কী করণীয় স্বপ্ন দেখার পর

রবিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ৫:৩২ অপরাহ্ণ

কী করণীয় স্বপ্ন দেখার পর
apps

স্বপ্ন মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সব মানুষই স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে না এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা সাধারণ মানুষ যেভাবে স্বপ্ন দেখি নবী-রাসুলরাও স্বপ্ন দেখতেন।

তবে নবী-রাসুলদের স্বপ্ন ছিল সত্য, যা ওহির অংশ। কারণ নবীদের স্বপ্ন সরাসরি আল্লাহ প্রদত্ত। আমর (রহ.) বলেন, আমি ওবায়েদ ইবনে ওমর (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই নবীদের স্বপ্ন ওহি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৫৯)
মক্কা বিজয়ের আগে নবীজিকে মক্কা বিজয়ের পূর্ণ ঘটনা স্বপ্নে দেখানো হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, বস্তুত আল্লাহ তাঁর রাসুলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যা ছিল সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত। আল্লাহ চান তো তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে নিরাপদে প্রবেশ করবে, এমন অবস্থায় যে তোমরা (কিছুসংখ্যক) মাথা কামানো থাকবে এবং (কিছুসংখ্যক) থাকবে চুল ছাঁটা। তোমাদের কোনো ভয় থাকবে না, আল্লাহ এমন সব বিষয় জানেন, যা তোমরা জান না। সুতরাং সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগে স্থির করে দিলেন এক আসন্ন বিজয়। (সুরা : আল-ফাতহ, আয়াত : ২৭)

স্বপ্ন সাধারণত তিন ধরনের

আমাদের স্বপ্ন সাধারণত তিন ধরনের। এক. সত্য স্বপ্ন, যা স্পষ্ট বোঝা যায়। দুই. দুঃস্বপ্ন, যা শয়তানের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তিমূলক। তিন. মনের চিন্তাভাবনা দিনের বেলায় যা কল্পনা করে রাতে এই কল্পনাগুলোই স্বপ্নে দেখতে থাকে। তবে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন দ্বারা শরিয়তের কোনো দলিল হতে পারে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, স্বপ্ন তিন প্রকার, (১) সত্য স্বপ্ন, (২) বান্দার মনের চিন্তা-ভাবনা (যা চিন্তা করে তাই স্বপ্নে দেখে) এবং (৩) শয়তানের পক্ষ থেকে ভীতি প্রদর্শনমূলক কিছু। অতএব, কেউ যদি অপছন্দনীয় কোনো কিচু স্বপ্নে দেখে তাহলে সে যেন ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায় করে। আর তিনি বলতেন, স্বপ্নে (পায়ে) শৃঙ্খল দেখা পছন্দনীয় এবং (গলায়) শৃঙ্খল দেখা অপছন্দনীয়। (পায়ে) শৃঙ্খলের ভাবার্থ হচ্ছে দ্বিনের ওপর সুদৃঢ় থাকার ইঙ্গিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলতেন, যে আমাকে স্বপ্নে দেখল তা সত্যিই আমি। কেননা, শয়তান আমার রূপ (সাদৃশ্য) ধারণ করতে পারে না। … (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২২৮০)

স্বপ্নের ভালো-মন্দ যাচাই করার পদ্ধতি

স্বপ্নের সত্যতার মাত্রা নির্ভর করে ব্যক্তির আমল-আখলাক, আচার-আচরণ ও সততার ওপর। যে ব্যক্তি যত সততার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ, তার স্বপ্ন সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই তত বেশি। তাই ব্যক্তিবেদে একই বস্তুর ব্যাখ্যা ভিন্ন ভিন্ন হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, যখন যুগ ও সময় (কিয়ামতের) সন্নিকট হয়ে আসবে তখন মুমিনের স্বপ্ন খুব কমই অবাস্তব হবে। তোমাদের (মাঝে) বেশি সত্যভাষী লোক সর্বাধিক সত্য (ও বাস্তব) স্বপ্নদ্রষ্টা হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৭৯৮)

এ জন্য সত্য স্বপ্নের পূর্বশর্ত হালাল ভক্ষণ, আল্লাহর হুকুম পূর্ণরূপে মানা, পবিত্র অবস্থায় কেবলামুখী হয়ে ঘুমানো—এসব করতে পারলে তার স্বপ্ন সত্য হওয়ার আশা করা যায়।

