রাবির সংঘর্ষে হাসপাতালে ৮৯ জনের ৮৬ জনই শিক্ষার্থী, আইসিইউতে ১

রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩ | ৪:৫০ অপরাহ্ণ

রাবির সংঘর্ষে হাসপাতালে ৮৯ জনের ৮৬ জনই শিক্ষার্থী, আইসিইউতে ১
রাবির সংঘর্ষে হাসপাতালে ৮৯ জনের ৮৬ জনই শিক্ষার্থী, আইসিইউতে ১
apps

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ৮৯ জন আহত হয়ে হাসপাতালে যান, যাঁদের মধ্যে ৮৬ জনই রাবি শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে রাবি শিক্ষার্থী রাকিব আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্য তিনজনের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য এবং একজন সাধারণ পথচারী।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহামুদুল হাসান ফিরোজ আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সংঘর্ষ শুরু হলে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকেই আহতরা হাসপাতালে আসতে থাকেন। সারা রাতে মোট ৮৭ জন হাসপাতালে আসেন। এ ছাড়া রাতে আহত হয়ে আরও দুজন আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে হাসপাতালে আসেন।

তিনি আরও জানান, বেশির ভাগ রোগীই এসেছেন মাথায় জখম নিয়ে। ৮৯ রোগীর মধ্যে ৪৫ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি ৪৪ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। যাঁরা ভর্তি আছেন তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা একটু বেশি খারাপ হওয়ায় রাকিব আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

রাবির ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূর জানান, মো. রাকিব (২৮) নামের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক মাস্টার্সের শিক্ষার্থীকে রাতেই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে সাতজন চোখে আঘাত পেয়েছেন। এর মধ্যে একজন রাবার বুলেটের আঘাত পেয়েছেন। বাকিদের চোখে ইটের আঘাত লেগেছে। এদের কয়েকজনের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।

গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতানুল ইসলাম দাবি করেন, সংঘর্ষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে বিনোদপুর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীকেও আহত হতে দেখা গেছে। তবে তারা কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তা জানা যায়নি।

গতকাল সন্ধ্যায় বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়িচালক শরিফুল ও তাঁর সহযোগী রিপনের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিনোদপুর বাজারে বাস থেকে নামার সময় তাদের আবারও কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় বাসের ভেতরেই শিক্ষার্থীরা চালক ও হেলপারকে মারছিলেন। পরে বাস থেকে নামিয়েও তাঁদের মারধর করা হচ্ছিল।

এ সময় বিনোদপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী বাস চালকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। এ সময় ব্যবসায়ীরা তাঁর মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করেন। ধাওয়া দিয়ে তাঁকে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতেই ঘটনা বড় হয়ে যায়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল থেকে বের হয়ে বিনোদপুর গেটের পাশে অবস্থান নেন। আর ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেন রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারে।

তখন এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর রাতে অন্ধকারের বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তখন শত শত শিক্ষার্থীর মধ্যে পড়া ইটের আঘাতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে বিনোদপুর বাজারের দিকে অসংখ্য পেট্রল বোমা উড়ে আসতে দেখা যায়। ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলো থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও লাঠিসোঁটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিতে দেখা যায়। পরে বিনোদপুর বাজারের বেশ কিছু দোকানপাট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আহত হন অন্তত ১০ জন। আহতদের মধ্যে ক্যাম্পাসে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিকও আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রæশাসনের পক্ষ থেকে আহতের সংখ্যা দুই শতাধিক দাবি করা হয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সন্ধ্যার পরেই ঘটনাস্থলে যান বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া তাঁরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোনো চেষ্টা করেননি। রাত ৮টার দিকে বিনোদপুর গেটের পাশে থাকা পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিনোদপুর বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মুহূর্তেই বিনোদপুর বাজারে সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। পরে আসে র‌্যাবের ১২০ জন সদস্য। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাত প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরে রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রাত ২টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তবে ক্যাম্পাস এবং বিনোদপুর বাজারে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিনোদপুর বাজারে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারের সামনে দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে রেললাইনের ওপর অবস্থান নেন। ফলে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া অন্য সব জেলার ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রাতে রাজশাহী থেকে ঢাকামুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যেতে পারেনি সময়মতো।

রাত ১১টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্য রাজশাহী ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। রেললাইন অবরোধ থাকায় ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি মেইল ট্রেন নাটোরের আবদুলপুর জংশনে আটকে থাকে। অবরোধ তুলে নিলে রাত ৩টার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, ‘গতকাল রাত ৩টার পর ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। তবে আজ রোববার সকাল থেকে সব গন্তব্যের ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে।’

Development by: webnewsdesign.com