চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের উদ্যোগ ভালো কাজে বাধা

মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৫:১১ অপরাহ্ণ

চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের উদ্যোগ ভালো কাজে বাধা
apps

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক, প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পপতি অনন্ত জলিল পেশাগত জীবনের বাইরে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বিপন্ন ও অসহায় মানুষের পাশে তাকে নিয়মিত দেখা যায়। ইতোমধ্যে তার অনেক নজির মানুষ দেখেছে। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলারও উদ্যোগ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বয়স্ক ও এতিম শিশুদের জন্য ব্যাপক পরিসরে একটি আশ্রম গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এজন্য ২০০৭ সালে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ধল্লা গ্রামে ২২ বিঘা জমি কিনেন। শিঘ্রই এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি আশ্রম গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন। বিশাল পরিসরের এই প্রকল্পটির সাথে যুক্ত হয়েছে আহসানিয়া মিশন। নাম দেয়া হয়েছে, ‘অনন্ত জলিল-আহসানিয়া মিশন সিনিয়র অ্যান্ড চিল্ড্রেন হ্যাভেন’। তবে প্রকল্পটির কাজ শুরু করতে গিয়ে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সেখানের প্রভাবশালীদের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানা যায়। অনন্ত যে জায়গাটি কিনেছেন, সেই জায়গার উপর দিয়ে পাশের একটি স্কুলে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। মূলত এটি স্কুলে যাওয়ার পথ নয়। এই পথ রাখা নিয়ে প্রকল্পটির কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ এ রাস্তা গিয়েছে অনন্তর কেনা জমির উপর দিয়ে। আর কারো জায়গার উপর দিয়ে যাতায়াতের পথও থাকার কথা নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধল্লা গ্রামের বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, অনন্তর জমির উপর দিয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের এ পথ করে দেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। প্রথমে সাময়িকভাবে এ পথ করে দেয়া হলেও এখন তা স্থায়ীভাবে করতে চাচ্ছেন তিনি। প্রকল্পটির মাঝ দিয়ে যদি রাস্তাটি হয়, তাহলে তা দ্বিখন্ডিত হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে গত রবিবার চেয়ারম্যানসহ গ্রামবাসীর সঙ্গে অনন্ত সেখানে মিটিং করেন। মিটিংয়ে অনন্ত বলেন, যদি রাস্তাটি প্রকল্পের জমির উপর দিয়ে যায়, তাহলে তা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এটা প্রকল্পের পরিকল্পনাকে ব্যাহত করবে। পুরো প্রকল্পটি আলাদা একটি সীমানার মধ্যে করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দুই ভাগে বিভক্ত হলে তা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি মিটিংয়ে বলেন, তারপরও স্কুলের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এবং তাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আমি প্রকল্পের জায়গারই একপাশ দিয়ে রাস্তাটি করে দিব। এতে আমার জমি থেকে প্রায় আড়াই থেকে তিন বিঘা চলে যাবে। তা গেলেও আমি তা ছেড়ে দেব। তার এ প্রস্তাব সত্তে¡ও চেয়ারম্যান বিভিন্ন অজুহাতে রাজী হতে চাননি। অথচ অনন্ত যদি তার জমির ওপর দিয়ে চলাচলের রাস্তা না দেন, তাহলে আইনগতভাবে কারো কিছু করার নেই। কারণ এ জমি তার কেনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীদের একজন বলেন, আমার ঘরের উপর দিয়ে আমি কি রাস্তা দেব? তারপরও তো অনন্ত সাহেব রাস্তার জন্য আলাদাভাবে আড়াই-তিন বিঘা জমি ছেড়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি হলে আমাদের গ্রামেরই উন্নতি হবে। গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এখন যে কাঁচা রাস্তা তা পাকা হবে। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হবে। এখন কেউ যদি একটি ভাল উদ্যোগে সামান্য একটি রাস্তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আরেক গ্রামবাসী বলেন, আমাদের এখানের সংসদ সদস্য আমাদের সবার প্রিয় জনপ্রিয় সঙ্গীত তারকা মমতাজ। তিনি এখানে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ এবং নিজ উদ্যোগে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আমরা যদি আমাদের এই এলাকায় আরেক জনপ্রিয় নায়ক অনন্ত জলিলকে পাই, তাহলে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া তিনি তো এখানে ব্যক্তিগত কোনো লাভের জন্য এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন না। অসহায় বয়স্ক মানুষ ও এতিম শিশুদের জন্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাচ্ছেন। এ প্রকল্পটি হলে এ এলাকার চেহারা বদলে যাবে, উন্নত হবে। অসহায় মানুষের আশ্রয় মিলবে, কর্মসংস্থানও হবে। এ কাজে আমাদের এলাকাবাসীর সকলেরই আনন্দিত হয়ে সহযোগিতা করা উচিত। তা না করে একটি ছোট্ট রাস্তার জন্য প্রকল্পটির কাজে কিছু লোকের বাধা হয়ে দাঁড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মহৎ উদ্যোগ এবং বৃহৎ কোনো কাজে কিছু ছাড় সবসময়ই দিতে হয়। তাছাড়া তিনি তো বলেননি, রাস্তা দেবেন না। তিনি তার জমি ছেড়ে দিয়ে নিজে রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সামান্য পথ ঘুরে যেতে হবে। এতে তাদের কোনো সমস্যাই হবে না। ভাল কাজে এ ধরনের বাধা আসা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আশা করব, যারা এ কাজে আপত্তি জানাচ্ছেন, তারা বিষয়টি উপলব্ধি করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তা করবেন। জানা যায়, ‘অনন্ত জলিল-আহসানিয়া মিশন সিনিয়র অ্যান্ড চিল্ড্রেন হ্যাভেন’-এ বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের থাকা-খাওয়া, খেলাধুলার মাঠ, মসজিদ, মাদরাসাসহ অন্যান্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। বয়স্ক ও শিশুদের একসঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করার কারণ হিসেবে জানা যায়, বয়স্করা যাতে শিশুদের সাথে দাদা-নাতির মতো করে আনন্দে সময় কাটাতে পারে এবং শিশুরা যাতে তাদের সান্যিধ্যে থেকে বড় হতে পারে এজন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com