গাজীপুরে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই মাদকাসক্ত! ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র’ থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে চলতো শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন।
কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছে থেকে হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা। কোন রোগী তাদের অভিভাবকদের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ করলে তার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যেত। নিরাময় কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ ওই কেন্দ্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ছিলেন মাদকাসক্ত।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহানগরের ভুরুলিয়ার কালাসিকদারের ঘাট এলাকায় ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ পাঁচজনকে আটক করেছে র্যাব। এসময় ওই কেন্দ্র থেকে ৪২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। কেন্দ্রটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সিলগালা করে দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের পছন্দ হলে তার উপর যৌন নির্যাতন চালানো হতো।
অপর এক রোগীর মা জানান, তার ১৬ বছরের একমাত্র ছেলে সাত মাস ধরে এ কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এ জন্য তার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই ছেলে নিরাময় কেন্দ্র ছেড়ে আর বাড়ি ফিরে যেতে চাইছিল না।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিকালে ওই কেন্দ্রের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংএ জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নগরীর ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র নামক একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। তিনি বলেন, যেভাবে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা, চিকিৎসা দেওয়া ও রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা তা সেখানে দেওয়া হতো না। এ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হতো বলে কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাধনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা ভর্তি রোগীরা।
তিনি আরো জানান, এখান থেকে শারীরিক নির্যাতনের ফুট প্রিন্ট পাওয়া গেছে। বিশেষ করে রোগীদের ঝুঁলিয়ে পিটানো এবং শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে রশি উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
একটি নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন আছে তার অধিকাংশই এখানে মানা হতো না। এ কেন্দ্রে নিন্মমানের খাবার সরবরাহসহ ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য কোন চিকিৎসক ছিলনা। এ কেন্দ্রে যে পরিমাণ রোগী থাকার কথা তার চেয়ে বেশী রোগী ছিল। ২০০৯ সালে কেন্দ্রটি অনুমোদনহীন ভাবে শুরু করলেও পরে তার অনুমোদন নেওয়া হয়। পরে মালিক ফিরোজা নাননীন বাধন সকল প্রকার নিয়ম-কানুন না মেনে কেন্দ্রটি পরিচালনা করতে থাকেন।
তিনি বলেন, এ কেন্দ্র চিকিৎসার নামে জোরপূর্বক রোগীদের আটকিয়ে রাখা হতো। এমনও রোগী রয়েছেন যিনি তিন বছর ধরে এ কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। রোগীরা কোন প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাদের উপর নির্যাতন করতো মালিকের পালিত কর্মচারিরা। এরকম ৫-৭ জন রোগী পাওয়া গেছে যাদের উপর শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই কেন্দ্রে থাকা ২৮ জন রোগীকে মঙ্গলবার বিকালে তাদের পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংকালে গাজীপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: সময়ের কন্ঠসর
Development by: webnewsdesign.com