ঘরবন্দি অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসময়

শনিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২০ | ৬:৪০ অপরাহ্ণ

ঘরবন্দি অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসময়
apps

শিক্ষাই হলো সর্বোত্তম পদ্ধতি সফলতা অর্জন করার। শিক্ষা হলো মলূত শিখন ও শিক্ষন প্রকিয়ার সুসমন্বিত রূপ। শিক্ষা তো নানা ভাবে অর্জন করা যায়। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হলো প্রাতিষ্ঠানিক পদ্বতিতে শিক্ষা লাভ করার বিষয়টি। আমাদের দেশেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো প্রাতিষ্ঠানিক পদ্বতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষা অর্জন করার সুযোগ রয়েছে।পাশাপাশি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও রয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক ভাবেও বিদ্যা অর্জনের সুযোগ। যেমন আমরা আমাদের সমাজ, আমাদের পরিবার থেকেই যে জিনিষ গুলো আয়ত্ত করি সেগুলোই মুলত অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের শিক্ষা। তবে এই পদ্বতিতে শিক্ষা গ্রহন চালু থাকলেও বর্তমান প্রতিযোগীতা মূলক বিশ্ব সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্হাকে। কারন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্হার ফলাফল হলো সনদ নির্ভর। আর চাকরির বাজারে ‘সোনার হরিন ‘ খ্যাত সেই চাকরি খুজে পেতে গেলে এই সনদ এর যে কতো মূল্য তা তো বলাই বাহূল্য।

ডিসেম্বর, ২০১৯,চীনের উহান শহরে শুরু হওয়া প্রাণঘাতী ” করোনা” নামক ভাইরাসের আক্রমনে আজ পুরো বিশ্বই শঙ্কিত। কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে আছেন সকল দেশের শিক্ষাবিদরা,শ্রদ্বেয় শিক্ষকরা, শিক্ষার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করা সকল শিক্ষা গবেষকরাও। করোনার এ মহা এান্তিকালে সকল শিক্ষার্থীরাও সময় পার করছেন ঘরবন্দি হয়ে। উপুযুক্ত সুযোগের অভাবে শিক্ষাঙ্গনে উপস্হিত হয়ে ক্লাসগুলো করতে না পারায় চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে তাদের যথাযত শিক্ষা কার্যক্রমগুলো। ফলে শিক্ষার্থীদের পরতে হচ্ছে ভোগান্তিতে। কারো কারো মনে আবার ভয় সৃষ্টি হচ্ছে ‘সেশন জট’ নিয়েও।

তবে, সময় উপযোগী চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমাদের সরকার শিক্ষা ব্যাবস্হাকে চলমান রাখার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছে। যার ফলে গত মার্চে যে শিক্ষা কার্যক্রম গুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিবছরের ন্যায় এইবারও হাতে নিয়েছিলো সেই কাজ যেন সঠিক ভাবে ঘটে এইটাই সরকর নিশ্চিত করতে চাচ্ছে।

মাল্টমিডিয়ার মাধ্যমে, জুম আ্যপ এর সাহায্যে যেভাবে ক্লাসগুলো করিয়ে কোর্স শেষ করা হচ্ছে, তাতে কিন্তুু মূল্যায়ন এর ব্যবস্হা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী পরবর্তী সেমিষ্টার এর ক্লাসে অংশগ্রহনে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে। অনেকে আবার দূর্বল ইন্টারনেট কানেকশন অথবা ধীরগতির ইন্টারনেট কানেকশন এর কারনে হয়তো ক্লাসটায় উপস্হিত থাকতে পারছে না অথবা উপস্হিত থাকলেও হয়তো বা পুরো ক্লাসটায় মনোযোগ রাখা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আবার দেখা যায় যেহেতু এইটা আমাদের দেশের জন্য একটা নতুন প্রক্রিয়া শিক্ষদানের জন্য, সেহেতু অনেকেই যখন ক্লাস এ অংশগ্রহন করে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ততটা স্হিতিশীল থাকে না। উপস্হিত উৎসুক জনতার কথা,কিংবা ভিডিও ক্যামেরাটা হটাৎ অন করতে বল্লে যে কতো রাজ্যের ছবি দেখতে পাওয়া য়ায় সেটা না হয় নাই বলি। এর ফলে দেখা যাচ্ছে শিক্ষাক্ষেএে বৈষম্য। কেউ অংশগ্রহন করতে পারছে আর কেউ পারছে না। যা মোটেই কাম্য নয়, কিন্তুু অস্হিতিশীল পরিস্হিতির কারনে তাই এখন লক্ষনীয়।

অনেক শিক্ষার্থীর আবার স্মার্টফোন নেই। আবার কারো ফোন হয়তো ততটা স্মার্ট নয় মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস করার জন্য। কোর্সের শ্রদ্বেয় কিছু শিক্ষরা ক্লাসের রেকর্ডিং ও আন্তরিকতার সাথে প্রদান করছে ছাএছাএী দের কাছে। সবই সাময়িক ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিন্তুু “এ্যাসেসমেন্ট বা স্বহস্ত লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন” করতে না পারার কারনে আপাত দৃষ্টিপটে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের মতো সকল শিক্ষার্থীকে সেশন জটে পড়তে হবে।

