মিয়ানমার জান্তার ‌‘মনোবল ভেঙে যাওয়ার’ বর্ণনা দিলেন বিদ্রোহীরা

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৬:৪৫ অপরাহ্ণ

মিয়ানমার জান্তার ‌‘মনোবল ভেঙে যাওয়ার’ বর্ণনা দিলেন বিদ্রোহীরা
apps

একের পর এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলা ও প্রতিরোধের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশটির রাজধানী নেপিডোতে ব্যাপক আকারে হামলা চালায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)।

এর তিনদিন পর থাইল্যান্ড সীমান্তের সঙ্গে লাগোয়া গুরুত্বপূর্ণ শহর মায়াওয়ারি দখলে নেয় আরেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ)। এর আগের বছর চীনা সীমান্তে বিদ্রোহীদের কাছে মিউজ শহরের নিয়ন্ত্রণ হারায় জান্তা বাহিনী। ফলে ২০২১ সালের পর সামরিক জান্তা বাহিনীর সবচেয়ে ভঙ্গুর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ এপ্রিল কেএনইউ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে মায়াওয়ারি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারায় দেশটির সামরিক জান্তা। বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে জান্তা বাহিনীর লড়াইয়ের দগদগে ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে শহটির পরিত্যক্ত বাড়িগুলো। শহরজুড়ে বাড়ির দেয়ালে বুলেটের গর্ত, বিমান হামলা ও কামানের গোলায় ক্ষতবিক্ষত গ্যাস স্টেশন, ভবনসহ বহু গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা।
বিদ্রোহীদের ভাষ্য মতে, মায়াওয়ারি শহরে জান্তা বাহিনী বিদ্রোহীদের একের পর এক হামলায় অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়ে। তারা এতটায় অসহায় ছিল যে শেষ পর্যন্ত শহরটি দখলে রাখতে একেবারে ইচ্ছুক ছিল না।

লড়াইয়ে জান্তার মনোবল ভেঙে যাওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন বিদ্রোহীরা। একটি বিদ্রোহী ইউনিটের কমান্ডার সাও কাও বলেন, ‘আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনটি ঘাঁটি দখল করতে এবং এলাকাটি নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছি। তারপর, তারা পালিয়ে যায়।’

মূলত এপ্রিলের শুরুতে কেএনইউ এর নেতৃত্বে জান্তা বাহিনী অবরোধের মুখে পড়ে। তখন থেকে যোদ্ধারা একপেশে হয়ে পড়ে। মায়াওয়ারি শহরের পতনের মধ্য দিয়ে দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্থল সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ হাত ছাড়া হয়েছে মিয়ানমার সরকারের। গত বছর চীনা সীমান্তের কাছে মিউজের নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা। এই স্থল সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের বার্ষিক ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য হতো।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একের পর এক সাফল্যে দেশটির প্রধান প্রধান স্থলবন্দর থেকে ব্যাপক হারে রাজস্ব আয় কমেছে জান্তা সরকারের। ২০১৭ সাল থেকে অর্থনৈতিক পতন এবং দারিদ্র্য দ্বিগুণও হয়েছে।

থাইল্যান্ড-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি-মিয়ানমার (আইএসপি) থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক বলেছে, মায়াওয়ারি শহরের পতনের পর জান্তা সরকার ভূমি-ভিত্তিক শুল্ক রাজস্বের ৬০ শতাংশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, মায়াওয়ারর নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর থাই সরকার নতুন করে পরিকল্পনা প্রণয়নে মনোনিবেশ করেছে, যারা আগে জান্তা বাহিনীকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছে।

থাই ভাইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাস্ক ফুয়াংকেটকিও বুধবার রয়টার্সকে বলেন, থাই নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কেএনইউ এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কারণ আমরা অন্ধভাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর পাশে নেই কিন্তু শান্তি চাই। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে।

জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং মায়ানমারের ঐক্য ক্ষুণ্ণ করার জন্য সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে অভিযুক্ত করেছেন। এমনকি তার সরকার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেছে।

জান্তা বাহিনী ত্যাগের পরও মায়াওয়ারি শহর এবং এর আশপাশের কিছু অংশে টহল দিচ্ছে ডেমোক্র্যাটিক কারেন বৌদ্ধ আর্মি এবং কারেন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com