জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ পাঠ করবে দেশের প্রায় ১ কোটি শিক্ষার্থী। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর দিনে সব মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই ভাষণ পাঠ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, জাতির পিতার ভাবনা বর্তমান প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতেই এ আয়োজন করা হয়েছে। ওই ভাষণে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম, মা-বাবার প্রতি কর্তব্য এবং ছাত্রজীবনই যে ব্যক্তির পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতিপর্ব সেই বিষয়টি বঙ্গবন্ধু তুলে ধরেছেন।সূত্র মতে, ১৯৭৩ সালের ১৯ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ছাত্র সমাজের উদ্দেশে যে ভাষণটি দিয়েছেন সেটিরই অংশবিশেষ পাঠের জন্য বেছে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ভাষণের অংশবিশেষ চাররঙা ছেপে লিফলেট আকারে তৈরি করা হয়েছে; যা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হচ্ছে। পাঠকদের জন্য লিফলেটে স্থান পাওয়া ভাষণের নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হল :‘বাবারা, একটু লেখাপড়া শিখ। যতই জিন্দাবাদ আর মুর্দাবাদ করো, ঠিকমতো লেখাপড়া না শিখলে লাভ নেই। আর লেখাপড়া শিখে যে সময়টুকু থাকে বাপ-মাকে সাহায্য করো। প্যান্ট পরা শিখছ বলে বাবার সঙ্গে হাল ধরতে লজ্জা করো না, কোদাল মারতে লজ্জা করো না। দুনিয়ার দিকে চেয়ে দেখ। কানাডায় দেখলাম ছাত্ররা ছুটির সময় লিফট চালায়। ছুটির সময় দু’পয়সা উপার্জন করতে চায়।আর আমাদের ছেলেরা বড় আরামে খান, আর তাস নিয়ে ফটাফট খেলতে বসে পড়েন। গ্রামে গ্রামে বাড়ির পাশে বেগুনগাছ লাগিও, কয়টা লাউগাছ ও কয়টা নারিকেলের চারা লাগিও। বাপ-মারে একটু সাহায্য করো। কয়টা মুরগি পালো, কয়টা হাঁস পালো। জাতীয় সম্পদ বাড়বে। তোমার খরচ তুমি বহন করতে পারবে। বাবার কাছ থেকে যদি এতটুকু জমি নিয়ে ১০টি লাউগাছ লাগিয়ে দাও, ৫০টা মরিচ গাছ, কয়টা নারিকেল গাছ লাগায়ে দেও, দেখবে ২-৩শ টাকা আয় হয়ে গেছে। তোমরা ওই টাকা দিয়ে বই কিনতে পারবে। কাজ করো, কঠোর পরিশ্রম করো, না হলে বাঁচতে পারবে না।শুধু শুধু বিএ-এমএ পাস করে লাভ নেই। আমি চাই কৃষি কলেজ, কৃষি স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল ও কলেজ, যাতে সত্যিকারের মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে। কেরানি পয়দা করেই একবার ইংরেজ শেষ করে গেছে দেশটা।কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব আরও জানান, লিফলেটের বাইরে তারা ভাষণের আরও কিছু অংশ পাঠানোর চিন্তা করছেন। ভাষণের ওই অংশটুকু হচ্ছে, ‘তোমাদের মানুষ হতে হবে ভাইরা আমার। আমি কিন্তু সোজা সোজা কথা কই, রাগ করতে পারবে না। রাগ করো, আর যা করো, আমার কথাগুলো শোনো। লেখাপড়া করো আর নিজেরা নকল বন্ধ করো। আর এই ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতির বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে থানায় থানায় সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলো। প্রশাসনকে ঠিকভাবে চালাতে সময় লাগবে। এর একেবারে পা থেকে মাথা পর্যন্ত গলদ আছে।মাঝে মাঝে ছোটখাটো অপারেশন করছি, বড় অপারেশন এখনও করিনি। সময় এলে করা যাবে। তোমাদের আমি এটুকু অনুরোধ করছি, তোমরা সংঘবদ্ধ হও। আর মেহেরবানি করে আত্মকলহ করো না। এক হয়ে কাজ করো। দেশের দুর্দিনে স্বাধীনতার শত্র“রা সংঘবদ্ধ, সাম্প্রদায়িকতাবাদীরা দলবদ্ধ, তোমাদের সংঘবদ্ধ হয়ে দেশকে রক্ষা করতে হবে।লিফলেট শেষে লেখা আছে, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’।
Development by: webnewsdesign.com