অল্প বিদ্যা সবসময়ের জন্য ভয়ংকর। আর স্বল্প জ্ঞান থেকেই জন্ম নেয় বাড়াবাড়ি করার দুঃসাহস। ধর্ম নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করাও কিন্তু ধর্মের অবমাননা করা। আমরা বাঙালি বড়ই আবেগি। আমাদের এতোটায় আবেগ যে আমরা নিজেরা কখনোই ধর্ম নিয়ে তো পড়াশুনা করি না। গবেষনা দূরে থাক, বরং বাজারের কিছু ছোটো ছোটো বই আর গ্রাম-গঞ্জের কিছু মোল্লাদের এবং মাদ্রাসার হুজুরদের কিছু ওয়াজ মাহফিলের উপর আমাদের ধর্ম নির্ভরশীল।
আর জ্ঞানের স্বল্পতা থেকেই উগ্রবাদের জন্ম নিচ্ছে।কোন কিছুর উপরেই অন্ধ বিশ্বাস ভালো না। এমনকি ধর্মের ব্যাপারেও আল্লাহতালা জ্ঞানীদের জন্য অসংখ্য নির্দশন দিয়েছেন।
আল্লাহ তালার প্রতিটা সৃষ্টির রহস্য উদঘাটন করতে গেলেই আল্লাহকে খুঁজে পাওয়া যায়। যত আপনি ধর্ম নিয়ে গবেষনা করবেন ততই সৃষ্টিকর্তার প্রতি আপনার আর্কষন বাড়বে। অন্ধ হৃদয়ে আলো জ্বলবে। যদি অন্ধের মতই ধর্মকে বিশ্বাস করতে হয় তাহলে কোরআন, হাদীস কেন আছে?
আল্লাহ বলেছেন আগে নিজে জানো তারপরে অন্যকে জানাও। সবারই জানা উচিৎ অন্ধ ভালবাসার পরিনতি কখনই শেষ পর্যন্ত ভালো হয়না। এগুলো দূর্বল ঈমানের পরিচয়। ধর্মের সাথে এগুলা আলগা পিরিত, ধর্মের নামে ধর্মান্ধতা।
আল্লাহতায়ালা কোরআন নাজিল করেছেন কেন? প্রতিদিন তেলাওয়াত করে চুমু খেয়ে তুলে রাখার জন্য? কোরআন বুঝে পড়ার জন্য এবং সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনে বাস্তবায়ন করার জন্য।
কোরআন মুখস্থের প্রতিযোগীতা না করে বরং এটা নিয়ে বেশি বেশি গবেষনার সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। একজন হাফেজ অবশ্যই সম্মানীয় ব্যক্তি, তবে হাফেজ সহ সাধারন মানুষদেরো উচিত অবশ্যই কোরআনের অর্থও রপ্ত করা। সেখান থেকে মানুষকে শিক্ষা দেওয়া। আজ যদি মানুষ কোরআন বুঝে পুড়তো, সেই ভাবে জীবনব্যবস্থা পরিচালনার চেষ্টা করতো এতো এতো অনৈতিক কাজ কর্ম ঘটতো না।
আমরা যদি উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকায় তাদের গণতন্ত্রনীতি, রাজনীতি, অনান্য নৈতিকতার, সমাজিক ঐক্যের সাথে দেখবেন ইসলাম যে নীতির কথা বলেছে অনেকাংশই সাদৃশ্য পাওয়া যাবে। অমুসলিম দেশগুলো এমন নীতি কোথায় পাচ্ছে? তারা কি পথ অবলম্বমন করছে, এগুলো চিন্তার বিষয়, গবেষনার বিষয়।
জেনে রাখা ভালো মুসলমানদের ইতিহাস পৃথিবীর অনান্য ধর্মীয় ইতিহাসগুলোর চায়তে অনেক সমৃদ্ধ ছিলো। আপনি হুজুর নন কিন্তু নিজেকেতো মুসলিম বলে দাবি করেন তাইনা। তাহলে নিজ ধর্মের উপর জ্ঞান অর্জন আপনার জন্যও ফরজ।
এতো সাহিত্য পড়েন, এতো বই পড়েন অথচ ধর্মীয় বই পড়ার সময় নেই। ঘরে একখান কোরআন কিনে আলমারিতে সাজিয় রাখছেন দায়িত্ব শেষ আপনার?
