ভগবানের বিগ্রহ সেবা করবেন কেন?

শনিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২০ | ৬:৩২ অপরাহ্ণ

ভগবানের বিগ্রহ সেবা করবেন কেন?
apps

️এই জড়জগতে আমরা পতিত জীব হওয়ার দরুন কেউই সরাসরি ভগবানকে দর্শন, স্পর্শনবা তার সেবা করতে পারি না, কিন্তু আমাদের পরিশুদ্ধিতার জন্য ভগবানের সেবা করাওআবশ্যক। তাই ভগবান অত্যন্ত করুণা করে তার অভিন্ন বিগ্রহরূপে নিজেকে প্রকাশ করেন ।যেন আমরা তার সেবা করার সৌভাগ্য লাভ করতে পারি । দেবদেবীর ক্ষেত্রেও আমরা তা করতেপারি ।

বিগ্রহসেবা করতে করতে কারাে চেতনা যখন সম্পূর্ণরূপে নির্মল হবে , যখন সতঃস্ফূর্তভাবেভগবানের সেবার প্রতি আগ্রহী হবেন , তখন তিনি সরাসরি ভগবানের সেবা করার সুযােগলাভ করবেন । ভগবানের অনুমােদিত বিগ্রহের সেবা করার ক্ষেত্রে ভক্ত বিগ্রহকে সাক্ষাৎভগবান জ্ঞানেই সেবা করেন ।

বিগ্রহ যদি সাক্ষাৎ ভগবান বা দেবতাই হন , তবে তাদের নিশ্চয়ই কিছু অলৌকিক ক্ষমতাথাকবে, তাই তার কয়েকটি সত্যি লীলা তুলে ধরছি যেমন,
️জড় ভরতকে রক্ষাঃ
শ্রীমদ্ভাগবতের ৫ম স্কন্ধের ৯ম অধ্যায়ে বর্ণিত আছে , একসময় এক দস্যুসর্দার পুত্র কামনায়দেবী ভদ্রকালীর বিগ্রহের সামনে শাস্ত্রবিধি লঙ্ঘন করে কল্পিতবিধি অনুসারে ব্রাহ্মণকুলােদ্ভূতআত্মতত্ত্ববেত্তা জড়ভরতকে নরপশুরূপে বলি দিতে উদ্যত হয়েছিল । ভগবানের এমন মহানভক্তের প্রতি এ অন্যায় । আচরণ সহ্য করতে না পেরে দেবী ভদ্রকালী সহসা প্রতিমা বিদীর্ণ করেস্বয়ং প্রকাশিতা হলেন । ভয়ংকর উগ্রমূর্তি ধারণ করে বেদী থেকে নেমে এসে যে খড়গের দ্বারাদস্যুরা জড়ভরতকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল , সেই খড়গ দ্বারাই সেই দস্যু ও তস্করদের মস্তকছেদন করেছিলেন ।

