খাওয়া, পান করা মানুষের জীবন পরিচালনার একটি অবিচ্ছেদ অংশ, না খেলে মানুষ সচল থাকতে পারবেনা এটা স্বাভাবিক বিষয়, দেহের জন্য খাদ্য অপরিহার্য, আবশ্যকীয়। হোক সে মানব কিংবা দানব, প্রাণী মাত্রই খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, অন্যথা দেহের গ্রন্থিগুলো দূর্বল হয়ে পুরো শরীর অবশ হয়ে এক সময় মৃত্যুর দিকে ঝুকে পড়বে। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে খাদ্য গ্রহণ করা হয়। শুধু উদরভরে খাদ্যের জন্য মানুষ বাঁচা বিরল। খাবার গ্রহণ করে যাতে স্রষ্টার উপাসনা ভালোকরে করা যায়, সেটাই খাবারের মূল উদ্দেশ্য।
খাবার অতিমাত্রায় খেলে বদহজম হতে পারে, স্বল্প খেলে অতৃপ্তি লাগে, সুস্বাস্থ্য ঠিক থাকেনা, সুতরাং পরিমাণমত খাবার গ্রহণ করাই শ্রেয়। এখন খাবার নিয়ে সমাজের কয়েক কিসিমের মানুষের কথা বলি। কিছু লোক আছে খাবার সুস্বাদু হলে লোভ সামলাতে না পেরে অতিরিক্ত খেয়ে নেয়, পরে তার মাশুলও দিতে হয়, তবে এর ব্যতিক্রমও আছে কিছুই হয়না। আবার কিছু লোক আছে সারাক্ষণ খাবারের ধান্ধায় থাকে, কেমনে কোথায় কাকে কোন কৌশলে কথা বলে খাবার আদায় করতে হয়, মাশাল্লাহ এই বিদ্যা তাদের ভালোই রপ্ত আছে, যিয়াফত দাওয়াত হলে তো কথাই নেই, খাবে তো খাবেই সাথে নিয়েও আসতে চায়! আরেক প্রকার আছেন যারা বিয়ের বা কুলখানীর বা যে কোন অনুষ্টানে আয়েশ করে পেট ভরে খাবার গ্রহণ করবে, তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ফিরতি পথে এসে বলবে- নাহ! মাংসটা ভালো করে পাকানো হয়নি, তরকারি তে লবণ কম হয়েছে বা ঝাল বেশি, মানে খাবারের দোষ না ধরলে যা পেটে পুরেছেন তা হজম হয়না। খবরে পড়েছিলাম, চট্টগ্রামে কার কুলখানিতে নাকি মানুষের ঠেলাঠেলিতে দশজন লোক নিহত হয়েছে, আমার দেখা অধিকাংশ শিন্নী (খাবার আয়োজন) ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি ব্যতিত সমাপ্ত হয়নি। খাবারে লবণ কম হলে বা সামান্য চুলের অংশ পেয়ে গৃহিণীকে মারধর করা, এমনকি সংসার ভাঙ্গারও খবর আমরা দেখেছি, এমন খাদকের সংখ্যাও কম নয়। আরেক দলের কথা বলি, যারা খাবার অপচয় করাটা কে উন্নত রুচিবোধের পরিচায়ক মনে করেন, অতিথি হলে খাবার পাত্রে অবশিষ্ট না রাখলে ইজ্জত থাকবেনা, পাত্র ভালো করে চেটে খাওয়াকে এরা নিন্দনীয় মনে করে। যে চেটে খায় তাকেও অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে, অথচ খাবার পাত্র চেটে খেলে অনেক রোগ থেকে নিরাপদ থাকা যায়, যা ডাক্তারি মতে বিশেষিত, ইসলাম ধর্ম মতে সুন্নত। মেডিকেলের একটি মত এরকম আছে যে মানব দেহের ৬০% রোগের জন্ম হয় শুধু পেট থেকেই তথা খাদ্য থেকে, আমাদের দেশের মানুষ কম না বেশি খায় তার প্রমাণ হলো দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা!! “খাইতে খাইতে” এমন অবস্থা হয়েছে যে মেডিসিনে কাজ করছে না, বাধ্য হয়ে ডায়েট কন্ট্রোল করতে হচ্ছে। খাবার কম গ্রহণ করলে অনেক সমস্যা থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। মহান স্রষ্টার তৈরী এ বসুন্ধরায় মানুষ যে কত উচ্ছিষ্ট নিকৃষ্ট ধরণের খাদক (পেটুক) হতে পারে তা কেবলমাত্র তিনিই জানেন, এই হালাল, হারাম, খাদ্য, অখাদ্য, কু খাদ্য গ্রহণের জ্বলন্ত প্রমাণ সাম্প্রতিক কালের মহামারী করোনা ভাইরাস!!! কোন এক হাদিসে পড়েছিলাম – কেয়ামত এমন অবস্থায় সংঘটিত হবে যে, লোকজন খাওয়ার জন্য লুকমা হাতে নিবে কিন্ত মুখে দিতে পারবেনা! একবার চিন্তা করেন… পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এমতাবস্থায় একদল লোক খাবার নিয়ে ব্যস্ত থাকবে!!!
লেখক- নুরুজ্জামান মুরাদ
Development by: webnewsdesign.com