মোহাম্মদপুর-আদাবরের কিশোররা এখন আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী

সোমবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২১ | ১২:৫৫ অপরাহ্ণ

মোহাম্মদপুর-আদাবরের কিশোররা এখন আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী
apps

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একের পর এক অভিযানের পরও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য থামছে না। তুচ্ছ কারণে তারা খুনাখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে কিশোর-তরুণরা আন্ডারওয়ার্ল্ডে নাম লেখাচ্ছে। তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাদের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ করছেন বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী নবিউল ইসলাম নবী। মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। আর চাঁদার একটি অংশ নবীর কাছে চলে যাচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, রাজধানীর অপরাধ জোনগুলোর মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকা। এ এলাকার ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বাড়ি দখল, জমি দখলে একাধিক বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। এসব বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য কিশোর। তারা মাদক ব্যাবসা ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা তাদের মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অস্ত্র-গুলি ও মাদক বেচাকেনা, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন জলদস্যু কবির বাহিনী ও লম্বু মোশারফ বাহিনীর সদস্যরা। জলদস্যু কবির বাহিনীর প্রধান মো. কবির। তার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন থানায় দুই ডজন মামলা রয়েছে। তার অন্যতম সহযোগী লতিফ ও নাজমুল। তাদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া কিশোররা। লম্বু মোশারফের বিরুদ্ধে অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। র‌্যাবের হাতে তিনি দুবার গ্রেফতারও হন। জামিনে বেরিয়ে তিনি আবারো একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।

মোহাম্মদপুরের ভূমিদস্যু হিসেবে খ্যাত মনির বাহিনী। মনিরুজ্জামান মনির এ বাহিনীর প্রধান। ৫ নভেম্বর এক সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তার দলেও অনেক কিশোর নাম লিখিয়েছে। তাদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী নবীর নামে চাঁদা তোলেন শিরু মিয়া। চাঁদা তুলে আত্মসাৎ করায় শিরুকে খুনের পরিকল্পনা করেন নবী। অনুগত কয়েকজন তরুণকে দিয়ে নবী খুনের মিশন বাস্তবায়ন করেন। ধীরে ধীরে তারাও খুনি হয়ে উঠেছেন। মোহাম্মদপুর ও আদাবরে অনেক কিশোর আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী হিসেবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

জানা গেছে, শিরু হত্যায় জড়িত সবাই তরুণ। তাদের আলাদা আলাদা পেশা রয়েছে। পেশার আড়ালে তারা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেন। তাদের মধ্যে মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ে কাজ করেন অহিদুর, অটোরিকশা চালান সুজন, টাইলস মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন সজীব, স্যানেটারি দোকানের কর্মচারী সুমন এবং গাড়ি চালান তানভীর। পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের এডিসি মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে তথ্য পেলেই অভিযান চালানো হচ্ছে। এখন এ এলাকায় আগের মতো কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য নেই।

পুলিশ জানায়, মোহাম্মদপুর চাইল্ড হ্যাভেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মহসিন আলী স্থানীয় কিশোর গ্যাং ‘আতঙ্ক গ্রুপের’ সদস্য ছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্যাং থেকে মহসিন সরে এলে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ১৩ কিশোরের বিরুদ্ধে তার বড় ভাই ইউসুফ আলী মামলা করেন। গ্রুপের সদস্যরা মোহাম্মদপুরের চানমিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় শক্তি প্রদর্শন, মাদক ব্যবসা, শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত, চাঁদাবাজি করে। নিজেদের মধ্যেও তারা দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকে।

একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, মোহাম্মদপুর এলাকায় অন্তত সাতটি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-গ্রুপ টোয়েন্টিফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপাইয়া দে ও ঝিরঝির গ্রুপ নামের গ্যাং।

বিভিন্ন সময় মোহাম্মদপুর থেকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। গত বছরের জুনে বিভিন্ন গ্যাংয়ের ২২ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মাদকসেবন, মাদক ব্যাবসা, ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ২২ জনের মধ্যে আটজন বিভিন্ন গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তারা পড়ালেখা করে না। এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত তাদের কয়েকজন খুবই দুর্ধর্ষ। শাকিল, অভিক, ডিকে সানি, জিসান, হৃদয়, নাঈম, মানিক ও মীম ‘লাড়া দে’ ও ‘লেভেল হাই’-এর সদস্য।

গত বছরের মার্চে দুই দল কিশোরের সংঘর্ষের সময় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে রামদা, চাপাতি, কিরিজ উদ্ধার করা হয়। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লাউতলা বস্তি ও বোর্ডগার্ড বরকত মিয়ার বস্তির কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষ হয়।

র‌্যাব-২-এর কর্মকর্তা মেজর মীর্জা আহমেদ সাইফুর রহমান বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে আমরা সব সময় সতর্ক আছি। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে তাদের কার্যক্রম নজরদারি করা হয়। অপরাধমূলক কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

Development by: webnewsdesign.com