়রানি।
শাবিপ্রবিতে পুলিশের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগে সদর দপ্তর তদন্ত করছে কি না জানতে চাইলে ডিআইজি হায়দার আলী খান বলেন, ‘সদর দপ্তর তদন্ত করছে। তদন্তসাপেক্ষে যদি কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শাবিপ্রবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করার অভিযোগে সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙিয়ে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এমন পরিস্থিতিতে তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি অবশ্যই তদন্তের বিষয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।’
শাবিপ্রবিতে বর্তমান বিব্রতকর পরিস্থিতি সম্পর্কে পুলিশ সদর দপ্তর জানে কি না- সাংবাদিকের করা সম্পূরক আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখানে বিব্রতকর পরিস্থিতি কি না তা পুলিশের বলার কিছু নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়মকানুন আছে। তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে। পুলিশ শুধু আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের আমন্ত্রণেই পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কাজ করে।’
শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ।
এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। ১৯ জানুয়ারি বেলা আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী।
তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। ২৩ জানুয়ারি আরও চারজন ও ২৪ জানুয়ারি একজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। এর মাঝে উপাচার্য ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তবে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না। ২৩ জানুয়ারি দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের আবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে তা না হওয়ায় তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধের ঘোষণা দেন।
ওই দিন রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অবরুদ্ধ উপাচার্যের জন্য প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির নেতা ও দুজন কাউন্সিলর খাবার নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের বাধায় তারা বাসভবনে ঢুকতে পারেননি। ২৮ ঘণ্টা পর ২৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেন তারা।
এক সপ্তাহ অনশন করার পর অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী সাবেক অধ্যাপক ইয়াসমিন হক বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।
Development by: webnewsdesign.com