কোন হুজুর কি বলেছে তার কথা অন্ধের মত বিশ্বাস করবেন কেন? বাজারের পাওয়া যাওয়া ছোট ছোট হাদিসের বই না পড়ে বরং কোরআনটা বুঝে পড়ুন। এখানে না বোঝার কিছু নাই। বার বার পুড়ুন যেমনটা একাডেমিক পড়াশুনা একবার না বুঝলে বার বার পড়ি তারপরও না বুঝলে শিক্ষকের কাছে যায়।
যখন নিজে নিজের ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা করে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন তখন কেউ ধর্মের অপব্যাখ্যা দিলে নিজেই সেগুলোর ভুল ক্রটি ধরতে পারবেন। আল্লাহ তায়ালা খুব সহজ করে, সুন্দর ভাষায়, প্রতিটা লাইন স্পষ্ট ভাষায় মুসলমানদের জন্য পথ নির্দেশক হিসেবে কোরআন রচনা করেছেন।
সহজাত ভাবেই আরবি বুঝিনা আমরা কারন আরবি আমাদের মাতৃভাষা নয়। যে কোরআনে বাংলা অর্থ এবং ব্যাখ্যা সহ দেওয়া আছে সেগুলো পড়ুন। সহায়ক হিসেবে সহীহ হাদিস ৬ টি সেগুলো পড়ুন। অনেককেই বলতে শুনেছি কোরআন খুব কঠিন এতো সহজ নয়। আমরা সাধারন মানুষরা এগুলো পড়ে বুঝবো না।
আরে ভাই কোরআন কি শুধু হুজুর, মুফতি, মাওলানাদের জন্য নাজিল হয়েছে? যদি কোরআন কঠিন করেই নাযিল করা হতো তাহলে এ যুগেও নবী রাসূল আসতেন আমাদেরকে কোরআন বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য।
কোনদিন চেষ্টা করেছেন কোন একটা সূরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্তু অনুবাদসহ পড়ার জন্য? আমরা এমনি একটা পেজ বের করে মাঝখান থেকে দু’তিন লাইনে চোখ বেলায়। আর বলি ওরে বাবা ভাষা কি কঠিন কিছুই বুঝতেছিনা।
আপনাকে যদি একটা ম্যাথের সমাধান দেখতে বলা হয় আপনি যদি প্রথম লাইনগুলো বাদ দিয়ে মাঝের কয়টা লাইন দেখে রেখে দেন আপনি আদৌও কি কিছু বুঝবেন? না বুঝবেন না। আপনার সন্তান কে সঠিক শিক্ষাটা কে দেবে স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষকরা? আপনি এই ভরসাই বসে আছেন? আফসোস!
মূল শিক্ষাটা পরিবার থেকে পায়। শিশুর মানুষিক গঠন তৈরী হয় পরিবার থেকেই। সে কিভাবে বেড়ে উঠছে, তার ব্রেন কোন কোন বিষয়গুলো ধারন করছে, কোন বিষয়ের প্রতি সে আগ্রহী এগুলা পরিবারই ভালো জানে।
সন্তানকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করুন। এখন আসি সঠিক শিক্ষা বলতে কি বোঝায়, সন্তানকে ভালো, দামি স্কুলে পড়াচ্ছেন। প্রতিদিন চার পাঁচটা স্যার তাকে বাড়িতে এসে পড়িয়ে যাচ্ছে। পাঠ্যপুস্তুকের বইতে কোথাও লেখা আছে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, চুরি, খুন, ধর্ষন, বলাৎকার, অন্যায় অবিচার এগুলা অপরাধ, এগুলোর জন্য ধর্মিয় শাস্তি কি?
এমন কি দেশের আইনের এর শাস্তি কি? এগুলো থেকে নিজেদেরকে কেন দূরে রাখা উচিত, এগুলোর ফলাফল মানবজীবনের জন্য কতটা ভয়ংকর। এগুলো ধর্ম মানুষকে শেখায়। আমাদের সিলেবাসে অন্তভূক্ত ধর্মীয় বই নীতি, নৈতিকতা, ধর্মের বিষয়ে গভীর জ্ঞানের জন্য যথেষ্ট নয়। এগুলোতো পরিবারকেই শেখাতে হবে, বাবা-মা যদি নিজেই ধর্ম বিষয়ে অজ্ঞান থাকেন সন্তানেকে কিভাবে সঠিক শিক্ষা দেবেন?