ক্যাম্পাস পুরোপুরি কবে খুলবে, কবে আবার ক্লাসরুমে প্রতক্ষ্যভাবে উপস্হিত হয়ে আমরা ক্লাস করতে পারবো সেটা এখনো ধোয়াশার মধ্যেই আছে। ক্যাম্পাস খুললেও তখন দেখা যাবে যে, সময় কমিয়ে একই ধারাবাহিকতায় পরপর দুই সেমিষ্টার এর পরীক্ষা নেওয়া হবে। তখন আরো জটিল সমস্যার সৃষ্টি হবে। অনেকেই করোনা কালীন এই সময়ে গ্রামে অবস্থান করছে, প্রয়োজনীয় শিক্ষাউপকরণই তার হাতের কাছে নেই। সে কি করে তার ক্লাসের পড়াগুলো তৈরি করবে আর কি করেই বা দুই সেমিষ্টার পরীক্ষা একসাথে দিবে। তার জন্য প্রয়োজন ক্যাম্পাস খোলার পরে অন্তত ২১দিন থেকে ১মাসের মতো সময় দেওয়া তাদের পরীক্ষার সঠিক প্রস্তুতির জন্য।

শিক্ষাবর্ষের সময়সীমা হ্রাসবৃদ্বি করা ও দরকার বলে আমার মনে হয়। কেননা করোনার এই বছরের শিক্ষাবর্ষ যদি বাড়িয়ে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে নেওয়া যায় তাহলে আশা করছি সেশন জটের ঝামেলা থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যাবে। আর আগামি শিক্ষার্ষের পাঠপরিক্রমা যদি কমিয়ে আনা যায় তখন সেই শিক্ষাবর্ষ ও কিছুটা কমে আসবে। এতে করে সেশন জট এর কবল থেকে শিক্ষার্থীরা রেহাই পাবে।

অটোপাশ দেওয়ার কথা ভাবলেও এতেও সমস্যা স্পষ্টত লক্ষনীয়। ধরা যাক, (১ম-৫ম) শ্রেনি পর্যন্তু অটোপাশ দেওয়া হলো। ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে কার কতো রোল হবে? এই নিয়েই তৈরি হবে অভিভাবকদের মাঝেও বিশাল দ্বন্দ্ব। একই ভাবে,যারা (জে. এস.সি) দিয়ে ৯ম শ্রনিতে ওঠবে তারা কে কোন বিভাগ নিবে তা নিয়েও তৈরি হবে অযাচিত সমস্যা। এই তো গেল শুধু মাধ্যমিক এর কথা। উচ্চমাধ্যমিক আর উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন সেশনের মধ্যেও তৈরি হবে অনেক গোলযোগ।

এই গোলযোগ তৈরি হতো না যদি না আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সনদগুলোকে এতোটা গুরুত্ব দেওয়া না হতো। শিক্ষার প্রতিটি স্তরেই আজকে অভিভাবকদের চাই উন্নত থেকে উন্নতর জি পি এ। শিক্ষার্থীকে এইটাই বুঝানো হয় যে, সর্বোচ্চ জি পি এ পেতেই হবে। না হলে জীবন ব্যর্থ। ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীর মনে প্রশ্ন জাগে (জি পি এ- ৫) না পেলে কি এই সমাজ আমায় মেনে নিবে?

আমরা আসলে প্রতিষ্ঠান এর ওপর এতো বেশি নির্ভর হয়ে পড়ছি যে প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে আমরা কিছুই ভাবতে পারছিনা। শিক্ষার ‘মূল্য নির্ধারক’, ‘যাচাই বাছাইকারী’ বানিয়ে ফেলছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু কেন? আমরা কি ভুলে গেছি নাকি যে শুধুমাএ প্রতিষ্ঠান ই শিক্ষার মূল্যনির্ণায়ক হতে পারেনা। আমরা অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলো থেকেও আমরা শিখতে পারি। বিদ্যালয় হলো বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে যে, প্রতিষ্ঠান সবকিছুর মূল নয়, বরং শিক্ষা বা বিদ্যা হলো সবকিছুর মূল।

জ্ঞানের জনক “সক্রেটিস”, তারঁ শিষ্য “প্লেটো” তারা বহু আগেই খ্রিষ্ট :পূর্ব ৩২০ এর আগেই জ্ঞান বা শিক্ষার ধারনা দিয়েছেন। তারপর ৩২০ খ্রিষ্টাব্দে মহান দার্শনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক, জীববিজ্ঞানের জনক “এরিস্টটল” শিক্ষাকে সংঙ্গায়িত করেছেন। তাহলে বুজাই যাচ্ছে প্রতিষ্ঠান ছাড়াও শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব। আমরা কেন তাহলে শুধু শুধু করোনার দোহাই দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ বলে আমাদের লেখাপড়া বন্ধ, আমাদের চাকরী হবে না, জীবন চলবে না এইসব ভাবছি?

সময় জীবনের জন্য শ্রেঠ শিক্ষক। আর আমাদরে ও করোনার এই মহামারীতে সময়ের আশু পরিবর্তনের অপেক্ষা করতে হবে। আমদের চিন্তার জগতকে আরো উন্মুক্ত করতে হবে। শিক্ষার মূল্যায়ন করতে হবে বিস্তৃত পরিসর থেকে। গন্ডিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান কখনো” জীবন ভিত্তিক শিক্ষার নির্ণায়ক” হতে পাররেনা।

সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি
শিক্ষার্থী, আই ই আর
জগন্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Development by: webnewsdesign.com