দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ’র সিলেট কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সাংবাদিক মঈন উদ্দিন মিলনের বসতবাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে বাড়ির পাঁচ নারীসহ অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ৬টার দিকে উপজেলার কলাবাড়ী গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ধলাই সেতু ধ্বংসকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফয়জুল, তারা মিয়া ও তজই হাজীসহ তাদের ১৫-২০ জনের একটি বাহিনী অতর্কিত এ তাণ্ডবলীলা চালায়।
আহতরা হলেন- করিম মিয়া(৫৫), রফিক মিয়া(৪৭), মঈন উদ্দিন মিলন(৪২), আমির মিয়া(৩৭), হোসেন আহমদ(২৯), ফজিরুন নেছা(৩২), রুমেনা বেগম(১৭), রাহেনা বেগম, আসমা আক্তার ও দুলভি বেগম।
স্থানীয়রা জানান, দিনের শেষের দিকে সবাই যখন ইফতারের প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত। ঠিক তখনই মঈন উদ্দিন মিলনের বাড়ির সীমানা ঘেঁষা বাঁশের বেড়া তুলতে শুরু করেন প্রতিবেশী ফয়জুল আলী, তেরা মিয়া, তজই হাজী ও জৈনউদ্দিন গং। এসময় মিলনের বড় ভাই রফিক উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে বেড়া তোলার কারণ জানতে চাইলে আগে থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ওঁৎপেতে থাকা ফয়জুল বাহিনী তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তিনি আত্মরক্ষার্থে বাড়ির দিকে দৌড় দিলে হামলাকারীরাও পেছনে ধাওয়া করে। পরে বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে তাকে বেদম মারপিট করা হয়। এসময় তাকে রক্ষার্থে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা চালানো হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা ঘরে ঢুকে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এতে গুরুতর আহতন সাংবাদিক মিলন, তার বড় ভাই, ভাবী, ভাতিজাসহ একই বাড়ির ১০ জন। হামলাকারীরা যাওয়ার সময় নগদ ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা লুট করে নেয় বলে অভিযোগ আহত সাংবাদিক পরিবারের।
স্থানীয়রা আরও বলেন, হামলাকারীরা সাংবাদিক মিলনের প্রতিবেশী। দীর্ঘদিন থেকে তাদের মধ্যে জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এর আগেও একাধিকবার ফয়জুল বাহিনী হামলা করে বিরোধীয় জায়গাটি তাদের জবর দখলে রেখেছে।তারা বলেন, স্থানীয় ধলাই সেতু বিনষ্টের মূল হোতাদের সাথে হামলাকারীদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তারা তিনজনই ওই চক্রের সক্রিয় সদস্য। ধলাই সেতু নিয়ে কী একটা নিউজ নাকি প্রকাশ হয়েছে। ওই নিউজের কারণে হয়তো সাংবাদিক মিলনের পরিবারের উপর হামলা হতে পারে।
জানা যায়, সম্প্রতি ধলাই সেতুর নিচ থেকে বালু-পাথর উত্তোলন ও পুলিশ-প্রেসক্লাবের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজীর অভিযোগ উঠে একই প্রেসক্লাবের এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। এরপর তিনি ও আরো তিন সাংবাদিক প্রেসক্লাবে অনুরূপ অভিযোগ উত্থাপন করে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে অনুরোধ জানান। কিন্তু তারা ব্যবস্থা নিবো-নিচ্ছি বলে ২৫দিন কাল ক্ষেপণ করলে বুধবার (০৫ এপ্রিল) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে একটি স্ট্যাটাস দেন। পরদিন বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) সিলেটের দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ’র অনলাইন ভার্সনে ‘বালু-পাথর খেকোদের তাণ্ডবে ধ্বংসের পথে ধলাই সেতু’ শিরোনামে এবং দৈনিক জাগ্রত সিলেট পত্রিকায় ‘ব্রিজের নিচ থেকে চলছে বালু ও পাথর উত্তোলন, শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। একই দিনে সিলেটের সর্বাধিক পঠিত অনলাইন গণমাধ্যম (নিবন্ধিত) সিলেটভিউ টোয়েন্টিফোর ডট নিউজে ‘ধলাই সেতু কি ধ্বংস করেই ছাড়বে বালু-পাথরখেকোরা?’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন জনপ্রিয় নিউজ পোর্টালে পাথর খেকো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ ওই নামধারী সাংবাদিকের স্বার্থে বড় ধরনের আঘাত আসলে সে ফয়জুল বাহনীকে হামলার কাজে ব্যবহার করে।
মূলত, সাংবাদিক মিলন পরিবারের সাথে প্রতিবেশীর বিরোধটাকে পুঁজি করে ফয়জুল, তারা মিয়া ও তজই হাজীকে হাত করে। তাদেরকে খুব সহজে জায়গা পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়েছে। জোরপূর্বক জায়গার দখল নিতে পরামর্শ দিয়েছে। হামলা-মামলা সব সে নিজ দায়িত্বে ও অর্থে মোকাবেলা করবে এমন আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে হামলায় নামিয়েছে।
হামলার পর থেকে সাংবাদিকের ইন্ধনের বিষয়টি এলাকায় চাউর হয়। কারণ, হামলার আগে ফয়জুল দু-এক জায়গায় এমন গল্প করেছেন যে, ‘খুব শীঘ্রই তারা জায়গাটির দখল নিচ্ছেন, তাদের সাথে একজন বড় মাপের সাংবাদিক আছে, এখন হামলা করলে আইনী ঝামেলা নেই ইত্যাদি।’
এব্যাপারে জানতে সাংবাদিক মঈন মিলনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ন্যায়ের পক্ষে ছিলাম বলেই আমার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। পরিবারের ১০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, চিহ্নিত বালু-পাথরখেকো কথিত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছে। এখন সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ভয়ে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওই নামধারী সাংবাদিক আমার পরিবারের উপর হামলা করিয়েছে। আমি হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ হামলার ঘটনা নিশ্চিত করে কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিল্লোল রায় জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Development by: webnewsdesign.com