জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন দেয়া হয়েছে। হটাৎ করেই পরীক্ষার রুটিন দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এ নিয়ে আতংকের মধ্যে রয়েছেন অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও।
বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ক্যাম্পাস আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি খোলার সম্ভাব্য তারিখ কে সামনে রেখে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ম বর্ষের ১ম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে গত ২রা জুলাই প্রকাশিত জবির একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সরূপ বিজ্ঞপ্তির ৪ নং পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে মিডটার্ম বা কোনও পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া যাবে না এবং ঐ বিজ্ঞপ্তির ৭ নং পয়েন্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ক্যাম্পাস খোলার পর ৩ সপ্তাহ রিফ্রেশমেন্ট ক্লাস রাখা হবে।
পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, প্রায় একবছর পর ক্যাম্পাস খুলছে, ভাবতেই ভালো লাগছে। আমরা যাতে কোনো সেশনজটে না পড়ি সেদিক বিবেচনায় রেখে আমাদের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ক্যাম্পাস খোলার সাথে সাথে আমাদের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা নেয়া হবে তা স্যাররা আমাদের আগে থেকেই অবহিত করেছিলেন। সে অনুযায়ী আমরা পড়াশোনা করেছি। কিছু শিক্ষার্থীর মেস সমস্যা ও পরীক্ষার ফি দেয়া নিয়ে সমস্যা ছাড়া বাকি সবকিছু ঠিকঠাক আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, কিছুদিন সময় দিলে ভাল হত,আমাদের মেস নেওয়া সহ নানান ঝামেলা থেকে একটু বিস্তার পাওয়া যেত।
পরীক্ষার নেয়ার সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ১৫ দিন রিভিউ ক্লাস দরকার ছিলো, তারপর পরীক্ষা। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলার আগেই পরীক্ষার রুটিন দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাস চলাকালীন সময়েই ক্লাসে অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। আমাদের ৫টি কোর্সের মধ্যে এমন দুইটি কোর্স আছে যেগুলোর তেমন কিছুই শেষ হয়নি। যারা কলেজ থেকে এসেছে তারা আরবি ভাষা তেমন পড়েনি। যেহেতু স্যার শেষ করেনি আমাদের জন্য পাশ মার্ক তোলা কষ্টকর হয়ে পড়বে। অন্যান্য বছর সব ক্লাস করেই এই কোর্সে কলেজ ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীরা ফলাফল খারাপ করে, সেখানে আমাদের অবস্থা আরো শোচনীয়।
পরীক্ষা নেয়ার এই উদ্যোগকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই ভালোভাবে নিচ্ছেন না। কারণ হিসেবে তারা বললেন, ফেব্রুয়ারিতে ক্যাম্পাস খোলার কয়েক দিনের মধ্যে পরীক্ষা শুরু হলে প্রস্তুতি নিতে সময় পাবো না। তাছাড়া করোনার কারণে যে বাসায় থাকতদাম সে বাসা ছেড়ে দেয়ায় নতুন বাসায় উঠতে হবে। ফলে পরীক্ষার জন্য মানসিক ভাবেও প্রস্তুত থাকব না। তারা উল্লেখ করে বলেন, করোনায় উপাচার্য স্যার বিভিন্ন গনমাধ্যমে বলেছিলেন, ক্যাম্পাস খোলার পর কয়েকটি রিফ্রেশমেন্ট ক্লাস নিয়ে এরপর পরীক্ষা নেয়া হবে। আমরা তো সে আশায় ছিলাম।
রুটিন দেয়ার বিষয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মোবারক হোসেন বলেন, নতুন একটা ব্যাচ আসার আগেই আমরা পরীক্ষা নিতে চাই। নাহলে শিক্ষার্থীরা ঝটে পড়বে। আমাদের এখন কিন্ত ফাইনাল ইয়ারদের পরীক্ষা চলছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এভাবেই ওদের এক্সাম নিব। ওদের ভালোর জন্যই এক্সাম নেওয়া হচ্ছে এবং ওদের সাথে কথা বলেই নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধা দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা দরখাস্ত দিলে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানাব।
এ ব্যাপারে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল আমিনের সাথে মুঠোফোনে সংযুক্ত হলে তিনি বলেন, ‘করোনার আগেও আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ ক্লাস হয়েছে এবং করোনার মধ্যেও আমাদের শিক্ষকরা অনেক ক্লাস নিয়েছেন। এরপরও রিফ্রেশমেন্ট ক্লাস যদি কোনো কোর্সে নেয়া লাগে নিবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে আর অনার্স-মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষাও নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ক্যাম্পাস খুলা হলে চাপ পড়ে যাবে। স্বাস্থ্যবিধি নেনেই এ পরীক্ষা নেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।’
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ. কে. এম. আক্তারুজ্জামান বলেন, এই বিষয়ে আমার সাথে কথা হয়নি। আমি অবগত নই। হয়তো ভিসি স্যারের সাথে কথা বলে ঠিক করা হয়েছে। প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত একাডেমিক কাউন্সিলে হয়নি। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। মার্চে তো তাদের ভর্তিই শেষ হয়েছে। আর ইসলামিক স্টাডিজের ভর্তি সবার শেষ এ হয়। মার্চে তো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধই হয়ে গেলো তাহলে ক্লাস শেষ হলো কবে?
পরীক্ষার রুটিন দেয়ার বিষয়টি উপাচার্যকে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘সরকারের ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলা হবে, খুলার পর কীভাবে রিফ্রেশমেন্ট ক্লাস হবে, কীভাবে পরীক্ষা হবে এবং ক্লাস-পরীক্ষা হলে কীভাবে দূরত্ব বজায় থাকবে সেসব বিষয়ে ডিনদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে, পরিবহনে যাতে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় না হয় সেজন্য একটি রোটেশন ব্যবস্থা থাকবে। সপ্তাহে পাঁচদিন পাঁচ ইয়ার আসবে। অর্থাৎ যেদিন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা আসবে সেদিন অন্য কোনো বর্ষের শিক্ষার্থীরা আসবে না। তবে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শিক্ষার্থীরা চাইলেই রিফ্রেশমেন্ট ক্লাস হবে। কোনো বিভাগে যদি রুটিন দেয়া থাকে তাহলে সেটি অবশ্যই পরিবর্তন হবে। ক্লাস-পরীক্ষা বা যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।’
উল্লেখ্য যে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর দরুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও অনির্দিষ্টকালের জন্য সরাসরি ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বেগবান করার লক্ষ্যে ইউজিসির নির্দেশনায় জবিতে গত ১২ জুলাই থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। ইতিমধ্যে চাকরী প্রত্যাশীদের আটকে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।
Development by: webnewsdesign.com