বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে নারীদের যথাযথ মর্যাদা দিতে, তাঁদের কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ও তাঁদের উপযুক্ত মূল্যায়নের জন্যই প্রতিবছর ৮ই মার্চ বিশ্ব নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল ১৯৭৫ সালে, জাতিসংঘের কাছ থেকে। এরপর থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম উদযাপের দ্বারা উদ্যাপন করা হচ্ছে এই নারী দিবসকে। কোথাও-কোথাও এটি উদ্যাপিত হয় একটি আনন্দ-উৎসব রূপে, নারীদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য; আবার কোথাও-কোথাও উদযাপন করার মূল কারণ হচ্ছে নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি নিশ্চিত করা, তাদের ন্যায্য অধিকার দেয়া। যেভাবেই উদযাপিত করা হোক না কেন এর মূল লক্ষ্যই হলো নারী ও পুরুষের বাহ্যিক ভেদাভেদ দূর করে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা করা, একটি আদর্শ সমাজ গঠন করা।
বাংলাদেশেও প্রতিবছর নানারকম কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছে এ দিনটি। এসব কার্যক্রম সমূহ মূলত নারীদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তি কে উদ্দেশ্য করেই। তবে এ কার্যক্রমের প্রয়োগ কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে তা প্রশ্নের সম্মুখীন! এদেশে এখনও নারীরা একা পথ চলতে ভয় পায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই কুৎসিতরূপী ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা। উচ্চশিক্ষা অর্জনে তাঁরা বাঁধার মুখে পড়ছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নারীরা। যদিও সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলে যায় তবুও বদলায় নি কিছু মানসিকতা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থা। পুরুষশাসিত সমাজে আজও নানা ভাবে নারীকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছেনা। বাল্যবিবাহের কবলে পড়ে অকাল মাতৃত্বের শিকার হচ্ছে এখনও নারীসমাজ।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ থেকে মুক্তির পথ সুগম করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। কোন ভাবেই ভোলা যাবে না নারীরা এ সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁরাও অপরাজেয়! কর্মক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা যাতে বৃদ্ধি পায় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। সমাজে সঠিক শিক্ষা ছড়িয়ে কুসংস্কার ও বাল্যবিবাহ নির্মূল করতে হবে। প্রলচিত আইনের যথাযথ প্রয়োগের দ্বারা ধর্ষকশ্রেণিকে নির্মূল করতে হবে। সর্বোপরি, যথাযথ সকল পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে নারী মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবেই সফল হবে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে নিয়ে সকল কার্যক্রম সমূহ। একদিন এ সমাজেও নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। সোনার বাংলা হবে একটি আদর্শ সমাজের রূপরেখা।
Development by: webnewsdesign.com