চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সাধারণ সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন ছোটো খাটো রোগের ক্ষেত্রে অনেকেই নিজে নিজেই রোগ নির্ণয় ও ওষুধ সেবন করে থাকেন। এটা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। শরীরে বাসা বাঁধতে পারে জটিল ও ভয়ঙ্কর রোগ।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল্লাহ রাসেল বলেন, আমাদের শরীরে যখন কোনো রোগের উপসর্গ দেখা দেয়, তখন আমরা নিজেরাই রোগ নির্ণয় করি। একজন স্বাভাবিক ব্যক্তি তার শরীরের রোগের উপসর্গ বুঝে অনভিজ্ঞ ফার্মেসি দোকানদারের কাছ থেকে ওষুধ কিনে সেবন করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওই ওষুধগুলো বেদনানাশক হয়ে থাকে। এতে সাময়িক কিছুটা উপকার হলেও শরীরে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নিজেরা রোগ নির্ণয় করে ওষুধ খাওয়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে?-এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. সাইফুল্লাহ রাসেল বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। ফার্মেসি থেকে বেদনানাশক ওষুধ সেবনের ফলে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। যেমন, আমাদের সবারই প্রায় কমবেশি জ্বর হয়ে থাকে। শরীরে জ্বর বিভিন্ন কারনে হয়। শরীরের ভেতরে যখন কোনো ইনফেকশন থাকে সেই ইনফেকশনের কারণে ও জ্বর হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অনেক রোগীই যখন দেখেন যে দুই তিন দিনেও তার জ্বর ভালো হচ্ছে না সেক্ষেত্রে তিনি অনেক অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। যেমন- এজিথ্রোমাইসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এসব ওষুধ সেবনের ফলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জটিল রোগ করোনা। এক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি-কাশির ওষুধ না জেনে খেলে কী ক্ষতি হতে পারে?- এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. মো. সাইফুল্লাহ রাসেল বলেন, সাধারণ সর্দি-কাশির লক্ষণ এবং করোনার লক্ষণ প্রায় একই রকম। সেক্ষেত্রে কোন অনভিজ্ঞ ব্যক্তি যদি ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ওষুধ সেবন করেন, তাহলে খুবই ক্ষতিকর হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে, তার কাছ থেকে করোনা ভাইরাস তার পরিবারের কাছে ছড়িয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, বয়স্করা সাধারণত ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন জাতীয় রোগের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার আগে থেকেই খেয়ে থাকেন। এটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। শিশুদের ক্ষেত্রে নিজেরা রোগ নির্নয় করে ওষুধ খেলে কিডনি এবং লিভারের পরিপূর্ণ উন্নতি হয়না। আমরা যখন নিজেদের সিদ্ধান্তে কোন ওষুধ খাওয়ার ফলে কিছুটা ভাল অনুভব করি, তখন ওই ওষুধের প্রতি আমাদের আকর্ষণ বেড়ে যায়। এর ফলে আমরা যখনই আগের ন্যায় শরীরে কোন রোগের উপসর্গ বুঝতে পারি, তখন ওষুধের কোন মাত্রা নির্নয় না করেই সেই ওষুধ খেয়ে থাকি। এটা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। নিজেদের মতো করে ওষুধ খেলে কিডনী, লিভার, হার্টে জটিল রোগ হতে পারে।
গ্যাসের ওষুধ না জেনে খেলে কী ধরণের ক্ষতি হতে পারে?
এ ব্যাপারে ডা. মো. সাইফুল্লাহ রাসেল বলেন, আমাদের দেশে এসিডিটি বা গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার প্রচলন অনেক বেশি। কিন্তু এই গ্যাসের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই ক্ষতিকর। কেউ যদি টানা দুই বছর গ্যাসের ওষুধ সেবন করেন, তাহলে তার অস্টিওপোলেসি ডেভলপ করে। সেটা হলো হাড়কে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে। এতটা ভঙ্গুর যে পতন বা এমনকি হালকা চাপ যেমন বাঁকানো বা কাশির মতো একটি ফ্র্যাকচার হতে পারে। অস্টিওপোরোসিস সম্পর্কিত ফ্র্যাকচারগুলি হিপ, কবজি বা মেরুদণ্ডে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এছাড়া পাকস্থলিসহ পেটের নানা রোগও হতে পারে।
ঘুমের ওষুধ খেলে কি সমস্যা হতে পারে?
আমাদের দেশের বেশিরভাগ ফার্মেসিগুলোতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ঘুমের ওষুধ বিক্রি হয়। কোনো ব্যক্তির দিনের পর দিন ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলে সেটার প্রতি নির্ভরতা বেড়ে যায়। একসময় তার মনে হয় ঘুমের ওষুধ ছাড়া তার ঘুম হবে না।
ডা. মো. সাইফুল্লাহ রাসেল বলেন, ঘুমের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করতে থাকলে লিভার এবং কিডনি জাতীয় নানা রোগ দেখা দেয়। পরবর্তীতে চিকিৎসকদের কাছে গেলেও রোগের উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে অসুবিধা হয়।
ভিটামিন ওষুধে কিডনিতে পাথর
অতিরিক্ত ভিটামিন ট্যাবলেটেও নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। এর কারণে বিভিন্ন মানুষের হাতে পায়ে ব্যথা হতে পারে।
ডা. মো. সাইফুল্লাহ রাসেল বলেন, অতিরিক্ত ভিটামিন-ডি সেবন করলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হয়। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি সেবন করলে দেহের লোহিত রক্তকণিকাকে ধীরে ধীরে অকার্যকর করে দেয়।
কনটেন্ট ক্রেডিট: ডক্টর টিভি
Development by: webnewsdesign.com