এক পা দিয়ে ভ্যানের চাকায় চলছে রবিউলের সংসার

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১ | ৫:৩৪ অপরাহ্ণ

এক পা দিয়ে ভ্যানের চাকায় চলছে রবিউলের সংসার
apps

দারিদ্র্যতার কাছে হার মানতে রাজি নয় রবিউল ইসলাম (৪৫)।পঙ্গু ব্যক্তি সমাজের বোঝা নয় বরং কঠোর পরিশ্রম তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। দিনাজপুরের হাকিমপুর(হিলি) উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের নওনাপাড়া গ্রামের দরিদ্র রবিউল ইসলাম তারি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এক পা দিয়ে ভ্যানের চাকায় চলছে তার সংসার। রবিউলের জীবনী থেকে আমাদের অনেকেরই শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

হাকিমপুর উপজেলা সদর থেকে দুই আড়াই কিলোমিটার পূর্বদিকে নওনাপাড়া গ্রামের মৃত শহীদ মিয়ার ছেলে রবিউল ইসলাম। জন্মের পর থেকে বাম পা অকেজো অর্থাৎ পঙ্গু। ডান পা আর লাটির উপর ভর দিয়ে চলাফেরা করে রবিউল। ছোট বেলা থেকে দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করে বড় হয়েছে সে। অনেক কষ্টের জীবন সংসার তার। বাবা মারা যাওয়ার পর বর্তমান পরিবারে এখন ৬ (ছয় জন) সদস্য। এদের সবার খাবার ও চাহিদা মেটাতে হয় তাকে। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি রবিউল। তাই বাধ্য হয়ে এক পা দিয়ে চার্জার ভ্যান চালিয়ে প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে তার। প্রায় তিন বছর আগে স্হানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার পঙ্গু ভাতার ব্যবস্হা হয়েছে। কিন্তু পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় তার দাবি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সরকারি জায়গাসহ একটি ঘর।

বাংলাহিলি বাজারে হঠাৎ করে দেখা হয়, এক পা দিয়ে চার্জার ভ্যান চালানো রবিউল ইসলামের সাথে। পিছনে থেকে ডাক দিলাম তাকে। কাছে গিয়ে দেখলাম ডান পা ভ্যানের উপরে থাকলেও বাম পা অকেজো হওয়ায় লাঠির উপর ভর দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। তাই লাঠিটা ভ্যানের যাত্রী বাসা সিটের সাথে বেধে রেখেছে। কথা হয় তার সাথে রবিউল বলেন, জন্মের পর থেকে আমার এক পা অকেজো। খুব কষ্টের জীবন আমার। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের একমাত্র উপার্জন ব্যক্তি আমি। আমার পরিবারে বর্তমান ছয় জন সদস্য। প্রায় ১০ বছর যাবৎ এভাবেই এক পা দিয়ে ভ্যান চালায়। সারাদিন শেষে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকমে সংসারটা চলতে হয়। বহুবার চেয়ারম্যান এর কাছে গেছি সরকারি একটা ঘরে জন্য কিন্তু দেয়নি। শুধু বলে বরাদ্দ আসলে দেওয়া হবে। আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। তাই আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্যারের কাছে একটা সরকারি ঘরের দাবি করছি। সরকারের কাছে অনুরোধ আমাকে যদি একটা বাড়ির ব্যবস্থা করে দিত তাহলে আমার জন্য অনেক ভালো হতো।

অত্র ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেন (লিটন) বলেন, রবিউল আমার গ্রামের ছেলে। জন্মের পর থেকে সে পঙ্গু কিন্তু তার স্বভাব চরিত্র ভালো। আমি তাকে খুব ভালো ভাবে চিনি। ছোট বেলা থেকে খুব কষ্টে তার জীবন গড়া। বর্তমানে সে চার্জার ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। সরকারি একটি ঘর পেলে তার জন্য খুব ভালো হবে।

হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, রবিউল ইসলাম বোয়ালদাড় ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আমি তাকে খুব ভালো ভাবে চিনি। সত্যিই সে এক পা দিয়ে চার্জার ভ্যান চালিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালায়। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পঙ্গু ভাতার কার্ড এর ব্যবস্হা হয়েছে। সরকারি ঘরের জন্য উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। পরবর্তীতে সরকারি ঘরের বরাদ্দ আসলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রবিউল ইসলামকে একটি ঘরের ব্যবস্হা করে দেওয়া হবে।

Development by: webnewsdesign.com