দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তার: বৈঠকে বসছেন চার দেশ

মঙ্গলবার, ০৬ অক্টোবর ২০২০ | ৩:২৬ অপরাহ্ণ

দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তার: বৈঠকে বসছেন চার দেশ
apps

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে নৌ চলাচল ‘অবাধ ও স্বাধীন‘ রাখার উপায় খোঁজার যুক্তিতে ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে ‘কোয়াড’ নামে যে সংলাপের সূচনা হয়েছিল, তারই জের ধরে এই চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার টোকিওতে দু’দিনের বৈঠকে বসছেন। ভারত ও চীনের মধ্যে প্রায় চার মাস ধরে চলা বিপজ্জনক উত্তেজনার মধ্যেই বৈঠকটি হচ্ছে। এরই মধ্যে মঙ্গল ও বুধবার টোকিওতে কোয়াডের এই বৈঠক চলার সময় একই সাথে তিন থেকে চারটি নৌ এবং বিমান মহড়ার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং।

কোয়াডের চারটি সদস্য দেশের মধ্যে ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে – কিন্তু চীনকে আটকাতেই যে এই জোটবদ্ধ উদ্যোগ, পরিষ্কার করে তা কখনই বলা হয়নি। এমনকি এসব বৈঠক নিয়ে এই চারটি দেশের সরকারগুলোর পক্ষ থেকে জনসমক্ষে যেসব ঘোষণা দেয়া হয়েছে বা যেসব নথিপত্র চালাচালি হয়েছে, তার কোথাও চীন শব্দটিই নেই। কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, টোকিও বৈঠকে তা বদলে যেতে পারে। কারণ যে দেশটি এই প্লাটফর্মকে প্রকাশ্যে ‘চীন-বিরোধী‘ তকমা দিতে বিরোধী ছিলো সেই ভারত তাদের অবস্থান অনেকটাই বদলে ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা র‌্যান্ড কর্পোরেশনের সর্বসাম্প্রতিক এক প্রকাশনায় সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যাস লিখেছেন, পরিস্থিতি এখন অন্যরকম কারণ, তার মতে, এই চারটি দেশের সবগুলোই এখন চীনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের প্রশ্নে একমত। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে কোয়াড প্লাটফর্মকে একটি প্রতিরক্ষা জোটে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল চীনকে নিয়ে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার আড়ষ্টতা। চীনকে কতটা কোণঠাসা করা উচিৎ, তা নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিধা ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তারা সবাই একমত,“ লিখেছেন ডেরেক গ্রসম্যাস। ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কোয়াডের ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহী।

দিল্লিতে জওহারলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদোয়াজও মনে করেন, ভারতের বর্তমান সরকারের মধ্যে এখন এমন বিশ্বাস দিনকে দিন দৃঢ় হচ্ছে যে কেবলমাত্র সামরিক শক্তির ভয় দেখিয়েই চীনকে সামলানো সম্ভব। ভারতের বর্তমান সরকার মনে করছে চীন ভারতের ভৌগলিক সার্বভৌমত্ব হুমকিতে ফেলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের স্বার্থ-প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করছে, এবং এ থেকে চীনকে বিরত রাখতে হলে শক্তির ভয় দেখানো ছাড়া বিকল্প নেই। তার মতে, অন্য দেশের সাথে কোনো সামরিক বা প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে ভারত এখন প্রস্তুত।

তবে ভারতের এই অবস্থান যে রাতারাতি বা গত জুন মাস থেকে তৈরি হয়েছে তা নয়।গত দশকের মাঝামাঝি থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার একটি বন্দরে চীনা সাবমেরিনের উপস্থিতি তাদের জন্য চরম মাথাব্যথার কারণ হয়। পাশাপাশি, পাকিস্তানকে চীনের অব্যাহত সামরিক সাহায্য, পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দরে চীনের নিয়ন্ত্রণ, কাশ্মীরের ভেতর দিয়ে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের সড়ক নির্মাণে চীনের পরিকল্পনা – এসব নিয়ে ভারতে উদ্বেগের পারদ বাড়ছে।

চীন ২০০৭ সাল থেকে এই চারটি দেশের মধ্যে দহরম-মহরমকে গভীর সন্দেহের চোখে দেখছে। টোকিওর বৈঠক নিয়ে দু’দিন আগে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, কোনো একটি দেশকে টার্গেট করে কোনো জোট তৈরি একেবারেই কাম্য নয়। চীনা মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, “অন্য একটি দেশকে টার্গেট করে, তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ না করে, আঞ্চলিক দেশগুলোর বরঞ্চ উচিৎ নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস, বোঝাপড়া বাড়ানোর চেষ্টা করা।

১৯৯৩ সালেই চীনারা যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এখন বৈরি দেশের তালিকায় যোগ হয়েছে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Development by: webnewsdesign.com