শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষকরা হচ্ছেন সেই মেরুদণ্ড তৈরির কারিগর। জাতির চালিকা শক্তি ঠিক রাখার জন্য শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে একজন শিক্ষক মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিসরূপ প্রতিবছর এই দিনটিকে পালন করা হয় ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে। পৃথিবীর সকল দেশের শিক্ষকসমাজের নিকট এই দিনটি অত্যন্ত গৌরব ও মর্যাদার।
১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কোর ২৬ তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ৫ অক্টোবরকে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তারপর থেকেই শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কিত সাফল্যকে সমুন্নত রাখা এবং সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় ৫ অক্টোবর কে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাবনা তুলে ধরেছেন মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।
মানবশিশুর জন্মের পর থেকে বাবা-মা যেমন তাঁদের ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা দিয়ে সন্তানকে বড় করে তুলেন, তেমনই শিক্ষকগণ শিক্ষার আলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যান। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমেই নয়, বাস্তবমুখী ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে একজন সুশৃঙ্খল, পরিশ্রমী, সৎ ও সাহসী মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষাটা প্রদান করেন আমাদের শিক্ষকরাই।
ইউছুব ওসমান
লোকপ্রশাসন বিভাগ
তাঁদের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা, আদর ও শাসন এবং নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সৎ, সাহসী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। সমাজ ও জাতি গঠনে, দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে, দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে, বিশ্বের দরবারে নিজ দেশের গৌরবময় অবস্থান গড়ে তুলতে একজন আদর্শ শিক্ষকের অবদান একজন রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ বা সমাজনেতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাই বলা যায়, একজন আদর্শ শিক্ষক দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান ও শ্রেষ্ঠ মানুষের অন্যতম। জাতি সঙ্গত কারণেই শিক্ষকের কাছে অনেক প্রত্যাশা করে। শিক্ষকদের এই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে একটি শিক্ষিত জাতি। আজকের এই বিশ্ব শিক্ষক দিবসে, প্রকৃত মানুষ গড়ার কারিগর মহান শিক্ষকদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও সালাম।
সাদিয়া সাবাহ্
নৃবিজ্ঞান বিভাগ
মানুষ জন্মগ্রহনের পর থেকেই নানা কিছু শিখতে থাকে। প্রথম শেখা হয়তো প্রকৃতি ও পরিবারের কাছ থেকে। তারপর ধীরে ধীরে তার প্রয়োজন পড়ে শিক্ষকের। একজন শিক্ষকই শিক্ষা দিতে তাকে ভবিষ্যৎ জীবনের চড়াই উতরাই কীভাবে পার করবে? ছোটবেলায় শিক্ষক শেখাতে শুরু করে। শুধুমাত্র অ,আ,ক, খ শিখিয়ে কিংবা কয়েকটা ছড়া আত্নস্থ করিয়েই তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেন না।এর পাশাপাশি তারা শিখিয়ে দেন নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ। যেগুলো ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে লাগানো যায়। তারা ছোট চোখগুলাকে প্রথম দেখায় যে, এ ছোট পৃথিবীতে তোমার একটা বড় স্বপ্ন থাকা লাগবে। তোমাকে সুন্দর ও মানবিক হতে হবে। এভাবেই আমাদের একদম বাচ্চা হতে তারা বড় করতে শুরু করে। আমাদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ
মাধ্যমিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও আমাদের স্বপ্নগুলো পরিপূর্ণতা দানে সহায়তা করে।
রুপা আক্তার
লোক প্রশাসন বিভাগ
শিক্ষা ও শিক্ষক শব্দ দুটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। বলা হয়ে থাকে, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এই মেরুদণ্ড গঠনের কারিগরই হলেন শিক্ষক। শিক্ষক শুধুমাত্র ছাত্রদের পড়াশোনায় সাহায্য করেন না, বরং শিক্ষার্থীদের সৎচরিত্র গঠন করে তাদেরকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে উঠতে এবং তাদের লক্ষে পৌঁছাতে সাহায্য করেন। একজন মানব শিশুকে জন্ম দেন তার পিতামাতা। আর সেই সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন শিক্ষক। এজন্যই বলা হয়ে থাকে শিক্ষক জাতি গঠনের কারিগর। শিক্ষককে বলা হয় মানসপিতা। জন্মিলেই কেউ মানুষ নয়। মানুষ হতে হলে তাকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। একজন শিক্ষকই পারেন একটি জাতিকে উন্নতির সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে দিতে। আমরা যা শিখেছি, যতটা জেনেছি তার অধিকাংশটাই শিখিয়েছেন আমাদের শিক্ষকরা। সফলতার পিছনে থাকে শিক্ষকের অবদান। যাঁদের ওপর ভর করে মাথা তুলে দাঁড়াই আমরা। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় নয়, বাস্তবিক শিক্ষা দানের মাধ্যমে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। আজকের এই শিক্ষক দিবসে জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষকদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা, সম্মান ও সালাম।
মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ
এবিসি থেকে শুরু করে লাল, সাদা এবং নীল, ইতিহাস থেকে শুরু করে অঙ্ক- সমস্ত কিছুর শিক্ষকদের দ্বারাই শিখতে পেরেছি আমরা। শিক্ষক আমাদের হাতে ধরে মনের দরজা খোলেন, হৃদয় স্পর্শ করেন। শিক্ষকরা জোগান অনুপ্রেরণা। পরামর্শদাতা হয়ে পাশে থাকেন সবসময়। কৌতূহলের বীজ রোপণ করে কল্পনাকে দিশা দেখান তারা। ভাল শিক্ষকের কারণেই সাধারণ পড়ুয়াও অসাধারণ কাজ করে ফেলে। জ্ঞানের পথে চালিত করে জীবনের দিশা ঠিক করে দেয়ার নামই শিক্ষক। নিজেদের সময়, শক্তি, এবং ভালোবাসার বিনিময়ে শিশুদের শিক্ষিত করে তোলে তোলেন তারা। সেরা শিক্ষক হৃদয় থেকে শিক্ষা দেন, বই থেকে নয়। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর মনন, মেধা ও আত্মশক্তির বিকাশ, পরিশীলন, উন্নয়ন ও প্রসার সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। একটি দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, টেকসই প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সার্বিক অগ্রগতিতে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। একজন আদর্শ শিক্ষক জানেন তার চলার পথ কণ্টকাকীর্ণ এবং ভবিষ্যৎ বিড়ম্বনাময়। তবু তিনি হৃদয়ের টানে এই সুকঠিন জীবিকার পথ বেছে নেন। এজন্য তাকে জীবনব্যাপী সংগ্রাম করতে হলেও তিনি আদর্শচ্যুত হন না। সর্বদা ন্যায়নীতির প্রশ্নে তিনি আপোসহীন। শিক্ষক ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ নামে আখ্যায়িত।
আসমা উল হুসনা অর্থি
সঙ্গীত বিভাগ
সমাজ গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক। আদর্শ শিক্ষকের হাত ধরেই তৈরি হয় আদর্শ ছাত্রছাত্রী।তারপর, বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন। শিক্ষাই হলো সর্বোত্তম পদ্ধতি সফলতা অর্জন করার। শিক্ষা হলো মলূত শিখন ও শিক্ষন প্রকিয়ার সুসমন্বিত রূপ। শিক্ষা তো নানা ভাবে অর্জন করা যায়। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হলো প্রাতিষ্ঠানিক পদ্বতিতে শিক্ষা লাভ করার বিষয়টি। যা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পূর্ণতা পায়। এখানে এসেই আমরা অনেকেই জীবনের খেয় হারিয়ে ফেলি।এখানে এসে এতোদিনের শেখা মূল্যবোধগুলোর সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়। আমরা আর মেলাতে পারিনা। জীবনের এই দ্বন্দ্বে আমরা অনেকেই হয়তো ভাবতে শুরু করি, আমাদের সেসব শিক্ষকদের পৃথিবীটা হয়তো আলাদা। তারা যেভাবে পৃথিবীটাকে দেখতো ওভাবে দেখলে হয়তো পৃথিবীর মানুষের সাথে আমাদের সমীকরণটা মিলবে না। আমরা ভাবতে শুরু করি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেরকম না, এরা অনেকটা আলাদা, এরা অনেকটা পেশাজীবি মনে হয়। আসলে বস্তুত বিষয়টা অন্যরকম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকই পেশাজীবি না।এদের অনেকেই অনেক বন্ধুসুলভ ও পিতামাতার পরের ভূমিকাই পালন করে (যদিও কিছুসংখ্যক শিক্ষক আছেন যারা অসৎ)।আমাদের বন্ধুসুলভ সেই শিক্ষকরা আছেন, থাকেন বলেন বলেই যুবসমাজ অতল গহবরে হারিয়ে যান না।
রকিবুল ইসলাম
পরিসংখ্যান বিভাগ
শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষাব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি। শিক্ষকতা কেবল চাকরি নয়, এটি একটি মহান পেশা। সমাজ গঠনে, দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে, সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে একজন আদর্শ শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। মেধা, প্রজ্ঞা ও জ্ঞান-দক্ষতায় পরিপূর্ণ শিক্ষক হচ্ছেন দেশ ও জাতির অমূল্য মানবসম্পদ। জাতির বুনিয়াদ গঠনে ও জাতীয় ঐতিহ্য-লালনে শিক্ষকের ভূমিকা যে কোনো পেশাজীবীর চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য তাদের দেশের শ্রেষ্ঠ মানুষের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সঙ্গত কারণে তাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। এ জন্য শিক্ষককে নিজ পেশার প্রতি নিবেদিত প্রাণ হতে হয়। একজন শিক্ষক সব সময়ের জন্যই শিক্ষক। তার কর্মক্ষেত্র কেবল শ্রেণিকক্ষেই ব্যাপ্ত নয়; সর্বত্র। একজন ছাত্র শিক্ষককে দেখে শিখবে, তার বক্তব্য শুনে শিখবে, তার আচার-আচরণ লক্ষ্য করে শিখবে। তাই শিক্ষকদের ন্যায়-নীতিবান মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন আদর্শ মানুষ হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। শুধু পুঁথিগত বিদ্যাই নয়, শিক্ষকদের থেকে যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা অর্জন করি। আমরা যা শিখেছি, যতটা জেনেছি তার অধিকাংশটাই শিখিয়েছেন আমাদের শিক্ষকরা। সফলতার পিছনে থাকে শিক্ষকের অবদান। যাঁদের ওপর ভর করে মাথা তুলে দাঁড়াই আমরা। আজও তাঁরা তাঁদের বিরামহীন জ্ঞান উজাড় করে দিয়ে গড়ে যাচ্ছেন একের পর এক ছাত্রছাত্রী।
Development by: webnewsdesign.com