প্রতি বছর ১৯ শে নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস ধরা হয় এবং সমগ্রহ বিশ্বে দিবসটি পালিত হয় । পুরুষ দিবস পালনের প্রস্তাব প্রথম করা হয় ১৯৯৪ সালে। তবে ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পালন করা হতো রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে। এই দিনটি পালন করা হতো মূলত পুরুষদের বীরত্ব আর ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে। দিবসটি আদিম যুগের না হলেও মানব সমাজের শুরু থেকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ চলমান। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত, এক নারী, দুই পুরুষ। আজ নারী ও পুরুষের সুন্দর পারস্পরিক সম্পর্কের ফলে সমাজ সুগঠিত । এই সম্পর্ক সবসময় সুন্দর থাকে না, কখনও সম্পর্কের অবনতি ও হয়। কিন্তু অবনতি হলেও এই সম্পর্কের উপরই নির্ভর করে সমাজ ব্যবস্থা টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে।
বৈজ্ঞানিক ভাবে মানুষ হলে Homo sapiens গোত্রের। এরাই সৃষ্টির সেরা জীব। পুরুষ ও মহিলা দুই ধরনের মানুষ আছে। সেক্স ক্রমোজমের মাধ্যমে এরা আলাদা হয় । নারী ও পুরুষের পরস্পরের মিলনের ফলে সন্তান উৎপাদন হয়, অন্যথায় সম্ভব নয়। এছাড়া ডিএনএ গত সমস্যার জন্য তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ও হয় কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। নারী ও পুরুষের শারীরিক গঠন ও সক্ষমতা ভিন্ন। নারী অপেক্ষা পুরুষেরা স্বাভাবিক ভাবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে থাকে।
এর কারণ হল হরমোন। মানবজাতির ইতিহাস নারী পুরুষের আগমন নিয়ে মতবিরোধ আছে। ধর্মগ্রন্থ হতে বিশেষ ইসলাম ধর্মে বলা আছে যে আদম ও হাওয়া পৃথিবীর প্রথম নর ও নারী এবং এখান থেকেই মানবজাতির উৎপত্তি । অন্যদিকে বিবর্তন বাদীদের মতে মানুষ এসেছে বিবর্তনের ফলে। ধিরে ধিরে পরিবর্তন হয় বর্তমানে রূপ নিয়েছে। সত্য যাই থাকুক না কেন বাস্তবতা হল নর ও নারী ব্যতিত মানবজাতির ইতিহাস কল্পনা করাও যায় না।
বর্তমানে যুগে যেমন নর ও নারীর সমান সুযোগ, মর্যাদা ও অধিকারের ব্যবস্থা কিংবা আইন থাকলে আদিম সমাজ এমন ছিল না। সেসকল সমাজ পুরুষদের আধিপত্য ছিল। রাজা-বাদশাহদের ইতিহাসে যায় যে একটি রাজ্যের অধিকাংশ পদই পুরুষদের হাতে ছিল। নারীরা ক্ষমতায় ছিল না বললে ভুল হবে। রাজা পাশে রাণীর ও ভূমিকা ছিল। এমনকি রাণী শাসক ও ছিল। অনেকে দাবি করে থাকে যে নারীদের আদিম সমাজ ব্যবস্থা হতে অবহেলিত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সত্য হলেও সব ক্ষেত্রে নয়। সমাজ বিবর্তনে আধুনিক হয়েছে। শারীরিক গঠনে অনুযায়ী পুরুষেরা নারী অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী ও সাহসী ছিল। তৎকালীন সমাজ তথা রাষ্ট্র ছিল জোর যার মুল্লুক তার অর্থাৎ যুদ্ধ বিগ্রহে দেশ, রাজ রাজত্ব দখল করে রাজ্য হত।
এই সকল কাজে পুরুষেরা অধিক আগ্রহী ছিল ও নেতৃত্ব দিত। এরই ফলেই সমাজ ব্যবস্থা পুরুষদের আধিপত্যে থাকে। কিন্তু বর্তমানের মতো সভ্য ছিল না বলেই দূর্বল উপর সবলের অত্যাচারের মাত্রা ও বেশি ছিল। আর সেই দূর্বলদের মধ্যে নারীও ছিল। কিন্তু বর্তমানের আধুনিক বিশ্বের মানুষের মধ্যে মানবতা ও মূল্যায়ন আসার ফলে নারী ও পুরুষের মর্যাদা হয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের প্রচারক হযরত মোহাম্মদ ( সাঃ) ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দাস প্রথা বিলুপ্ত করণ ও নারীদের অধিকার ও মর্যাদায় উনার অবদান বর্তমান সমাজ মেনে চলছে।
পুরুষেরা আদিম সমাজ হতে জ্ঞান বিজ্ঞান ও ধর্ম চর্চায় অনেক সুদূর প্রসারিত ভূমিকা রেখেছে। বিজ্ঞানীদের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীই আসছে পুরুষের মধ্যে হতে। তবে নারী বর্তমানে পিছিয়ে নয়। বর্তমান যুগে এসে অনেকেরই দাবী নারীরা এখনো পিছিয়ে ও অবহেলিত। আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রয়োজন। আসলে প্রকৃতপক্ষে সমাজে পিছিয়ে পরা থাকে দূর্বল মানুষেরা। সেক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই থাকে। অনেক আইন হয়েছে যেখানে নারীদের স্বার্থ সংরক্ষিত করে।
কিন্তু এর ফলে পুরুষেরা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এক বিখ্যাত পত্রিকার তথ্য বেরিয়ে আসছে যে ৮০ ভাগ বিবাহিত পুরুষই মানসিক নির্যাতনের শিকার। শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ শরীরে থাকে কিন্তু মানসিক নির্যাতনের প্রমাণ থাকে না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ করা হয়েছে নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য কিন্তু বর্তমানে সুরক্ষার পরিবর্তে অপব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশের সংবিধানেই নারী ও পুরুষদের সমান সুযোগ, সুবিধা ও অধিকার দিয়েছে।
আইনের অপব্যবহার করে মিথ্যে মামলা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনকে দুর্বিষহ করেছে। এমতাবস্থায় সমাজে ভারসাম্যের প্রয়োজন আছে। আর এর জন্য প্রয়োজন মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার যেখানে নারী ও পুরুষ উভয়কে মর্যাদাবান রাখা হয়। একদিকে যেমন পুরুষদের কাছে ও নারীরা ও নির্যাতনের শিকার না হয় অন্যদিকে নারীদের সুরক্ষার জন্য পুরুষেরাও যেন অবহেলিত ও হয়রানির শিকার না হয়। কেননা মানব সভ্যতার জন্য উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক::
জিসান তাসফিক
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
Development by: webnewsdesign.com