টাকার বিনিময়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সোহাগের পরিবর্তে কারাভোগ করছেন সোহাগ নামের আরেক ব্যক্তি। সাজাপ্রাপ্ত মূল আসামি সোহাগ এতদিন ছিলেন জেলের বাইরে। গত রোববার রাতে রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। কাওরান বাজারে র্যাব সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান। তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে মূল আসামি সোহাগ এতদিন পলাতক ছিলেন। তার পরিবর্তে সাজা ভোগ করছিলেন তারই ফুফাতো ভাই সোহাগ। সম্প্রতি রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসল সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১০ সালে কদমতলী থানাধীন আউটার সার্কুলার রোডে নোয়াখালী পট্টিতে নান্নু জেনারেল ষ্টোর এর সামনে হুমায়ুন কবির টিটু’কে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই আলোচিত হত্যাকান্ডে জড়িত সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ, মামুন, সোহাগ ওরফে ছোট সোহাগসহ আরও অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চার জনকে আসামি করা হয়। এএসপি আ ন ম ইমরান খান বলেন, এজাহারভুক্ত আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হুমায়ুন কবির টিটু’কে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। টিটু-র মাথার ডান পাশে গুলি লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়।
পরবর্তীতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে ভিকটিমের পরিবার বাদি হয়ে কদমতলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি সোহাগ ২০১০ সালে গ্রেপ্তার হলেও পরবর্তীতে সে জামিনে বেরিয়ে আসে। এরপর থেকে সে পলাতক ছিল। ২০১৭ সালে আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ এর অনুপস্থিতিতে আদালত রায় প্রদান করে তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, রায় প্রকাশের পর দণ্ডপ্রাপ্ত আসল সোহাগ পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার ফুফাতো ভাই নকল সোহাগ মো. হোসেনকে ২০১৮ সালে আদালতে আত্মসমর্পন পূর্বক জামিন আবেদন করে। এ সময় আদালত জামিন না-মঞ্জুর করে নকল সোহাগকে কারাগারে পাঠায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদকাসক্ত নকল সোহাগ মাসিক ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কারাগারে যায়। নকল সোহাগ মাদকাসক্ত হওয়ায় ছোটবেলা থেকে আসামি সোহাগের সাথে তার সখ্যতা ছিল। এ সময় নকল সোহাগকে ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে বের করে নিয়ে আসার কথা বলে আস্বস্ত করেন আসল সোহাগ। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজন জেল খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। আদালত তখন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চায়। প্রতিবেদনে ২০১০ সালে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি সোহাগ আর বর্তমানে হাজতে থাকা নকল সোহাগের বিষয়টি উঠে আসে।
২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে র্যাব-১০ এর অপারেশন টিম ও র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা টিম তাকে গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে। এ সময় বিশেষ দায়রা আদালত ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ প্রকৃত আসামির সোহাগের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। আসামি সোহাগ ইতোমধ্যে দেশত্যাগের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে পাসপোর্ট তৈরি করে দুবাইয়ের ভিসা সংগ্রহ করে। বিদেশ যেতে গত রোববার করোনার ভ্যাকসিন নিতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল মিডফোর্ড হাসপাতাল আসে। এ সময় মিডফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন আসামি সোহাগকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। আসামি সোহাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ২টি হত্যা মামলা, ২টি অস্ত্র মামলা ও ৬টি মাদক মামলাসহ মোট ১০টি মামলা রয়েছে বলে জানান
Development by: webnewsdesign.com