বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে অন্যতম ধর্মকে অবমাননা। ধর্ম অবমাননা নিয়ে অনেক সময় অনেক ঘটনা ঘটেছে। দাঙ্গা, নৈরাজ্যসহ আগ্রাসন পর্যন্ত হয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র এসব ঠেকানোর জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করেছে। সম্প্রতি আমাদের দেশের অনেক গুণিজন ও ফ্রান্সে নবীজিকে কটুক্তি করে নতুন করে মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। গনমাধম্যে চোখ রাখলে দেখা যায়, এসব আচরণে মানুষ কতটা বিরক্ত ও অতিষ্ঠ।
পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মালম্বীর মানুষ বসবাস করে। অনুসারীর দিক দিয়ে পৃথিবীতে চারটি বৃহৎ ধর্ম- খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, ইসলাম ও সনাতন তথা হিন্দু ধর্ম। এদের মধ্যে সনাতন ধর্মই প্রাচীন ধর্ম এবং ভারতীয় উপমহাদেশে এদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এর বাইরে ইহুদি, শিখসহ আরও কিছু সংখ্যালঘু ধর্মালম্বী ও নাস্তিক রয়েছে। একে অপরকে যখন কটাক্ষ করে তখন তা বিকট রূপ নেয়।
একুশ শতকের এই গ্লোবাল ভিলেজে তথ্য ছড়িয়ে পড়তে ও ভাইরাল হতে বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়ে না। সেখানে ধর্মীয় ইস্যুতে কথা বলা কিংবা কটাক্ষ করা খুব সহজে ভাইরাল হয়। ধর্ম নিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা আজকের বিষয় নয়। এটা প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। যদিও ধর্মশিক্ষায় বরাবরই নৈতিকতার বিষয় থাকে কিন্তু তবুও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মকে অপব্যখ্যা করে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।
ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-মহাযুদ্ধ হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় ইসলামকে সরাসরি কটাক্ষ করা হয়েছে। অথচ মদিনা সনদ, হিলফুল ফুজুলের মত সংগঠনের আদর্শে আজ বিশ্বের বড় বড় সংস্থা দাঁড়িয়ে আছে। ইতিহাসে মানবতার জন্য এর পূর্বে এমন কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব দেখা যায় নি। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিয়ে বিভিন্ন ধর্মে দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। ইসলাম ধর্মে মহানবী বিদায় হজ্বে মুসলিমদের কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী জীবন যাপন করতে এবং ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও জোরজবরদস্তি করতে নিষেধ করেছেন। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও অন্যদের আঘাত করা ও কটাক্ষ করার নিষেধাজ্ঞা আছে।
বাংলাদেশের সংবিধান (২ক) ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিয়েছে। ১২ অনুচ্ছেদে সাম্প্রদায়িকতাকে সাংবিধানিক ভাবে বয়কট করা হয়েছে এবং ২৮ অনুচ্ছেদে ধর্ম নিয়ে কোনো প্রকার বৈষম্য আচারণের নিষেধ করা হয়েছ। এছাড়াও ধর্মীয় অবমাননা করা, কটুক্তি করা, আঘাত করা কিংবা ক্ষতি করা আইনত অপরাধ করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ২৯৫ থেকে ২৯৮ পর্যন্ত ধর্মীয় অবমাননার শাস্তির বিধান করা হয়েছে। বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৭ ধারা ধর্মীয় অবমাননাকে শাস্তি যোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড একইসাথে অনধিক ১ কোটি টাকার অর্থদণ্ডও রয়েছে।
ফ্রান্সের এই কৃতকর্মের জন্য অনেক দেশই তাদের পণ্য বয়কট করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরাও আছেন যা ফ্রান্সের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। অথচ ফ্রান্স জাতিসংঘের পাচঁটি স্থায়ী সদস্যের একটি এবং যাদের উদ্দেশ্য বিশ্ব শান্তি স্থাপনা করা। ঢাবি প্রফেসরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে যা তার জন্য সুখকর নয় এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বহিস্কৃত হয়েছে।
প্রত্যেকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে ঠিকই। তবে অপব্যাখ্যা কিংবা কটাক্ষ করে নয় বরং যুক্তিপূর্ণ কথা বলে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা কোনো প্রতিবাদ হতে পারে না বরং প্রতিহিংসা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। বর্তমানে করোনাকালে যেখানে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা দায় সেখানে নৈরাজ্য সৃষ্টিকরা মোটেও কাম্য নয়। কেউ কাউকে অবমাননা করে লাভবান হয় না বরং সম্পর্ক নষ্ট হয়। প্রত্যেক মানুষের নিজের প্রতি ও ধর্মের কাজের প্রতি মনোযোগ থাকা উচিত পাশাপাশি অন্য ধর্মকে সম্মান করা উচিত। পৃথিবীতে শান্তি বজায় রাখতে এইই যথেষ্ট।
Development by: webnewsdesign.com