বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ইউক্রেনের সেভেরোডোনেটস্ক শহরে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার বেসামরিক মানুষ

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২ | ৪:৩৯ অপরাহ্ণ

ইউক্রেনের সেভেরোডোনেটস্ক শহরে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার বেসামরিক মানুষ
apps

ইউক্রেনের সেভেরোডোনেটস্ক শহরে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ আটকে পড়ার পর জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রয়োজনীয় সরবরাহ শেষ হয়ে আসছে। অনেকেই আজট নামের একটা রাসায়নিক কারখানায় নিচে বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছে।

শহরটি থেকে বের হওয়ার সর্বশেষ সেতু এই সপ্তাহের শুরুর দিকে ধ্বংস করে দিলে ১২ হাজারের মত মানুষ আটকা পড়ে যায় সেখানে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই সেভেরোডোনেটস্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া রাশিয়ার সৈন্যদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা স্যাভিয়ানো আব্রু বলেছেন, “পানিস্বল্পতা এবং স্যানিটেশন বড় চিন্তার বিষয়। এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট উদ্বেগের বিষয় কারণ মানুষ পানি ছাড়া দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকতে পারবে না।”

আব্রু আরও বলেন, পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলে অবস্থিত এই সেভেরোডোনেটস্ক শহরে খাদ্য এবং স্বাস্থ্য সেবা সামগ্রীর সরবরাহ শেষ হয়ে আসছে। জাতিসংঘ আশা করছে যারা আটকে আছে তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার, কিন্তু যেভাবে লড়াই চলছে তাতে ধরে নেওয়া হচ্ছে তাদের এজেন্সিগুলো সেখানে প্রবেশ করতে পারছে না অথবা এমন কোনও নিরাপদ নিশ্চয়তা পাচ্ছে না যে সেখানে যেসব বেসামরিক নারী, শিশু এবং বয়স্করা রয়েছেন তাদের কাছে পৌঁছানো যাবে।

রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল স্থানীয় সময় বুধবার একটি মানবিক করিডোর খুলবে যাতে করে আজট প্ল্যান্টের নিচে যারা আটকা পড়েছে তারা বের হয়ে আসতে পারে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এমন কোনও নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়নি যে, কোনও পরিকল্পিত নিরাপদ রাস্তা দিয়ে বেসামরিক লোকদের রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুধবার একজন রাশিয়া-পন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকর্তা অভিযোগ করেন রাসায়নিকের ওই কারখানা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে ইউক্রেনিয়ার বাহিনী “সম্পূর্ণভাবে বাধা দিচ্ছে।”

“আজটে জঙ্গিরা উদ্ধার প্রক্রিয়াকে ব্যহত করার চেষ্টা করছে। কারখানার এলাকা থেকে জঙ্গিরা একটা মর্টার এবং একটা ট্যাংক থেকে গুলি করা শুরু করেছে,” টেলিগ্রামকে এসব কথা বলেছেন রোডিওন মিরোশনিক যিনি নিজেকে লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক মস্কোর রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন। তবে বিবিসি এই অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি। রাশিয়ার মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী আজট কারখানায় বেসামরিক লোকজনকে মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।

রাশিয়ার কয়েকটি টিভি চ্যানেল ইউক্রেনীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তারা বেসামরিক লোকজনকে আজট কারখানার ভেতরে নিয়ে গেছে। গ্যাজপ্রম মালিকানাধীন এনটিভি বলছে, কারখানার ভেতরে শিশুসহ ১২০০ এর মতো লোক থাকতে পারে। যখন বেসামরিক মানুষেরা আজট কারখানায় আশ্রয় নিয়েছে তখন রাশিয়া এবং ইউক্রেনের বাহিনী শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য লড়াই করছে। সেভেরোডোনেটস্ক শহর দখলের ফলে লুহান্সক অঞ্চলের প্রায় পুরো এলাকার উপর মস্কোর নিয়ন্ত্রণ এনে দেবে। এই এলাকার বেশিরভাগ অংশ রাশিয়ার সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

শহরের মেয়র টেলিগ্রামে সর্বশেষ জানিয়েছেন সেভেরোডোনেটস্ক এর উপর এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ আছে। “চেষ্টা করা হচ্ছে শত্রুদের সিটি সেন্টারের দিকে ফেরত পাঠানোর। এটা একটা স্থায়ী পরিস্থিতি যেটা কিনা আংশিক সফলতা এবং কৌশলগত পশ্চাদপসরণম” বলেছেন ওলেকসান্দ্রা স্টারউক।

সেভেরোডোনেটস্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ? এই শহরটিকে দখল করার ওপর রাশিয়া খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে কারণ সেভেরোডোনেটস্ক এবং এর সংলগ্ন আরেকটি শহর লিসিচানস্ক মিলে পুরো জায়গাটি হচ্ছে শিল্পকারখানা-সমৃদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র।

এই দুই জোড়া শহর দখল করতে পারলে রাশিয়ার হাতে লুহানস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে। এই অঞ্চলের কিছু অংশ ইতোমধ্যেই রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এই লুহানস্ক এবং পার্শ্ববর্তী ডোনেটস্ক- যা দক্ষিণ ইউক্রেনের মারিউপোল থেকে উত্তরে রুশ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত- মিলেই হচ্ছে ডোনবাস অঞ্চল, যা রাশিয়া তাদের ভাষায় মুক্ত করতে চায়, এবং এটা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের শীর্ষ অগ্রাধিকার। আর মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে ডোনবাসে রাশিয়া যদি সাফল্য পায়- তাহলে মস্কো পুরো এলাকাটিকেই একসময় নিজের অংশ করে নেবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

Development by: webnewsdesign.com