মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় সরকারি ধান কেনা শুরুর প্রথম ২৯ দিনে খাদ্যগুদাম কর্তপক্ষ মাত্র ২৩০ টন ধান কিনতে পেরেছে। ধান কেনা কম হওয়ার পেছনে কৃষিবিভাগের গাফলতি, অকৃষকদের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্তি, আদ্রতার ঝামেলা অন্যতম কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলায় ধান কেনা শুরু হয়েছে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে। লটারিতে উপজেলার তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৪ শত কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সরকারিভাবে ১ হাজার ৯ শত মেট্রিক টন ধান ১ হাজার ৪০ টাকা মূল্য দরে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সংগ্রহ কার্যক্রম ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। কিন্তু দেড় মাস আগে কমলগঞ্জে কৃষকদের গোলায় ধান উঠলেও সরকারি খাদ্য গুদামগুলো কৃষকদের কাছ হতে ধান কিনতে পারছে না। ১৯০০ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে ৩৫ দিনে মাত্র ২৩০ টন কিনেছে খাদ্য বিভাগ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ধান সংগ্রহ কম হচ্ছে কেন তা অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে নানা অনিয়মের চিত্র। কৃষি বিভাগ যে কৃষকদের তালিকা করেছে তাতে রয়েছে অনিয়ম। প্রকৃত কৃষকদের নাম বাদ দিয়ে অকৃষকদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনেক কৃষক জানেন না তাদের নাম কৃষকদের তালিকায়। আবার অনেক কৃষকদের ধান দেওয়ার মতো সামর্থ নেই। আবার বিদেশে অবস্থান করা ব্যক্তির নামও কৃষকের তালিকায়। এ ছাড়া আদ্রতার একটি প্রভাব পড়েছে ধান কেনায়। গ্রামের বাজারে কৃষকরা সহজে ধান বিক্রি করতে পারেন কিন্তু গুদামে ধান ১৪ ডিগ্রি আর্দ্রতা না থাকলে ধান রাখেন না খাদ্য গুদাম কর্মকর্তারা। এসব ঝামেলা জড়াতে চান না কৃষকরা।
বাজারে ধানের মণ বর্তমানে ৭০০ টাকা। বিপরীতে সরকারি মূল্য ১ হাজার ৪০ টাকা। মণপ্রতি ৩৪০ টাকা বেশি। দূর থেকে নির্ধারিত ৫০০ কেজি ধান নিয়ে এসে আবার নিয়মনীতি মেনে ধান দিয়ে লাভের পার্থক্য খুব বড় হয় না। এ কারণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কৃষকেরা।
গুদাম সূত্র জানায়, গুদামে ধান আসার মাত্রা খুবই ধীরগতিতে এগোচ্ছে। কেনার গতি না বাড়লে নির্ধারিত সময়ে অর্ধেক লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ধান বিক্রিতে অনাগ্রহের কারণ জানতে কথা হয় বেশ কয়েকজন তালিকাভুক্ত কৃষকের সঙ্গে। তাদের একজন আব্দুল মালিক। তিনি উপজেলার রহমিপুর ইউনিয়নের বড়চেক গ্রামের কৃষক। তিনি তালিকায় মাঝারি কৃষক।
আব্দুল মালিক বলেন, আমি জানতামই না আমার নাম তালিকায় আছে। কেউ জানায়নি। তাই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি।
একই গ্রামের তালিকাভুক্ত কৃষক রুবেল মিয়া বিদেশ থাকেন। অথচ তার নাম কৃষকের তালিকায়। একই ভাবে কমলগঞ্জ পৌরসভা, ইসলামপুর, শমসেরনগর, আলীনগরসহ অন্যান্য ইউনিয়নগুলোর কৃষক তালিকায় অনিয়ম করা হয়েছে।
ভানুগাছ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সবিদা দেবী জানান, সোমবার পর্যন্ত তার গুদামে ১০০ টন ধান কেনা হয়েছে। তিনি আরো জানান, অনেক কৃষক নিদিষ্ট সমপরিমাণ ধান দিতে পারছেন না। আদ্রতা বজায় রাখতে গিয়ে কিছু কিছু কৃষক ধান দিতে চাননি।
একইভাবে শমসেরনগর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকির আহমেদ জানান, তার গুদামে ১৩০ টন ধান কেনা হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার কমলগঞ্জে আমন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯০০ মেট্রিক টন। ১৪০০ জন কৃষকের কাছ থেকে কেনা হবে এই ধান। কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে লটারির মাধ্যমে। প্রতি কৃষকের জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ কেজি ধান বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতি কেজি ধানের মূল্য ধরা হয়েছে ২৬ টাকা। কেনার ক্ষেত্রে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ ধানের আদ্রতা নির্ধারণ করেছে ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া বিজাতীয় পদার্থ পয়েন্ট ৫ শতাংশ, ভিন্ন জাতের মিশ্রণ ৮ শতাংশ, অপুষ্ট ও বিনষ্ট দানা ২ শতাংশ ও চিটা দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত হলেও ধান ক্রয়ে কোনো বাধা থাকবে না।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছে। যোগদানের পর ইউনিয়ন ওয়ারী দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বলেছি কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য। যাতে করে কৃষকরা দ্রুত ধান গুদামে দেন। কৃষক তালিকায় অনিয়মের বিষয়টি সর্ম্পকে তিনি বলেন, আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি আশেকুল হক বলেন, ঠাণ্ডার কারণে কৃষকদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের বলে দিয়েছি কৃষকদের সঙ্গে যোগযোগ করে ধান দ্রুত কেনার জন্য। অনিয়মের বিষয়টি তিনি দেখবেন। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের অভিযান সফল হবে।
Development by: webnewsdesign.com