তাওবা বান্দার জন্য বিশেষ নেয়ামত

বুধবার, ১০ মার্চ ২০২১ | ৩:৫৭ অপরাহ্ণ

তাওবা বান্দার জন্য বিশেষ নেয়ামত
apps

মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি দয়া-মায়া অনন্ত অসীম। আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ ও দয়া লাভের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে তাওবা। গুনাহমুক্ত স্বাচ্ছন্দময় জীবন লাভের জন্য তাওবার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। তাওবার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝার পূর্বে তাওবার পরিচয় জানা অত্যাবশ্যকীয়। তাওবা শব্দের অর্থ হচ্ছে ফিরে আসা। শরীয়তের পরিভাষায় তাওবা বলা হয় বান্দার কৃত অন্যায় অপরাধের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া , সে অন্যায় সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা ভবিষ্যতে এমন অন্যায় না করার দৃঢ় সংকল্প করা এমন দৃঢ় সংকল্প ও প্রতিজ্ঞার নাম হচ্ছে তাওবা। আল্লাহ তায়ালার দরবারের বান্দার তাওবা অধিক পছন্দনীয়। কোন মানুষ অপরাধ করার পর যখন লজ্জিত হয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে আন্তরিকতার সাথে তওবা করে এবং তার দ্বারা কৃত সংঘঠিত পাপ কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহর কাছে আকুতি মিনতি করে , এমন গুনাহগার বান্দা কে আল্লাহ অধিক পছন্দ করেন এবং তার তওবা কবুল করেন। এবং বান্দাকে স্বীয় অপরাধ থেকে পবিত্র করেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে মুমিন বান্দাদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দেন যেমন: وتوبوا الى الله جميعا ايها المؤمنون لعلكم تفلحون

অর্থ : হে মুমিনগণ ! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবা কর , নিশ্চয়ই তোমরা সফলকাম হবে ( সূরা নূর) যারা প্রতিনিয়ত আল্লাহর সীমা লংঘন করে গুনাহের কাজে লিপ্ত রয়েছে ,কখনো কৃত অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত হয় না এবং তওবা করে না তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা জালিম আখ্যায়িত করেছেন যেমন : আল্লাহ তা’আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন:

ومن لم يتب فاولئك هم الظالمون.