️জগন্নাথদেব ও বন্ধুমহান্তিঃ
উড়িষ্যার যাজপুরে বন্ধু মহান্তী নামে জগন্নাথের এক পরম ভক্ত ছিলেন , যিনি জগন্নাথদেবকেইতাঁর পরম বন্ধু বলে মনে করতেন । দুই কন্যা ও এক পুত্রসহ অনুগত পত্নী নিয়ে তার সংসারচলত ভিক্ষাবৃত্তি করে । একসময় দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে জগন্নাথের ওপর ভরসা করে মহান্তীতাঁর পরিবারসহ পুরী ধামে যান । তাৎক্ষণিক ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য তারা জগন্নাথ মন্দিরেররান্নাঘরের ড্রেন থেকে ভাতের মাড় সংগ্রহ করে তা খেয়েই নিদ্রা যান । রাত্রিতে জগন্নাথবিগ্রহস্বয়ং এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশে তার ভােজনের সােনার থালায় নানাবিধ সুস্বাদু প্রসাদ এনে বন্ধুমহান্তীসহ তার পরিবারকে ভােজন করান , কিন্তু থালাটি রেখেই তিনি অন্তর্ধান হয়ে যান ।ভােজনের পর বন্ধু মহন্তী ব্রাহ্মণকে দেখতে না পেয়ে থালাটি কাপড়ে মুড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন এই থালা চুরির দায়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ তাকে ভীষণ প্রহার করে । সেদিন রাতেজগন্নাথদেব উড়িষ্যার রাজাকে স্বপ্নে এসে কঠোরভাবে ভৎসনা করে বলেন যে ,
তােমার বাড়িতে অতিথি এলে তুমি কি তাকে না খাইয়ে রাখবে ?
তােমার প্রাসাদে এমন কেউ কি আছে যে না খেয়ে ঘুমিয়েছে ?
আমার বন্ধু তার পরিবার নিয়ে অনেক দূর থেকে এসেছে । তাকে আমি আমার সােনার থালায়খেতে দিয়েছি , তা কি তােমার পিতার সম্পত্তি ?
অথচ তােমার লােকজন তাকে কত না প্রহার করেছে । আমি তােমাকে আদেশ করছি , তুমিএক্ষুণি পুরীর জেল থেকে তাদের সসম্মানে নিয়ে এসাে , তাদের চরণ ধৌত করাে , উন্নত বস্ত্র ওআভূষণ প্রদান কর এবং সর্বোচ্চ সম্মানের প্রতীকরূপে মাথায় মুকুট পরিয়ে দাও । আজীবনেরজন্য তাদের উন্নত আহার ও বাসস্থানসহ সবধরনের ব্যবস্থা কর । অন্যথায় তােমার সবকিছুধ্বংস করে দেব । ”
তখন রাজা ভগবান শ্রীজগন্নাথদেবের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ভগবান জগন্নাথেরকাছে ক্ষমাভিক্ষা চাইলেন ।

সাধক রামপ্রসাদ ও বামাক্ষ্যাপা ।
দেবী মা কালীর পরম ভক্ত রামপ্রসাদ ভারতবর্ষে অতি পরিচিত নাম । তিনি নিত্য কালীমাতারবিগ্রহের সেবাপূজা করতেন । একদিন রামপ্রসাদ শ্যামাসংগীত গাইতে গাইতে বাড়ির বেড়াবাঁধছিলেন । তখন দেবী কালী বিগ্রহ থেকে প্রকাশিত হয়ে একাকী রামপ্রসাদকে বেড়ার কাজেস্বয়ং সহায়তা করেছিলেন ।
সাধক বামাক্ষ্যাপাও ছিলেন তারামায়ের পরম ভক্ত , যিনি মায়ের বিগ্রহের নিত্য সেবা করতেনএবং তার সাথে কথা বলতেন ।

️শ্রীল মাধবেন্দ্র পুরীর জন্য রেমুণায় গােপীনাথ বিগ্রহ নিজের আঁচলের নিচে ক্ষীর লুকিয়েরেখেছিলেন ।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর লীলাবিলাসকালে তার অন্যতম ভক্ত গৌড়ীদাস পণ্ডিত যে গৌর নিতাইবিগ্রহের সেবা করেছিলেন তা স্বয়ংরূপ পরিগ্রহ করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন , খাবার গ্রহণ করেছিলেন এবং চলতে শুরু করেছিলেন ।

এছাড়া , বংশীদাস বাবাজি , বৈষ্ণবকবি চণ্ডীদাস , গােবিন্দ দাস , মীরাবাঈ , গােবিন্দ ঘােষ , শ্রীল রূপ গােস্বামী , শ্রীল সনাতন গােস্বামী প্রমুখ ভগবদ্ভক্তগণের জীবনীতে দেখা যায় যে , তাঁদের সাথে তাঁদের ঈষ্টদেবরূপ শ্রীবিগ্রহের কত বিচিত্র লীলা সংঘটিত হতাে।

Development by: webnewsdesign.com