ভাষা আন্দোলনের অন্যতম একজন ছাত্র নেতা কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা। বাম রাজনীতির এই নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক রূপে দেখতে পাওয়া যায় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ফিরে তাকালে।
এই বাম রাজনীতিকের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৮৭ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগতির হাজিরহাটে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯২২ সালের ২ জানুয়ারি তার জন্মও এখানেই।
তাঁর শিক্ষাজীবন কাটে ঢাকায়। ফরাশগঞ্জ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ঢাকা কলেজ থেকে আইএ এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ফজলুল হক হলেরও ভিপি নির্বাচিত হন।
১৯৪৮ সালে ২ মার্চ ফজলুল হক হলে গঠিত হয়েছিল প্রথম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলেরই ভিপি। কমরেড তোয়াহা ছিলেন সব মত ও পথের নেতাদের অভিন্ন এই প্লাটফর্মের গুরুত্বপূর্ণ একজন। অন্যতম ছাত্র নেতা হিসেবে পরিগণিত হতেন ভাষা আন্দোলনকালে ।
ভাষা আন্দোলনে এই সক্রিয় কর্মী রাজনীতিতেও ছিলেন উজ্জল। তিনি ১৯৪৬ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অধীনে সিলেট গণভোটে কর্মী হিসাবে কাজ করেন। ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে অধিকাংশ পোস্টার, নিবন্ধ, লিফলেট ছিল তারই তৈরিকৃত। ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম বামপন্থী ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ দলের সাথে যুক্ত ছিলেন ১৯৪৯ সালে।
১৯৪৮ এর ১১ মার্চ দলবল নিয়ে সচিবালয়ে খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। এসময় তিনি খুবই নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। নির্যাতনের শিকারে তাকে এক সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল।
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির একজন নেতা হিসেবে সরকারের সাথে সকল ধরনের বৈঠকে অংশ নিতেন তোয়াহা। ফজলুল হক হলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এলে আমাদের ভাষা চাহিদা সম্পর্কে তাকে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন তোয়াহা।
গ্রেপ্তার হয়ে তিনি দুই বছর কারাগারে ছিলেন ১৯৫২ সালে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হয়েছিলেন। এসময় তাদের যুক্তফ্রন্ট জয়ী হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান মজদুর ফেডারেশন নামে শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলেন, তিনি এর সভাপতি নির্বাচিত হন।
হামিদ খান ভাসানীর জাতীয় আওয়ামী পার্টির সাথে যুক্ত হন ১৯৫৭ সালে এবং পরে এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করার পরে তিনি গোপন রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৬৯ সালে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি তৎকালীন নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর ও রামগতি অঞ্চলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী উভয়েরই বিরুদ্ধে ছিলেন। স্বাধীনতার পর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী হয়, ফলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ১৯৭৬ সালে তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৭৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কমরেড তোয়াহা আট দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন ১৯৮৬ সালে।
Development by: webnewsdesign.com