অর্থ : যারা তওবা করে না তারাই অত্যাচারী। উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ে মুমিনদেরকে আল্লাহতালা দুই ভাগে ভাগ করেছেন। এক : তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন তারা সফলকাম । দ্বিতীয় :যারা গুনাহ করে অথচ তাওবা করে না তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন তারা অত্যাচারী জালিম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দার প্রতি কত দয়াময় তা রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাদীস থেকে বোঝা যায়।আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় মহান প্রভু থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পূণ্য ও পাপসমূহ লিখে দিয়েছেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ তার ব্যাখ্যাও করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি কোন নেকী করার সংকল্প করে কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত করতে পারে না ,আল্লাহ তা’আলা তার জন্য কেবল নিয়তের বিনিময়ে একটি পূর্ণ নেকি লিখে দেন। আর যদি সে সংকল্প করার পর কাজটি বাস্তবায়ন করে ফেলে ,তাহলে তার বিনিময়ে দশ থেকে সাতশত গুণ বরং তার চেয়েও অনেক গুণ বেশি নেকি লিখে দেন। পক্ষান্তরে যদি সে একটি পাপ করার সংকল্প করে কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে ,তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিকট একটি পরিপূর্ণ নেকি হিসেবে লিখে দেন! আর যদি সে সংকল্প করার পর ওই পাপ কাজ করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ মাত্র একটি পাপ লিপিবদ্ধ করেন। (বুখারী মুসলিম) অন্য হাদীসে এসেছে হযরত আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন , আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দার তাওবায় ওই ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হন যে, কোন ব্যক্তি তার বাহন সাওয়ারি নিয়ে কোনো জনমানব শূন্য প্রান্তরে অবস্থান করেছিল, হঠাৎ তার সাওয়ারিটি পালিয়ে গেল। সাওয়ারিটির সাথে ছিল তার খাদ্য ও পানীয় বস্তু। লোকটি সাওয়ারিটি খোঁজাখুঁজির করে না পেয়ে তার ব্যাপারে হতাশ হয়ে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়া তলে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে উঠে সে দেখে তার হারিয়ে যাওয়া সাওয়ারিটি তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে । তখন সে অধিক খুশি হয়ে তার সাওয়ারির লাগাম চেপে ধরে বলল, হে আল্লাহ তুমি আমার বান্দা আমি তোমার রব! লোকটি অধিক খুশিতে উল্টাপাল্টা বলে ফেলল। প্রিয় মুসলিম উম্মাহ ! রোজ হাশরে আল্লাহ আমাদের হিসাব নেওয়ার পূর্বে , আমরা নিজেদের আমলের ব্যাপারে হিসাব করে নেওয়া উচিত । দিন শেষে বিছানায় যাওয়ার পূর্বে সারাদিনের কৃতকর্মের মুহাসাবা করতে হবে যে, আজ নামাজ সঠিকভাবে আদায় করেছি কিনা ?এবং আজ আকিদা পরিপন্থী কোনো কাজ করেছি কিনা ? ইসলামের অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলো সঠিকভাবে আদায় করেছি কিনা এবং আজ কোন কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়েছি কিনা ? যদি কোনো একটি অন্যায় কাজ আমার দ্বারা হয়ে থাকে তাহলে দৃঢ় সংকল্প করা যে , আমি আর কখনো এমন কাজ করব না। রাব্বে কারীমের দরবারে তওবা করে ঘুমিয়ে যেতে হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ইরশাদ করেন : তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট তাওবা করতে থাকো। কেননা আমি নিজের দৈনিক একশতবার তাওবা করি। অন্য হাদীসে এসেছে হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে বলতে শুনেছি আল্লাহর কসম ! আমি প্রত্যহ সত্তরের অধিক আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করি । ( সহি বুখারী) প্রত্যেক পাপ থেকে তাওবা করা ( চিরতরে প্রত্যাবর্তন করা) ওয়াজিব। যদি কৃত গুনাহের সম্পর্ক আল্লাহর (অবাধ্যতার) সঙ্গে থাকে তাহলে এধরনের তওবা মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে এক: গুনাহের কাজ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে । দুই: পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে তিন : ওই পাপ কাজ আগামীতে না করার জন্য দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। সুতরাং যদি তাওবাকারীর মধ্যে এই সিফাতগুলো না পাওয়া যায়, তাহলে তাওবা বিশুদ্ধ হবে না।পক্ষান্তরে সেই পাপ যদি মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে উপরোল্লেখিত তিন শর্তের সাথে আরেকটি শর্ত যোগ হবে , তা হচ্ছে বান্দার হক নষ্ট করে থাকলে সেই হক ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি অবৈধ পন্থায় কারো মাল বা অন্য কিছু নিয়ে থাকে, তাহলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়, অনুরূপ কোনো দোষ করে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে। তবেই তার তাওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে বলে বিবেচিত হবে। প্রিয় ভাই তাওবা ও ইস্তেগফার মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত , তাই আমাদের এ নিয়ামতের ব্যাপারে উদাসীন থাকা মোটেও উচিত হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা নিজ হাত রাতে প্রসারিত করেন যেন দিনে পাপ কারি (রাতে) তাওবা করে। এবং দিনে তার হাত প্রসারিত করেন যেন রাতে পাপ কারি ( দিনে) তাওবা করে। যে পর্যন্ত পশ্চিম দিগন্তে সূর্যোদয় না হবে , সে পর্যন্ত এই রীতি চালু থাকবে। (সহিঃ মুসলিম) ওহে ভাই একটিবার ভেবে দেখুন! আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের কে জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে বাঁচাবার জন্য তার দয়ার হাত কে কিভাবে প্রসারিত করেছেন। তাই আসুন মহান আল্লাহর দরবারে প্রতিনিয়ত তওবা-ইস্তেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে, খালেস দিলে তাওবা ও ইস্তেগফার করার তৌফিক দিন ,আমিন।

Development by: webnewsdesign.com