কানাইঘাটে ‘বিদ্রোহী’রা নৌকার জয়ে বড় বাধা

মঙ্গলবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২২ | ৯:৩৫ অপরাহ্ণ

কানাইঘাটে ‘বিদ্রোহী’রা নৌকার জয়ে বড় বাধা
apps

আগামীকাল বুধবার (৫ জানুয়ারি) সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে। বুধবারের নির্বাচনে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৩ জন ভোটার তাদের ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৮৫টি ভোট কেন্দ্রে ব্যালেট বক্স ও নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছান হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিসাইডিং অফিসার, অন্যান্য কর্মকর্তা ও পুলিশ, আনসার সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণের আগে প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালেট পেপার পাঠানো হবে বলে স্ব স্ব ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানানো হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের জয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। অবশ্য বেশিরভাগ ইউনিয়নেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতায় থাকবেন নৌকার প্রার্থীরা।

নির্বাচনের দিন কোনো প্রার্থী ও তার সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা, ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান, কেন্দ্র দখল ও ব্যালেট পেপার ছিনতাই ও ব্যালেটে হাত দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম জানিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে ৮৫টি ভোট কেন্দ্রসহ অধীক ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন ও র্যাব, বিজিবির মোবাইল টিম থাকার পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে স্টাইকিং ফোর্স ভোটের দিন সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে।

ইতোমধ্যে অবাদ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করার জন্য সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মুফিজুর রহমান পিপিএম ও সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম পুলিশ সদস্যদের কঠোর বার্তা দিয়েছেন।

জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার ফয়সল কাদির নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত সকল প্রিসাইডিং অফিসারকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণে জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর থাকায় ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।

ভোটের দিন ৮৫টি ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ শান্ত থাকার পাশাপাশি যাতে করে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এজন্য প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য ভোটাররা আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে মাঠ পর্যায়ে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এবারের ৯টি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ৯টি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬৩ জন সাধারণ সদস্য পদে ৪২৭ জন ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের সদস্য ১০১ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের চাইতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন।

৫টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে অনেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনে ৯টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী দিলেও ৪টি ইউনিয়নে দলগত হিসাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ৩টি ইউনিয়নে জাতীয় পার্টি ও ১টি ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী রয়েছেন। তার মধ্যে ২নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন, ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের খাজুর গাছ মার্কার প্রার্থী মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রয়েছেন। নির্বাচনে ১নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. ফয়াজ উদ্দিন ও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী তমিজ উদ্দিন মেম্বারের মধ্যে দু’মুখী ২নং লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান জেমসলিও ফারগুশন নানকা, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুর রহিম ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী মাওলানা জামাল উদ্দিনের ত্রি-মুখী, ৩ নং দিঘীরপার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান আলী হোসেন কাজল স্বতন্ত্র প্রার্থী, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মোমিন চৌধুরী ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল বাছিতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ও ৪নং সাতবাঁকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু তায়্যিব শামীম অপর স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুন নূর, ৫ নং বড়চতুল ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হোসাইন চতুলী অপর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল মালিক চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মুবশ্বির আলী চাচাইয়ের মধ্যে ত্রি-মুখী, কানাইঘাট সদর ইউনিয়নে বর্তমান স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান মামুন রশিদ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রভাষক আফসর আহমদ চৌধুরী, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সামছুল ইসলাম বাবুল মোহরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সারওয়ার ফারুকী, ভোটের লড়াইয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ত্রি-মুখী প্রতিদ্বন্দ্বীতা হতে পারে।

৭ নং দক্ষিণ বানীগ্রাম ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুদ আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী লোকমান আহমদ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল রানা চৌধুরীর মধ্যে চতুর্থ মুখী ও ৮নং ঝিঙ্গাবাড়ী এবং ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে আঞ্চলিকতার টানে জয়পরাজয় হবে।

তবে ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নে ভোটের লড়াইয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান মাস্টার আবু বক্কর, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রহমান, আব্দুল বাসিত বেলাল, আবু সালেহ আহমদ, কবির উদ্দিন এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সায়েম আহমদ। এই ইউনিয়নে ১০ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে দলকে ছাপিয়ে এবারের নির্বাচনে এই ইউনিয়নে আঞ্চলিকতা ও পরগনা প্রতা জয়-পরাজয়ে নিয়ামক শক্তি হিসাবে কাজ করছে। ভোটারদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে সর্বাধিক ১৫জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এ ইউনিয়নের নির্বাচনে বরাবরের মতো আঞ্চলিকতাকে ভর করে জয় পরাজয় নির্ভর করবে।

Development by: webnewsdesign.com