জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, মহামারী করোনা প্রতিরোধে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বুকিং দিয়েছে সরকার। করোনা ভ্যাকসিন প্রত্যেককে দুটি করে ডোজ দিতে হয়। তাই তিন কোটি ভ্যাকসিন তিন কোটি মানুষ পাবেন নাকি দেড় কোটি মানুষ তিন কোটি ভ্যাকসিন পাবেন তা পরিষ্কার নয়।
শনিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় ছাত্র সমাজের সাধারণ সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাকি ১৪ থেকে ১৫ কোটি মানুষের জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা কি হবে- দেশের মানুষ তা জানতে চায়। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন কিনতে পারবে না, সাধারণ মানুষ বাঁচাতে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
জিএম কাদের বলেন, করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে যেন কোনো মহল বাণিজ্য করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে। আবার নকল ভ্যাকসিনে যেন সয়লাব না হয়, সেজন্যও সতর্ক থাকতে হবে। করোনা প্রতিরোধের ভ্যাকসিন একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ও পরিবহনে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা পরিষ্কার নয়।
তিনি বলেন, প্রতিটি দুর্যোগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বারবার বলা হয় সবকিছু প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সব কিছু এলোমেলো। তাই করোনা ভ্যাকসিন পরিবহন, সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কারা টিকা পাবেন তার একটি তালিকা প্রস্তুত করা জরুরি। জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি ইব্রাহীম খাঁন জুয়েলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরও বলেন, গোয়েবলসীয় তত্ত্বে একটি মিথ্যা বারবার প্রচার করে সত্যের মতো তৈরি করা হয়। সাবেক সফল রাষ্ট্রনেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে গোয়েবলসীয় তত্ত্বে অপপ্রচার করা হয়েছে। হাইকোর্ট পল্লীবন্ধুকে বৈধ রাষ্ট্র প্রধান স্বীকৃতি দিয়েছেন। বৈধ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেই ৯০ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এবং গায়ের জোরে পল্লীবন্ধুকে স্বৈরাচার বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু ক্ষমতা হস্তান্তরের পর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু সংবিধানের ৭০ ধারা সংসদীয় গণতন্ত্রকে সংসদীয় স্বৈরতন্ত্রে পরিণত করেছে। ৭০ ধারা অনুযায়ী দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারে না সংসদ সদস্যরা। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যারা সরকার গঠন করে সেই দলের প্রধানই সরকার প্রধান হন। তার ইচ্ছের বাইরে কোনো কিছুই করা সম্ভব হয় না। এতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেয়।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরও বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলে দেশ দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে দেশ কখনোই দুর্নীতে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। তিনি বলেন, বিএনপি যৌথ বাহিনী এবং র্যাব গঠন করার মাধ্যমে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালু করেছে। সেই ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির শাসনামলে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছিল না। আমরা দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছি না, আমরাই দেশের মানুষকে সুশাসন ও আইনের শাসন উপহার দেব।
এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ক্ষমতায় এসে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দেশের ছাত্র রাজনীতি কলুষিত করেছে। ছাত্র সংগঠনগুলোকে তাদের লেজুরবৃত্তি করতে বাধ্য করেছে। ছাত্র সংগঠনগুলোকে পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করেছে। ছাত্রদের দলবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ার জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দায়ী। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো। কিন্তু বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে নেতৃত্ব তৈরির ধারাবাহিকতা বন্ধ করেছে। দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র সমাজকে আন্দোলনমুখী হতে আহ্বান জানান বাবলু।
অনুষ্ঠানে জাতীয় ছাত্র সমাজ সভাপতি ইব্রাহীম খাঁন জুয়েল সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বক্তব্য দেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুস সালাম, মোস্তফা আল মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, হুমায়ুন খান, মাখন সরকার, আনোয়ার হোসেন তোতা, দফতর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, দফতর-২ এমএ রাজ্জাক খান, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হক নুরু, যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, ফয়সাল দিদার দিপু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সাত্তার গালিব, মো. ফারুক শেঠ, আলমগীর হোসেন ও মিজানুর রহমান দুলাল।
জাতীয় ছাত্র সমাজের অন্যান্য নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- শাহ ইমরান রিপন, মারুফ ইসলাম তালুকদার প্রিন্স, আরিফুল ইসলাম, ফয়সাল রানা, মো. রুহুল আমিন গাজী বিপ্লব।
Development by: webnewsdesign.com