বৈধ কে অবৈধ, কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য

রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ৮:৩৫ অপরাহ্ণ

বৈধ কে অবৈধ, কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য
ওসি শফিকুল ইসলাম এর ১ কোটি ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা ঘুষের গোপন তথ্য প্রকাশ
apps

হবিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোটি টাকারও বেশি ঘুষ বাণিজ্যের একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন মেসার্স রাহমানিয়া ট্রান্সপোর্ট এজেন্সীর মালিক হাজী আমিনুল হক মুরাদ। গত ৮ ডিসেম্বর ২০২২ইং তারিখে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরে আই. জি. পি কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে এর অভিযোগ নং ১০৮৯ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের আই. জি. পি বরাবরে অভিযোগটি দাখিল করেন।

তাছাড়া এই অভিযোগের অনুলিপি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব , ডি. আই.জি সিলেট রেঞ্জ পুলিশ, পুলিশ সুপার হবিগঞ্জ বরাবরে প্রদান করেন। অভিযোগে হবিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি শফিকুল ইসলাম ছাড়াও তার সঙ্গীয় ফোর্স এস.আই আলমগীর, এ.এস আই মামুন মিয়া ও কন্সেট্রবল আলীম খাঁন, কন্সেট্রেবল জুনায়েদ খান, কন্সেট্রেবল রাব্বী, কন্সেট্রেবল সুমন সিংহা’র নামও উল্লেখ্য করেন।

আমিনুল হক মুরাদ অভিযোগে উল্লেখ্য করেন গত ২৮ জুন ২০২২ইং তারিখে তাহার মালিকানাধীন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সীর গাড়ী আটক করে ড্রাইভার ও হেলপারকে কোন কিছু না জিজ্ঞাসা করে করে তাদের গাড়িতে তুলে নেন। গাড়ীর চাবি ও কাগজ তাদের কাছে নিয়ে তাদের ড্রাইভার দিয়ে গাড়ী চালিয়ে ওসি শফিকুলের সুবিধা মত জায়গায় গাড়িতে থাকা প্যাকেজিং প্যাকেট, নার্সারী পি.পি, বেকারি পণ্যের মোড়ক, এইচ ডিপি  ১৪ হাজার কেজি মাল হতে ৯৬০০ কেজি মাল আনলোড করে অবশিষ্ট ৪৪০০ কেজি মাল গাড়িতে নিয়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর আমার ড্রাইভারের মোবাইল দিয়ে ওসি শফিকুল আমাকে ফোন করে বলেন ৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে না হয় গাড়ীতে মাদক রেখে আমাকে মাদক মামলায় আসামী করবে বলে হুমকি দেন। আমি মান-সম্মানের ভয়ে আমার বন্ধু হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট এলাকার মেসার্স ফজলু ভেরাইটিজ ষ্টোর এর প্রোপাইটার ফজলু রহমান এর মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা ওসি শফিকুল কে প্রদান করি। পরবর্তীতে ওসি শফিকুল গাড়ি নিয়ে এসপি অফিসে জমা দেয়।

অভিযোগ থেকে জানা যায় গত ২৮ জুন ২০২২ইং তারিখে হবিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা আমিনুল হক মুরাদের একটি গাড়ি আটক করে মাধরপুর থানায় একটি মামালা দায়ের করেন। মামলা নং ৬০, জি আর নং : ২৯২, মামলায় উদ্ধার কৃত মালামাল ৪৪০০ কেজি কিন্তুু প্রকৃত পক্ষে গাড়িতে মাল ছিল ১৪ হাজার কেজি, ডিবি পুলিশ মাল বিক্রয় করে ৯৬০০ কেজি যাহার বাজার মূল্য ২৩,০৪০০০/- (তেইশ লক্ষ চার হাজার টাকা) ।

গত ২৭ আগষ্ট ২০২২ইং তারিখে হবিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা আমিনুল হক মুরাদের আরো একটি গাড়ি আটক করে বাহুবল থানায় একটি মামালা দায়ের করেন। মামলা নং ১৪, জি আর নং : ১১৬,মামলায় উদ্ধার কৃত মালামাল ৪০০০ কেজি কিন্তুু প্রকৃত পক্ষে গাড়িতে মাল ছিল ১৪ হাজার কেজি, ডিবি পুলিশ মাল বিক্রয় করে ১০০০০ কেজি যাহার বাজার মূল্য যাহার বাজার মূল্য ২৪,০০০০০/- (চব্বিশ লক্ষ টাকা)।

