বিশেষ প্রতিনিধি
পেঁয়াজ নিয়ে গত দু’মাস ধরে কথিত সিন্ডিকেটের যে মনোপলি ব্যবসা বাজার ও রাজনীতিতে অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে তা বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে ও ভ্রাম্যমাণ আদালত নামিয়েও থামানো যায়নি। তবে সেই অস্থিরতা কাটাতে বাজারে আসছে নতুন দেশি পেঁয়াজ। ফলে বাজারে কমতে শুরু করেছে পুরনো ও আমদানির পেঁয়াজের চড়া দাম। প্রতিদিন না হলেও প্রতি সপ্তাহে এই দর বেশ খানিকটা নামছে। তবে এখনও তা বছরের এই সময়ের স্বাভাবিক দামের কয়েক গুণ বেশি।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারগুলোতে এখন হরেক পদের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দেশি-বিদেশি পুরনো পেঁয়াজের পাশাপাশি নতুন পেঁয়াজ, এর ফুল ও পাতায় এখন বাজার ভরপুর। ক্রেতারা বলছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কারসাজি করে পচনশীল এই পণ্যটির দাম বাড়ানোর যে খেলা চলছিল সে খেলা বন্ধে এখন বাধ্য হচ্ছে আড়তদার-আমদানিকারক ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। বছরের এই সময়ে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকায় নতুন ওঠা পেঁয়াজেরও গত দুই সপ্তাহে দাম ছিল আকাশচুম্বী। তবে প্রতিদিনই সরবরাহ বাড়ায় নতুন-পুরনো সব ধরনের পেঁয়াজেরই দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা। এতে হাফ ছেড়ে বাঁচছেন তারা।
আর বিক্রেতারাও বলছেন, নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় দাম এখন অনেক কম। তাই আমরাও স্বস্তি অনুভব করছি।
রাজধানীর বাজার গুলোয় এখন আর সেভাবে পুরান দেশি পেঁয়াজ নাই। যা আছে তা অনেকটা দেশি পেঁয়াজের মতো মনে হলেও তা আসলে মিয়ানমারের পেঁয়াজ। দেশি পুরান পেঁয়াজ নয়। তবে এতেও সুযোগ বুঝে প্রতারণা চলছে ক্রেতাদের সঙ্গে। পুরান পেঁয়াজ বলে গজ (বীজ) বেরিয়েছে এমন কথা বলে বিক্রেতারা মিয়ানমারের এসব পেঁয়াজকে দেশি পেঁয়াজ হিসেবে বেশি দামে চালিয়ে দিচ্ছেন। যারা পেঁয়াজের আকার ও রঙের তফাত বুঝতে পারেন না তারাই এসব েেত্র প্রতারিত হচ্ছেন বেশি।
বাজার ঘুরে দাম-দর যা জানা গেছে তাতে গজ ওঠা মিয়ানমারের এসব পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে এই পেঁয়াজের দর ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি।
রাজধানীর কাওরানবাজার, কোনাপাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আমদানি করা চীনের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। অনলাইনের কেনাকাটার সাইটে এই পেঁয়াজ ৪৯ টাকা দরেও বিক্রি করার তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও এর সঙ্গে পৌঁছে দেওয়ার খরচ যোগ করলে তা ৬০ টাকা কেজি দরেই পড়ে যায়। বাজার ঘুরে আরও দেখা গেছে, ফরিদপুরের মুড়ি কাটা পেঁয়াজ নামে পরিচিত দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজের ফুল অর্থাৎ পেঁয়াজের কালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজসহ পেঁয়াজের পাতা। মানুষ তা কিনছেন বেশ আগ্রহ ভরে।
উল্লেখ্য, ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার বরাত দিয়ে জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ থাকবে। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে দেশীয় পেঁয়াজের বাজারে। আর এর সুযোগ নেয় পেঁয়াজের আমদানিকারক, আড়তদার, পাইকার ও ব্যবসায়ীরা। সংকটের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা পেঁয়াজের দাম বাড়াতে শুরু করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম পেঁয়াজের কেজি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করলেও এই সংকট সামাল দিতে পারেনি সরকার। বিশেষ করে আমদানি না হলেও সংকটের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশি পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হওয়াটা ছিল সবচেয়ে রহস্যজনক। এরইমধ্যে একদিন লবণের দামেও কারসাজির চেষ্টা করা হলেও সেটি ঠেকিয়ে দেয় সরকার। কিন্তু পেঁয়াজের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য না থাকায় এর মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনও প্রচেষ্টাই কাজে আসেনি। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সরকারের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা পেঁয়াজ ইস্যুতে মুখে যত কথা বলেছেন বাজার নিয়ন্ত্রণে সমাধানের উপায় বের করার েেত্র ছিলেন ততটাই ব্যর্থ। তবে সব সংকট সমাধানে সবার চোখ ছিল নতুন পেঁয়াজ ওঠার দিকে। শেষ অবধি নতুন পেঁয়াজ বাজারে ওঠার পর থেকেই পেঁয়াজের দর কমছে যদিও তা স্বাভাবিক সময়ের দামের চেয়ে এখনও অনেক গুণ বেশি।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের তথ্য মতে দেশে পেঁয়াজের বাৎসরিক চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। পেঁয়াজ পচনশীল বলে সংস্থাটির ধারণা, বছরে উৎপাদিত পেঁয়াজের ৩০ শতাংশ অর্থাৎ সাড়ে সাত লাখ টন পচে যায়। এটাই ঘাটতি। এই ঘাটতি মেটাতে সাধারণত বছরে আমদানি করা হয় ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ।
Development by: webnewsdesign.com