মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে তারা বসবাস করে। আবার তারা একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে নির্ভরশীল ব্যক্তিকে উপকারীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা উচিত। কোনো মানুষ উপকার করলে তাকে প্রতিদান দেওয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ ছিল। এ সম্পর্কেই হাদিসে এসেছে, ইমরান বিন হুসায়ন (রা.) বলেন, কোনো এক সফরে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা রাতে পথ চলছিলাম। প্রভাতের নিকটবর্তী সময়ে আমরা এক মনজিলে অবতরণ করলাম। আমাদের চোখ ঘুমে বুজে গেল, এমনকি সূর্য উঠে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের মধ্যে আবু বকর (রা.) সর্বপ্রথম জেগে উঠলেন। আমাদের অভ্যাস ছিল যে যখন নবী করিম (সা.) ঘুমাতেন তখন ঘুম থেকে তাঁকে জাগাতাম না, যতক্ষণ না নিজে জেগে উঠতেন। এরপর ওমর (রা.) জেগে উঠলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে উচ্চৈঃস্বরে তাকবির দিতে লাগলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ (সা.) জেগে উঠলেন। মাথা তুলে দেখতে পেলেন যে সূর্য উদিত হয়েছে।

তিনি বললেন, তোমরা চলো। তখন তিনি আমাদের নিয়ে চললেন। যখন সূর্যের আলো পরিষ্কার হয়ে গেল তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। লোকদের মধ্য থেকে একজন আলাদা রইল। সে আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় করল না। সালাত শেষ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! কিসে তোমাকে আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় থেকে বিরত রাখল? সে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমি অপবিত্র হয়ে গেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে মাটি দ্বারা তায়াম্মুমের আদেশ করলেন। সে মাটি দ্বারা তায়াম্মু করে সালাত আদায় করল।

এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) কয়েকজন আরোহীসহ আমাকে পানির তালাশে আগে পাঠিয়ে দিলেন। আমরা ভীষণ পিপাসিত ছিলাম। আমরা যখন পথ চলছিলাম, তখন আমরা এক নারীকে দেখতে পেলাম। সে উটের পিঠে দুটি পানির মশকের মধ্যে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, পানি কোথায় আছে? সে বলল, অনেক অনেক দূরে, তোমরা পানি পাবে না। আমরা বললাম, তোমার বাড়ি থেকে পানির স্থানের দূরত্ব কতটুকু? সে বলল, এক দিন ও এক রাতের পথ। আমরা বললাম, তুমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে চলো। সে বলল, রাসুলুল্লাহ কে? আমরা তার সঙ্গে আর কথা না বাড়িয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে চললাম এবং তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে নিয়ে গেলাম। তিনিও তাকে জিজ্ঞেস করলেন। সে তাঁর কাছে সেরূপই বলল, যেরূপ আমাদের কাছে বলেছিল। সে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এও জানাল যে সে একজন বিধবা, তার কয়েকজন এতিম বাচ্চা রয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তার পানিবাহক উটটি সম্পর্কে নির্দেশ দিলে সেটি বসানো হলো। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) মশক দুটির ওপরের মুখ দুটিতে পানি ঢেলে দিলেন। এরপর আমরা ৪০ জন তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলাম এবং আমাদের সঙ্গে যে মশক ও পাত্র ছিল, তা ভরে নিলাম। আমাদের সেই সঙ্গীটিকেও গোসলের পানি দিলাম। সেও ভালোভাবে গোসল করল। তবে আমাদের উটগুলোকে পানি পান করাইনি। এদিকে মশক দুটি পানিতে ফেটে পড়ার উপক্রম হচ্ছিল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বললেন, তোমাদের সঙ্গে যার যা আছে নিয়ে এসো। আমরা তাঁর জন্য রুটির টুকরা ও খেজুর একত্রিত করলাম। আর তাঁর জন্য এগুলো একটি পোঁটলায় বেঁধে দেওয়া হলো। ওই নারীকে বললেন, তুমি যাও আর এগুলো তোমার পরিবারকে এবং তোমার এতিম বাচ্চাদের খাওয়াও। আর জেনে রেখো, আমরা তোমার পানি হ্রাস করিনি। তারপর সে যখন তার পরিবারের কাছে এলো তখন বলল, আমি আজ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় জাদুকরের সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম। অথবা তার ধারণা অনুযায়ী, তিনি নবী। তার ব্যাপার ছিল এইরূপ, এইরূপ। ফলে আল্লাহ তাআলা ওই নারীর বদৌলতে তার গোত্রটিকে হিদায়েত করলেন। ওই নারী ইসলাম গ্রহণ করল এবং তারাও ইসলাম গ্রহণ করল। (মুসলিম, হাদিস : ৬৮২)

আমাদের উচিত উপকারীর উপকার অকপটে স্বীকার করা এবং তাকে সাধ্যমতো প্রতিদান দেওয়া। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।