বর্তমানে বই পড়তে পারে না এমন বাবা মা বিরল। সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিন। একাডেমিক বই পড়ার পাশাপাশি ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে উৎসাহ দিন। তাকে আগ্রহী করে তুলতে পারলে আপনাকে সারা জীবন শেখাতে হবে না সে নিজেই অনেক কিছু জানতে পারবে দেখবেন আপনার সন্তানই একদিন আপনাকে শেখাবে কোথায় কোন জিনিসের ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে আর কোথায় সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
অনেক সন্তান বড় হয়ে ভাল মানুষের সঙ্গ পেয়ে অনেক উত্তম মানুষে পরিনত হন। ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন, জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হন, এমন সন্তানদের জন্য আমার বার্তা আপনার পিতামাতার যদি ধর্মীয় ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অভাব থাকে তাকেও শেখান শেখার কোন বয়স নেই। ভবিষ্যতে আপনার সন্তানের জন্য আর্দশ দাদা দাদী হয়ে উঠবেন।
মুসলিমরা যদি সঠিকভাবে ধর্মকে জানতো, নিজেরা কোরআন পড়ে সত্যতা যাচাই করা শিখতো, এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ কি নির্দেশনা দিয়েছেন। অনুমান করে কথা বলা, কাউকে সন্দেহ করার ব্যাপারে, কাউকে শাস্তি দেবার ব্যাপারে কোন কৌশল অবলম্বমন করতে হবে, এগুলো রাসূল সাঃ সুন্দরভাবে বলে দিয়েছেন।
রাসূলরা কিভাবে ইসলামের দাওয়াত দিতেন, মানুষদেরকে কিভাবে আল্লাহর পথে আগ্রহী করে তুলতেন, কিভাবে ইসলাম ধর্মকে অন্য ধর্ম থেকে শ্রেষ্ট এবং আকর্ষণীয় করে উপস্হাপন করতেন, তাদের কার্যাবলী দ্বারা মানুষকে আকৃষ্ট করতেন, মানুষের হৃদয় জয় করতেন এগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ইসলাম যেখানে সুন্দর করে বলে দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনের বিভিন্ন সূরায় বার বার সাবধান করেছেন তোমরা সীমালঙ্ঘন করোনা, সীমালঙ্ঘন কারীকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। এগুলো যদি আজ সাধারন মানুষ জানতো তাহলে আজ ইসলামের নামে উগ্রবাদের জন্ম নিতো না। দলে দলে কিভাবে মানুষ ইসলামের ছায়াতলে এসে আশ্রয় নিতেন। কিভাবে ভালোবেসে ধর্মকে আকড়ে ধরতে হয় সব শিক্ষা কোরআন হাদিসে সুন্দর করে বলে দেওয়া আছে।
আমাদের যদি অক্ষর জ্ঞান থাকে তাহলে আসুন আমরা সবাই পীর, মুরিদের কাছে না গিয়ে নিজেরা উদ্যোগী হয়। নিজেরা পড়াশুনা করি, যদি কোথাও বুঝতে সমস্যা হয়, যারা ধর্ম নিয়ে গবেষনা করেছে, যারা ধর্মীয় স্কলার, হিউজ পড়াশুনা করেছেন তাদের সাহয্য নেই।
তারা কঠিন বিষয়কে সহজেই উপস্থাপন করতে পারবেন। নিজের ধর্মের বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করি, সে যে ধর্মই হোক না কেন? ধর্ম মানুষকে শান্তির পথে ডাকে, ধর্ম মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন।
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়। বাড়াবাড়ি থেকেই সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। আর এই বিশৃঙ্খলা থেকেই সমাজে মানুষের শান্তি বিঘ্ন হয়। এ ব্যাপারে আল্লাহতালার নির্দেশ হলো:
(১) ‘কিতাবধারী হে! নিজেদের ধর্ম নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি কোরো না। আর (ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে) তোমাদের আগে যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়ে ও অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করে সহজ সরল পথচ্যুত হয়েছে, তাদের পথ অবলম্বন কোরো না।’ (সুরা মায়িদা : ৭৭)।
(২) ‘হে কিতাবধারীরা! তোমরা তোমাদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ো না। আর আল্লাহ সম্বন্ধে যথাযথ বলো।’ (সুরা নিসা : ১৭১)।
আয়াতদুটিতে ইহুদি-খৃস্টানদেরকে নিজেদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এরা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সর্বদা ভেঙে ধর্মে বাড়াবাড়ি করার মাধ্যমে নিজেদের ধর্ম বিকৃত করে ফেলতো।
(৩) ‘এটি আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। সুতরাং তা অতিক্রম কোরো না। যারা অতিক্রম করে, তারা-ই প্রকৃত জালেম (সীমালঙ্ঘনকারী)।’ (সুরা বাকারা : ২২৯)।
(৪) ‘কিতাবধারী হে! নিজেদের ধর্ম নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি কোরো না। আর (ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে) তোমাদের আগে যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়ে ও অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করে সহজ সরল পথচ্যুত হয়েছে, তাদের পথ অবলম্বন কোরো না।’ (সুরা মায়িদা : ৭৭)।
(৫) ‘হে কিতাবধারীরা! তোমরা তোমাদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ো না। আর আল্লাহ সম্বন্ধে যথাযথ বলো।’ (সুরা নিসা : ১৭১)।
আয়াতদুটিতে ইহুদি-খৃস্টানদেরকে নিজেদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এরা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সর্বদা ভেঙে ধর্মে বাড়াবাড়ি করার মাধ্যমে নিজেদের ধর্ম বিকৃত করে ফেলতো।
(৬) ‘এটি আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। সুতরাং তা অতিক্রম কোরো না। যারা অতিক্রম করে, তারা-ই প্রকৃত জালেম (সীমালঙ্ঘনকারী)।’ (সুরা বাকারা : ২২৯)।
ফাতেমা সাঈদ
সাবেক শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
Development by: webnewsdesign.com