অভিজ্ঞ ছাড়া কাউকে সত্যের কথা না বলা

আমাদের অনেকের প্রবণতা আছে স্বপ্ন দেখা মাত্রই যার-তার কাছে তা বলে বেড়ানো। অথচ এটি নিতান্তই ভুল ও অজ্ঞতা। স্বপ্নের ব্যাপারে যারা অভিজ্ঞ ও একান্ত শুভাকাক্ষী তাদের ছাড়া অন্য কারো কাছে স্বপ্নের কথা প্রকাশ না করা। আর ওই ব্যক্তি স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার অধিকার রাখে, যে কোরআন ও হাদিসের গভীর জ্ঞান রাখে এবং স্বপ্ন-ব্যাখ্যার মূলনীতি সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। কারণ স্বপ্নের ব্যাখ্যা একটি শরয়ি বিদ্যা। স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয়, সেভাবেই তা সংঘটিত হয়। প্রিয় নবী (সা.) এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, জ্ঞানী ব্যক্তি অথবা শুভাকাক্ষী ব্যক্তি ছাড়া আর কোনো ব্যক্তির কাছে স্বপ্নের কথা প্রকাশ করবে না। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২২৮০)

খারাপ স্বপ্ন দেখলে করণীয়

স্বপ্ন দেখার পরে করণীয় কী? যদি কেউ ভালো স্বপ্ন দেখে তাহলে আলহামদুলিল্লাহ বলবে এবং একান্ত আপনজন ও অভিজ্ঞ ছাড়া অন্য কাউকে নিজের স্বপ্নের কথা ভুলেও বলবে না। আর যদি কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখে তাহলে এর অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে। খারাপ স্বপ্ন পারতপক্ষে কারো কাছে না বলাই ভালো। খারাপ স্বপ্ন দেখার পর বাঁ দিকে তিনবার থুতু ফেলবে এবং পাশ পরিবর্তন করে ঘুমাবে। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, সৎ ও ভালো স্বপ্ন আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে। আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের তরফ থেকে হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের কেউ যখন ভয়ানক মন্দ স্বপ্ন দেখে, তখন সে যেন তার বাঁ দিকে থুতু ফেলে আর শয়তানের ক্ষতি হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। তাহলে স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৯২)

অহেতুক স্বপ্ন কারো কাছে না বলা

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.)-এর ভাষণদানরত অবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ঘুমন্ত ব্যক্তি স্বপ্নে যা দেখে, আমিও গত রাতে তদ্রূপ স্বপ্নে দেখলাম। আমার ঘাড়ে আঘাত করার ফলে আমার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গেল। আমি সেটির অনুসরণ করে তা ধরে ফেললাম এবং পুনরায় ঘাড়ে স্থাপন করলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ঘুমের মধ্যে তোমাদের কারো সঙ্গে শয়তান খেলা করলে সে যেন তা লোকের কাছে না বলে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯১২)

মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনার ভয়াবহতা

অনেকের প্রবণতা রয়েছে, বানিয়ে বানিয়ে স্বপ্ন বলার। এটাকে কোনো অপরাধ মনে করে না। অথচ বানিয়ে মনগড়া স্বপ্ন বলার ব্যাপারে নবীজি (সা.) আমাদের সতর্ক করে গেছেন। কারণ স্বপ্নের ব্যাপারে মিথ্যারোপ যেন আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করা যে, আল্লাহ তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন অথচ তা সে দেখেনি। আর আল্লাহর ওপর মিথ্যা বলা সৃষ্টিকুলের ওপর মিথ্যা বলার চেয়ে অধিকতর গুরুতর। ইবনে আব্বাস (রা.) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন দেখার ভান করল যা সে দেখেনি তাকে (কিয়ামতের দিন) দুটি যবের দানায় গিঁট দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। অথচ সে তা কখনো পারবে না। যে কেউ কোনো এক দলের কথার দিকে কান লাগাল। অথচ তারা এটা পছন্দ করে না অথবা বলেছে, অথচ তারা তার থেকে পলায়নপর। কিয়ামতের দিন তার উভয় কানে সিসা ঢেলে দেওয়া হবে। আর যে কেউ প্রাণীর ছবি আঁকে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে এবং তাতে প্রাণ ফুঁকে দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। কিন্তু সে প্রাণ ফুঁকতে পারবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪২)

ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যা হলো নিজ চোখ দিয়ে এমন কিছু দেখার (দাবি করা) যা চক্ষুদ্বয় দেখতে পায়নি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৪৩)

Development by: webnewsdesign.com