যুক্তরাষ্ট্রে মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণে এক শিশুর মৃত্যু

মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩:০২ অপরাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রে মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণে এক শিশুর মৃত্যু
apps

কলের পরিষ্কার জলই খেয়েছিল ছেলেটা। প্রথমে কিছু বোঝা যায়নি। কিন্তু পরে ভয়ঙ্কর মাথা যন্ত্রণা আর জ্ঞান হারানোর পরে হাসপাতালে নিয়ে যেতেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়। ডাক্তাররা জানান, জলের সঙ্গেই অ্যামিবা ঢুকে গেছে শরীরে এবং সটান পৌঁছে গেছে মস্কিষ্কে। মাথার ভেতরের স্নায়ুকোষ প্রায় ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে। বাঁচানো যায়নি শিশুটিকে।

ঘটনা গত ৮ সেপ্টেম্বরের। শিশুটি আমেরিকার টেক্সাসের বাসিন্দা। পরিবার জানিয়েছে, বাগানে খেলা করতে করতে কলের জল খেয়েছিল বাচ্চাটা। তারপরেই জ্ঞান হারায়। কলের জলে এককোষী প্রাণীর নমুনাও পাওয়া গেছে বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনার পরেই হইচই শুরু হয়ে যায় হাউস্টনের টাউন সেন্টারে। শহরের একটি ফোয়ারার জলেও অ্যামিবার খোঁজ মেলে। জরুরি অবস্থা জারি করে সকলকে কলের জল খেতে নিষেধ করেন টেস্কাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট।অ্যামিবা হল এককোষী প্রাণী। খালি চোখে দেখা যায় না এই প্রাণীকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অ্যামিবা হল থার্মোফিলিক, উষ্ণ প্রস্রবণ বা গরম জলে এই প্রাণীকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। সাধারণত পরিষ্কার জলেই অ্যামিবার বাস। জলের উষ্ণতা যত বাড়বে অ্যামিবার সংখ্যাও ততই বৃদ্ধি পাবে। টেক্সাসের শিশুটির মস্তিষ্কে যে অ্যামিবা পাওয়া গেছে তাকে বলে মগজ খেকো অ্যামিবা।

বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম নাইগ্লেরিয়া ফোলেরি। নদী, পুকুর হ্রদ থেকে সুইমিং পুল, যে কোনও জলেই এদের অবাধ বাস। আর আগেই বলা হয়েছে জল যদি উষ্ণ হয় তাহলে দ্রুত কোষ বিভাজন ঘটিয়ে এই অ্যামিবারা সংখ্যায় বাড়তে পারে। তাছাড়া শিল্পাঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায়, দূষিত জলেও দেখা মেলে এদের। দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করা সুইমিং পুল বা ক্লোরিনেটেড নয় এমন বদ্ধ জলে দ্রুত ছড়ায় মগজ-খেকো অ্যামিবারা।

Brain-Eating Amoeba বা নাইগ্লেরিয়া ফোলেরির বৈশিষ্ট্য হল এই একখোষী প্রাণী নাক দিয়ে ঢুকে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। তারপর স্নায়ুকোষকে টার্গেট করে। কোষ বিভাজন ঘটিয়ে সংখ্যায় বেড়ে স্নায়ুকোষের দফারফা করে দেয়। প্রচণ্ড সংক্রামক এবং দ্রুত কোষে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই এককোষী প্রাণী।

দ্রুত অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ড্রাগ না দিলে মস্তিষ্কের কোষ ছিঁড়েখুঁড়ে দেয় এই প্রাণীরা। এই সংক্রমণে যে রোগ হয় তাকে বলে নাইগ্লেরিয়াসিস বা প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফেলাইটিস (PAM)। এর উপসর্গ হল জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশির খিঁচুনি, হাইপারথারমিয়া, হ্যালুসিনেশন।বছরের ছয়েকের শিশুটির মস্তিষ্কে অ্যামিবা সংক্রমণে নাইগ্লেরিয়াসিস রোগই হয়েছিল বলে মনে করছেন ডাক্তাররা। খুব দ্রুত সেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে যে কারণে শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

১৯৮৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এমন মগজ খেকো অ্যামিবার সংক্রমণে প্রায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানিয়েছে টেক্সাসের স্বাস্থ্য দফতর।

Development by: webnewsdesign.com