গত ২৫ অক্টোবর ২০২২ইং তারিখে হবিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা আমিনুল হক মুরাদের আরো একটি গাড়ি আটক করে চুনারুঘাট থানায় একটি মামালা দায়ের করেন। মামলা নং ৪১, জি আর নং : ৪৯২,মামলায় উদ্ধার কৃত মালামাল ২৪০০ কেজি কিন্তুু প্রকৃত পক্ষে গাড়িতে মাল ছিল ১৪ হাজার কেজি, ডিবি পুলিশ মাল বিক্রয় করে ১১৬০০ কেজি যাহার বাজার মূল্য যাহার বাজার মূল্য ২৭,৮৪০০০/- (সাতাশ লক্ষ চুরাশি হাজার টাকা)।

এবং সর্বশেষ গত ৫ ডিসেম্বর ২০২২ইং তারিখে হবিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা আমিনুল হক মুরাদের আরো একটি গাড়ি আটক করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি মামালা দায়ের করেন। মামলা নং ০২, জি আর নং : ৯৭,মামলায় উদ্ধার কৃত মালামাল ২০০০ কেজি কিন্তুু প্রকৃত পক্ষে গাড়িতে মাল ছিল ১৪ হাজার কেজি, ডিবি পুলিশ মাল বিক্রয় করে ১২০০০ কেজি যাহার বাজার মূল্য ২৮,৮০০০০/- (আঠাশ লক্ষ আশি হাজার টাকা) ।

ওসি শফিকুল ইসলাম নগদ ২ লক্ষ টাকা ঘুষ ও একই সিস্টেমে ৪টি গাড়ী আটক করার পর মালামাল আনলোড করে বিক্রয় সহ সর্বমোট ১ কোটি ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকার মালামাল বিক্রয় করে দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ্য করেন।

দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া থেকে অভিযোগের বিষয়ে অভিযোগকারী আমিনুল হক মুরাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন বর্তমানে আমি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারতেছি না। ডিবি পুলিশের আটক কৃত মালামালের মালিক পক্ষগণ আমার কাছে মাল অথবা টাকা দাবি করেছেন। কারণ সর্ম্পূণ মালামাল গুলো বৈধ মালামাল ছিল। অবৈধ কোন মালামাল আমি পরিবহন করিনা।

আমি বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ন সাধারাণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ক্ষতিগ্রন্ত ব্যবসায়ীরা মালামালের ক্ষতিপুরণের জন্য ব্যবসায়ী সমিতিতে বিচার নালিশ করছেন যাহা একজন ব্যবসায়ী হিসাবে অত্যন্ত দুঃখজনক ও কষ্টদায়ক।

আমার কথা হচ্ছে মালামাল যদি অবৈধ হয় তাহালে পুলিশ মাল বিক্রয় করবে কেন? এই প্রশ্নটা পুরো জাতির কাছে আমি রাখতে চাই। মালামাল বৈধ না অবৈধ তা আদালতে অবশ্যই প্রমান হবে। এছাড়া আটককৃত ৪টি গাড়িই শায়েস্তাগঞ্জ থানা এলাকায় আটক করা হলেও ভিন্ন ভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করার কারন কি..? এসব কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিকের সাক্ষাতকারে মোবাইলে কেঁদে ফেলেন তিনি।

দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে জানা যায় হবিগঞ্জ জেলার আসামপাড়া, সাতছড়ী নালুয়া, আমরোড, তেলিয়াপাড়া, মনতলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে মাদক ও চোরাচালান প্রবেশ করে ভারত থেকে। মাদক ও চোরাচালান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ওসি শফিকুল মাসুরা ঘুষ বাণিজ্য সহ মাদকের ও চোরাচালন আটকের পর বিক্রয় করারও তথ্য রয়েছে।

ওসি শফিকুল ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। এরপর তিনি শেরপুর সদর থানা, ঝিনাইগাতি থানা, ডি.এম.পি বংশাল থানা, র‌্যাব-১১, পল্টন থানা, শেরে বাংলা নগর থানা এবং পি.বি.আইতে দায়িত্ব পালন করেছে। কর্মস্থলের সব জায়গাতে তার বিরুদ্ধে চাঁদা বাজি ও ঘুষ বাণিজ্যর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া থেকে ওসি শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে গাড়ি আটক করার পর মালামাল বিক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন যা মাল পেয়েছি তা দিয়ে মামলা করেছি। মাদক ও চোরাচালানের ঘুষ বাণিজ্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এসব অভিযোগ সত্য নয়। ওসি শফিকুলকে ১৪ টন ওজনের মালামাল ভর্তি গাড়ি কিন্তু মামলার এজহারে ২টন মালামাল আটক দেখিয়ে মামলায় দায়ের করেছেন বাকী ১২ টন গেল কোথায় ? এই প্রশ্নের জবাবে পরবর্তীতে যোগাযোগ করবেন বলে তিনি ফোন কেঁটে দেন।

Development by: webnewsdesign.com