মরিচের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে নেই হাসি

রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

মরিচের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে নেই হাসি
apps

জামালপুর জেলার সাত উপজেলায় মরিচের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকের মুখে কিছুটা হাসি ফুটে উঠলেও বাজারে মরিচের দাম কম থাকায় কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। জামালপুর সদর উপজেলাসহ মেলান্দহ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ শাখাওয়াত ইকরাম বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে মরিচ আবাদ হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং উন্নত জাতের মরিচের আবাদ হওয়ায় চলতি মৌসুমে জেলায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, জেলার বাজারগুলোতে এরই মধ্যে বিক্রির জন্য নতুন মরিচ উঠতে শুরু করেছে। বিঘা প্রতি মরিচ আবাদে কৃষদের ১২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে বলেও তিনি জানান। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা, চলতি মৌসুমে চাষিদেরকে উন্নত জাতের মরিচ আবাদে সহায়তা করায় মরিচের ভালো ফলন হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৮ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৯৮৫ হেক্টর। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে কিছুটা কম।

তবে চাষিরা চলতি মৌসুমে উন্নত জাতের মরিচের আবাদ করায় মরিচ উৎপাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছেন তারা। স্থানীয় কৃষকেরা জানান- শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এবার মরিচ চাষে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা লাভের আশায় চাষিরা এখন তাদের মরিচগুলো ক্ষেত থেকে উঠিয়ে বিক্রি শুরু করেছে। তবে বাজারে মরিচের দাম বেশ কম বলেও জানান তারা। ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের চাষি মসিউর রহমান বাদল জানান, এ বছর চার বিঘা জমিতে তিনি মরিচ চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি জানান, অন্যান্য বছর প্রতিবিঘা জমির মরিচ কৃষকের কাছ থেকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় ক্রয় করে নেয় পাইকাররা। তবে এ বছর এখনও পাইকার আসতে শুরু করেননি। তিনি বলেন, মরিচ কাঁচা বেচতে না পারলে পাকা করে বিক্রি করবেন। তিনি বলেন, চলতি বছর প্রতিবিঘা জমি চাষ করতে তার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা খরিদদাররা মরিচ কিনে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মরিচের দাম ভালো না থাকায় অনেক কৃষকই বাজারে মরিচ তুলছেন না বলে জানা গেছে। জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া কালীবাড়ী বাজার কাঁচামরিচের জন্য বিখ্যাত। সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার এ দু’দিন হাট বসে এখানে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা মরিচ কেনার জন্য এ হাটে আসেন। সিরাজগঞ্জ থেকে এই হাটে মরিচ কিনতে আসা পাইকার মুয়াজ্জেম হোসেন জানান, বছরের ৬ মাস এ হাট থেকেই মরিচ কিনেন তিনি। জামালপুর সদর উপজেলা মেষ্টা ইউনিয়নের আড়ংঘাটি গ্রামের কৃষক মুখলেছুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি মরিচ ১৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। জামালপুর সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামের কৃষক মো. ফজলুর রহমান আকন্দ বলেন, কাঁচামরিচের দাম কম থাকায় বাজারে মরিচ বিক্রি না করে পাকা মরিচ সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে শুকনা মরিচ হিসেবে বেশি দামে বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। চলতি মৌসুমে জামালপুর সদর উপজেলার হাজীপুর, কেন্দুয়া, ভাটারাসহ জেলার সবগুলো উপজেলায় মরিচের ব্যাপক চাষ হয়েছে। তবে কৃষকদের অভিযোগ, সার, বীজ, কীটনাশক এবং শ্রমিক খরচ মিটিয়ে বাজারে যে দামে মরিচ বিক্রি হচ্ছে তাতে তাদের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় আর খোলা বাজারে ৪০ টাকা দরে। জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নিতাই চন্দ্র বণিক বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং উন্নত জাতের মরিচের আবাদ হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে। মরিচ বিক্রি করে এ বছর কৃষকেরা বেশ লাভবান হবেন বলেও তিনি জানান।

 

Development by: webnewsdesign.com